‘বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভাসানীর ভূমিকা প্রভাবকের, নির্ণায়কের’
১৭ নভেম্বর ২০২০ ২০:৩৭
ঢাকা: মওলানা ভাসানী তার সারাজীবনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতার ভিত্তি তৈরি করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, আজীবনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতার ভিত্তি তৈরি করেছিলেন মওলানা ভাসানী। আর বঙ্গবন্ধু সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক রূপ দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। পত্রিকার পাতায় মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীর অনুল্লেখ অথবা দায়সারাভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভূমিকা ‘প্রশংসনীয়’ বলে উল্লেখ করে তাকে খাটো করে দেখবার অবকাশ নাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা প্রভাবকের, ক্ষেত্র বিশেষে নির্ণায়কের। তাকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস লেখা যায় না।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরীর নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি টাঙ্গাইল জেলার পক্ষ থেকে মওলানা ভাসানীর মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। পরে কেন্দ্রীয়ভাবে ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার শুরুতে মওলানা ভাসানীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর।
আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, ছাত্রজীবন শেষে মওলানা ভাসানী আমাকে হাত ধরে কৃষক আন্দোলনে নামিয়েছিলেন। আর সেটাই আমাকে তৃণমূলের মানুষের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। মওলানা ভাসানী নিজেও ছিলেন তৃণমূলের মানুষের নেতা। সবসময় মানুষের খুব কাছে থাকতেন তিনি।
আলোচনায় ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, মওলানা ভাসানী ফারাক্কা লংমার্চ করেছিলেন বলেই গঙ্গার পানিবণ্টন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্টের সহায়তায় আন্তর্জাতিক গঙ্গার পানি চুক্তি সম্পাদন সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু গত ৯ বছরে তিস্তাচুক্তি সম্পাদিত হতে পারল না। তিস্তার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে তিস্তার পানির ভাগ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, মওলানা ভাসানী আজীবন শোষিত মানুষের পক্ষে লড়াই করে গেছেন। বিশেষ করে তিনি কৃষকের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন।
গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন বিশ্বনেতা। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গেছেন, সেসব দেশের নেতাদের সঙ্গে বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। তিনি যেমন কৃষকের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করেছেন, তেমনি শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জন্যও লড়াই করে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, মওলানা ভাসানী শুধু এ দেশের কৃষক-শ্রমিকের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে থেমে থাকেননি, ভাষা আন্দোলন ও এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, মওলানা ভাসানী কৃষকের অধিকার আদায়ের লড়াইকে জাতীয় পর্যায়ের আন্দোলনে রূপদান করে গেছেন। কৃষক-শ্রমিকের অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, জাতীয়মুক্তি সংগ্রামসহ এ দেশের সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তিনি আজীবন জনতার মিছিলে অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করেছেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য অধ্যাপক ড. সুশান্ত দাস, মাহমুদুল হাসান মানিক, কামরূল আহসান, নজরুল ইসলাম হক্কানী, এনামুল হক এমরান, কেন্দ্রীয় সদস্য তপন দত্ত চৌধুরী, শরীফ শমসির, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, হবিবর রহমান, করম আলী, অ্যাডভোকেট কাজী মাসুদ, মোস্তফা আলমগীর রতন, আবুল হোসাইন, হাফিস সরকার, রফিকুল ইসলাম, কিশোর রায়, গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী, মুর্শিদা আখতার নাহার, কাজী মাহমুদুল হক সেনাসহ অন্যরা।
৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী ওয়ার্কার্স পার্টি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী মওলানা ভাসানী