Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভ্যাকসিন না পেলেও ৩টি কাজ করলে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব’


১৭ নভেম্বর ২০২০ ২২:৩৯

ঢাকা: মাস্ক পরা, হাত ধোঁয়া ও শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা- এই তিনটি কাজ করতে পারলে ভ্যাকসিন ছাড়াও নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। এই তিনটি কাজ ভ্যাকসিনের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।

মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবন মিলনায়তনে কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং রোগ নির্ণয় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।

বিজ্ঞাপন

‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ এ কথা মুখে মুখে না রেখে বাস্তবায়ন করতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘দেশে আইন শুধু কাগজে-কলমে থাকলে চলবে না। মাস্ক পরতে জনগণকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। ৮০ শতাংশ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে পারলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকানো যাবে। ভ্যাকসিনের বিকল্প হতে পারে মাস্ক। কেন না করোনার ভ্যাকসিন কবে আসবে, তা নিশ্চিত না।’

তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন আসলে কতটুকু কার্যকর হবে তাও জানি না। তবে ভ্যাকসিন না পেলেও যদি তিনটি কাজ চালিয়ে যেতে পারি, তাহলে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে মাস্ক পড়লেই সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব, হাত ধোঁয়া চালু রাখলেই হবে এবং শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।’

করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে গা ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করেন করোনা নেই। নিম্ন আয়ের মানুষ মনে করে এটি বড়লোকের রোগ। এসব বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা, আর এ কারণে মানুষের মধ্যে গা ছাড়া ভাব রয়ে গেছে। সেজন্য এখন আবার সংক্রমণ বাড়ছে। সামনে শীত, সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। কারণ হলো– শীতে কিন্তু করোনা শুরু হয়, তখন উহানে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ছিল। বিভিন্ন দেশে এখন কিন্তু শীত, তার ওপর আবার লকডাউন চলছে। আমাদের সচেতন থাকতেই হবে, জনগণকে সচেতন করে তুলতেই হবে।’

বিজ্ঞাপন

সরকারের নির্দেশনা ও উদ্যোগকে সঠিকভাবে বাস্তাবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ‘সরকার একটি উদ্যোগ নিয়েছে– ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’। দোকান মালিক সমিতি বলেছে– মাস্ক না থাকলে দোকানে ঢুকতেই দিবে না। তবে এসব যেন কাগজে-কলমে না থাকে, বাস্তবায়ন যেন থাকে। সর্বস্তরের জনগণকে কিন্তু সচেতন করে তুলতে হবে। বাস্তবায়ন আসলে জনপ্রতিনিধি ছাড়া হয় না। সবাই মিলে জনগণকে সচেতন করে তুলে দ্বিতীয় ঢেউ আমরা ঠেকাতে পারবো, সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারবো। কারণ সংক্রমণ বাড়লে মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়ে।’

করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা বিষয়ে উল্লেখ করে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা যারা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, টেকনোলজিস্ট আছি তারা হয়তো দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস। কারণ আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। পৃথিবীর যত ওষুধ আছে, আমাদের দেশে এখন মোটামুটি সবই পাওয়া যায়। হাসপাতাল অনেকগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তবে এর কারণ রোগী নাই। আমি অবশ্য অনুরোধ করেছি, সেগুলো প্রস্তুত রাখতে। কারণ আল্লাহ না করুক, আগের মতো অবস্থা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল খোলার ব্যবস্থা থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক হাসপাতাল করোনার চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছে। এর কারণও আছে। রোগী কম থাকায় সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের অবকাঠামো আছে। যে কোনো সময় সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে এ সকল হাসপাতাল পুনরায় চালু করতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ সকল হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চালু করা যাবে বলে তারা জানিয়েছেন।’

করোনায় মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অবদানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘চিকিৎসকরা রোগী দেখা ছাড়া কিছু করতে পারে না। রোগ নির্ণয়, টেস্টসহ মূল কাজগুলো করেন টেকনোলজিস্টরা। করোনায় তাদের গুরুত্ব অনুধাবন করেছে জনগণ। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পায়ে হেঁটে নমুনা সংগ্রহের কাজ করেছেন। দেশে এখন প্রয়োজনের তুলনায় টেকনোলজিস্ট খুবই অপ্রতুল। তাদের নিয়োগও বন্ধ আছে দীর্ঘদিন ধরে। বেতনাদিরও সমস্যা চলছে। এসব জটিলতা নিরসনে আশা করি প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগী হবেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি টেকনোলজিস্টদের দাবির বিষয়ে একমত। তাদেরও প্রণোদনা দরকার আছে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ জটিল আকার ধারণ করতে পারে। আমরা করোনা মোকাবিলায় অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। সমন্বয়হীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কারণে তা হয়ে ওঠেনি। করোনায় টেকনোলজিস্টরা ভুক্তভোগী মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে সেবা দিয়েছে। এতে বহুজন আক্রান্ত হয়েছেন। এ জন্য জনগণের কাছ থেকে তারা ভূয়সী প্রসংশা পেয়েছেন। এটা ধরে রাখতে হবে। সরকারের উচিত টেকনোলজিস্টদের সুযোগ সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা। কেন না তাদের ছাড়া করোনা টেস্ট করা সম্ভব না। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বরাবরই টেস্টে বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে।’

করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা ও রোগ নির্ণয়ে টেকনোলজিস্টদের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে টেকনোলজিস্টদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান টেকনোলজিস্টদের ভূমিকা ও তাদের দাবিদাওয়া উল্লেখ করে একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. গোলাম সারোয়ার। অনুষ্ঠানের বক্তব্য রাখেন বিএম এর মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু ইউসুফ ফকিরসহ অন্যান্যরা।

৩টি কাজ করলে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব ভ্যাকসিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর