কাজ বুঝিয়ে না দেওয়ায় অনলাইন রিটার্ন বন্ধ, আসছে নতুন পদ্ধতি
২১ নভেম্বর ২০২০ ১৬:১৭
ঢাকা: অনলাইন রিটার্নে ‘বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স (বাইট্যাক্স)’ সিস্টেম বুঝে না পাওয়ায় এবার নিজস্ব দক্ষতা কাজে লাগিয়ে কর ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজডের চেষ্টা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি স্টিয়ারিং কমিটি ও চারটি টিম গঠন করা হয়েছে। তবে চলতি বছর অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের কোনো সুফল মিলবে না। আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা কার্যকরের লক্ষ্য তাদের।
কিন্তু ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠান বাইট্যাক্স সিস্টেমটি কেন বুঝিয়ে দিল না কিংবা এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর কি পদক্ষেপ নিয়েছে সেটিও কেউ বলতে পারছে না। এনবিআর সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কর বিভাগে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর জন্য ২০১১ সালে স্ট্রেনদেনিং গভর্ন্যান্স ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প হাতে নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ৫৯ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স (বাইট্যাক্স) সফটওয়্যার তৈরি ছিল অন্যতম। এ জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। পরে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৫১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় সফটওয়্যার তৈরির কাজ পায় ভিয়েতনামের এফটিপি ইনফরমেশন সিস্টেম। কাজ পাওয়ার পর ২০১৬ সালেই সফটওয়্যারটি চালু করে এফটিপি। কিন্তু গত বছর প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর কাজ বুঝিয়ে দেয়নি তারা। ফলে অনলাইনে রিটার্ন জমার সুযোগটি বন্ধ হয়ে গেছে।
বাইট্যাক্স সিস্টেম চালু করতে গিয়ে সময় গড়িয়েছে অনেক, খরচও হয়েছে কোটি কোটি টাকা। কিন্তু যেখানে এফটিপি কাজ করতো সেই বাসা এখন তালাবন্দি। তাই এবার নিজস্ব জনবল দিয়ে অনলাইন কর ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে চায় এনবিআর। এ জন্য ইতোমধ্যে ৩২ জনের সমন্বয়ে চারটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। এদের কেউ কাজ করবেন সিস্টেমের নকশা উন্নয়নে, কেউবা এনবিআরের অন্যান্য ডিজিটাল পদ্ধতির সঙ্গে, কেউ আবার কাজ করবেন সমন্বয়ের মাধ্যমে। আর কাজের সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন এনবিআর চেয়ারম্যান রহমাতুল মুনিমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কর ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজডের নতুন কাজ এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি বাইট্যাক্স সিস্টেমটি চালু করার জন্য বুয়েট পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। বুয়েট যদি সিস্টেমটি চালু করতে পারে তাহলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে।
এর আগেও করদাতারা তিনবছর অনলাইনে রিটার্ন দিয়েছেন। তবে সিস্টেমটি বন্ধ থাকায় এবার অনেক করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারেননি। এছাড়া অনলাইনে কর দিতে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, অনলাইনে প্রথমবার রিটার্ন দিলে ২ হাজার টাকা কর ছাড়। সেই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন করদাতারা।
২০১৬ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজের রিটার্ন অনলাইনে জমা দিয়ে অনলাইন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন। এরপর ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে করদাতারা অনলাইনে রিটার্ন দিয়েছেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ হাজারের মতো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দিয়েছিলেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ হাজার ৮৪৮ জন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ হাজার ২০৭ জন অনলাইনে রিটার্ন দেন।
তবে এনবিআর রিটার্ন দাখিলে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটিতেও কোনো আশা দেখছেন না কর আইনজীবীরা। এ বিষয়ে তাদের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ কিছুতেই এনবিআর তাদের কথার গুরুত্ব দেয় না। এমনকি এবারও যা কিছু করতে যাচ্ছে সে বিষয়ে তাদের মতামত নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুফি মোহাম্মদ আল মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের ট্যাক্স বিভাগকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। আর ডিজিটাল সময়ের দাবি, এটা করতেই হবে। এটা যত তাড়াতাড়ি করা যাবে ততই আমাদের জন্য ভালো। এছাড়া পদ্ধতিটি করদাতারা যেন খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারে সেটাও মাথায় রাখতে হবে।’
এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য হাফিজ আহমেদ মর্শেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তরুণ কর্মকর্তারা এটা নিয়ে বেশ উজ্জীবিত। তারা এনবিআরকে অনেক কিছু দিতে চান। অনলাইন রিটার্ন ও ই-পেমেন্ট নিয়ে সবাই কাজ করতে চান। এনবিআরকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যেতে চান তারা। এছাড়া বাইট্যাক্স পদ্ধতির সবকিছু বুয়েট পরীক্ষা করেছে। বুয়েটের রিপোর্ট পাওয়া গেলেই আমরা সম্মলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেব।’