প্রেমের ‘ফাঁদে’ ফেলে ফোন চুরি, ফেসবুক আইডি দখলে নিয়ে ব্ল্যাকমেইল
১৭ নভেম্বর ২০২০ ২২:৫৮
ঢাকা: সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। এরপর নানা ছলনায় ভুলিয়ে তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তার ভিডিও ধারণ করতেন মেয়ের মোবাইলেই। একপর্যায়ে সেই মোবাইল হাতিয়ে নিয়ে ওই ভিডিও নিজের কাছে রেখে দিতেন। একইসঙ্গে মেয়েটির ফেসবুক আইডি’ও নিতেন দখলে। এরপর ভিডিও এবং ফেসবুক আইডি’কে ব্যবহার করে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানী বাংলামোটর এলাকা থেকে গ্রেফতার মোহাম্মদ ইয়াসিন রাতুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসময় তার কাছ থেকে দু’টি মোবাইল ফোন, ১০টি সিম উদ্ধার করা হয়। এসব ফোন ও সিম প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজে ব্যবহার করতেন তিনি। এসব ফোন থেকে চারটি ভুয়া ফেসবুক আইডি ও ৯টি জিমেইল অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে।
রাতুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি জানিয়েছে, তিনি নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা আসেন। মিরপুরে স্থানীয় এক নেতার বাসায় চা বয় হিসেবে কাজ নেন। পরে মোহাম্মদপুর রিং রোড এলাকায় একটি শোরুমে বিক্রয়কর্মীর চাকরি নেন। এরপর হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিয়ে অপরাধের পথে পা বাড়ান।
রাতুলের প্রতারণার স্বীকার এক তরুণী সিআইডি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কাছে তার নামে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ছয় মাস ধরে রাতুলের সঙ্গে তার পরিচয়। এর মধ্যে একাধিকবার তাদের দেখা হয়েছে। একপর্যায়ে রাতুল তাকে লঞ্চে করে চাঁদপুর যাওয়ার প্রস্তাব দেন। দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে তিনি চাঁদপুর যান। লঞ্চেই দুই বন্ধুর অনুপস্থিতিতে রাতুল কৌশলে ওই তরুণীর আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করেন। ঢাকায় ফেরার পর রাতুল তাকে বলেন, তার মোবাইলে ব্যালেন্স নেই। কথা বলার জন্য ওই তরুণীর মোবাইল ফোনটি নিয়ে তিনি গা ঢাকা দেন।
ওই তরুণীর অভিযোগ, রাতুল তার মোবাইল ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাকাউন্টে থাকা ১০ হাজার টাকা তুলে নেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তার কাছে আরও ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ওই তরুণীর ফেসবুক আইডির নিয়ন্ত্রণও নেন রাতুল। টাকা না পেয়ে ওই তরুণীর মা-বাবার কাছে পর্যন্ত তিনি ফোন করেন।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি সাইবার ক্রাইম অনুসন্ধান চালিয়ে রাতুলকে শনাক্ত করে এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে। এসময় রাতুলের কাছে থাকা মোবাইলগুলো থেকে ভুক্তভোগী ওই তরুণী ছাড়াও অন্তত ১০ জন তরুণীর বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া ফেক কল ও ভুয়া হিস্ট্রির অ্যাপসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের তথ্যও পাওয়া গেছে।
সিআইডি বলছে, ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে রাতুল মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতেন। একপর্যায়ে গড়ে তুলতেন প্রেমের সম্পর্ক। কৌশলে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতেন তিনি। একপর্যায়ে ভিডিও কল বা অন্য কোনো উপায়ে আপত্তিকর ভিডিও সংগ্রহ করেন। এরপর দেখা করার জন্য ডেকে এনে কৌশলে মোবাইল ফোন চুরি করে পালিয়ে যান। মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে ফেসবুক ও ইমেইল আইডিসহ যাবতীয় তথ্য করায়ত্ত করেন তিনি। এরপর ওই ফেসবুক আইডি অন্য কোনো তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার কাজে ব্যবহার করেন।
সিআইডি জানিয়েছে, রাতুলের প্রতারণার শিকার তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবারই (১৬ নভেম্বর) রাতুলের বিরুদ্ধে শাহজাহানপুর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্সের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ সারাবাংলাকে বলেন, রাতুলের কাজই ছিল ফোন চুরি করে ফেসবুক আইডি ও ইমেইল অ্যকাউন্ট দখলে নিয়ে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করা। সিআইডি তাকে গ্রেফতারের পর সব অপকর্মের কথাই তিনি স্বীকার করেছেন।
রেজাউল মাসুদ বলেন, এরকম ঘটনা এখন অনেক ঘটছে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কারও সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক হয়ে গেলে তার কাছ থেকে কোনো ধরনের আপত্তিকর প্রস্তাব এলে তার সম্পর্কে আরও ভালো করে খোঁজখবর করা উচিত। আর কারও ফোন চুরি হলে সঙ্গে সঙ্গেই সব ধরনের অনলাইন অ্যকাউন্টের পাসওয়ার্ড বদলে ফেলতে হবে, যেন ওই অ্যাকাউন্ট অন্য কেউ দখল করে নিতে না পারে।
প্রতারণা প্রেমের ফাঁদ প্রেমের সম্পর্ক ব্ল্যাকমেইল মোবাইল চুরি