Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পায়রা বন্দর প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে হাজার কোটি টাকা, সময় দেড় বছর


২২ নভেম্বর ২০২০ ০৮:৪৪

ঢাকা: দ্বিতীয়বারের মতো বড় অংকের ব্যয় বাড়ছে ‘পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পে। শুরু থেকে গত ৫ বছরে প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৮ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৭১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ অবস্থায় ব্যয় বাড়ছে প্রায় ১ হাজার ২৪ কোটি টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সেইসঙ্গে মেয়াদও বাড়ছে দেড় বছর। এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটি ইতোমধ্যেই প্রক্রিয়াকরণ শেষ করে আসছে মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এবার বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে অবশ্যই প্রকল্পটি শেষ করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পায়রা সমুদ্রবন্দর সম্পূর্ণভাবে চালুকরণসহ আমদানি-রফতানি পণ্যের অবাধ পরিবহন সুবিধা তৈরি হবে। এছাড়া নদীপথে চিহ্নিত চরগুলো প্রয়োজনীয় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কেটে অভ্যন্তরীণ নৌপথে মালামাল ও কন্টেইনার পরিবহন নিশ্চিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এখন আবার ১ হাজার ২৪ কোটি টাকার মতো বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধনীতে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হওয়ায় এক বছর ৬ মাস মেয়াদ বাড়ানোর (২০২২ সালের জুন পর্যন্ত) প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরটি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি সমুদ্রবন্দর। জাতীয় সংসদে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ অ্যাক্ট-২০১৩ অনুমোদিত হয় এবং ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশিত হয়। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী দেশের তৃতীয় এ সমুদ্রবন্দরটি উদ্বোধন করেন।

বর্তমানে ১৬ একর জায়গার উপর সীমিত ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধা যেমন- পন্টুন, ক্রেইন, নিরাপত্তা ভবন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ইত্যাদি উন্নয়নের মাধ্যমে একটি বন্দর টার্মিনাল তৈরি করা থাকলেও এখনও নিয়মিতভাবে পণ্য ওঠানামা বা খালাস করা যাচ্ছে না। তবে পূর্ণাঙ্গ পায়রা বন্দর ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত বহিঃনোঙ্গরে বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস চলছে। বহিঃনোঙ্গর থেকে পণ্য খালাসের এই কার্যক্রম চালু হয় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে।

এদিকে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ‘পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি ও অন্যান্য অঙ্গেও ব্যয় বাড়া বা কমার কারণে ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৫ হতে ২০২০ জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি প্রথম সংশোধন করা হয়।

পায়রা বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- প্রশাসনিক ভবন, একটি ওয়্যারহাউজ নির্মাণসহ পাইলট বোট, টাগ বোট, বয়া লেইয়িং ভেসেল, সার্ভে বোট এবং নিরাপত্তা যন্ত্রসামগ্রী সংগ্রহ এবং বন্দর টার্মিনাল থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক পর্যন্ত ৫ দশমিক২২৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, মূল প্রকল্পে ৬ হাজার ৫৬২ দশমিক ২৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ১ হাজার ২২২ কোটি ৯ লাখ টাকার ব্যবস্থা ছিল। ২০১৭ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী জমির ক্ষতিপূরণ তিনগুণ হারে নির্ধারিত হওয়ায় এ খাতে ১ হাজার ১১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে মোট ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ২ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ভূমি অধিগ্রহণ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে না। তাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও একই সময়ে শেষ করা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। ফলে প্রশিক্ষণের মেয়াদ আরও ১ বছর ৬ মাস বাড়ানো প্রয়োজন। অনুমোদিত ব্যবস্থা অনুযায়ী পুনর্বাসন কাজ ১৪টি প্যাকেজে ভাগ করে ডিপিএম’র মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন সমস্যাদি যেমন- বালু ভরাট, নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা, বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা এবং প্যাকেজ ৭-এর জমি হস্তান্তর বিলম্ব ইত্যাদি কারণে পুনর্বাসন কাজ সময় মতো শেষ করা সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য (সাবেক সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পায়রায় অবকাঠামো সুবিধাদি উন্নয়নের মাধ্যমে সমুদ্রবন্দরটি সম্পূর্ণভাবে চালুকরণসহ আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।’

পায়রা সমুদ্র বন্দর পায়রাবন্দর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর