‘যোগাযোগের ব্যাপক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি বলেই অর্থনীতির চাকা সচল’
২২ নভেম্বর ২০২০ ১৩:০২
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর সারাদেশে যোগাযোগর একটা ব্যাপক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। যার ফলে আজকে আামদের অর্থনীতির চাকা অনেক সচল এবং আমরা আরও অনেক কাজ শুরু করেছি। সেগুলো আমরা সম্পন্ন করব।
রোববার (২২ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে ‘বীরপ্রতীক গাজী সেতু’সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধন করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলাধীন মুড়াপাড়া ফেরিঘাট রাস্তায় শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর ১০০০০ মিটার চেইনেজে ৫৭৬.২১৪ মিটার দীর্ঘ বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) সেতুটির কারণে বদলে যাচ্ছে পুরো রূপগঞ্জের চিত্র।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলাধীন মধুমতি নদীর ওপর এলাংখালী ঘাটে ৬০০.৭০ মিটার দীর্ঘ ‘শেখ হাসিনা সেতু’; যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় সড়ক ও জনপথের যশোর-খুলনা সড়কের ভাঙ্গাগেট (বাদামতলা) থেকে আমতলা জিসি ভায়া মরিচা, নাউলী বাজার সড়কে ভৈরব নদীর উপর ৭০২.৫৫ মিটার দীর্ঘ সেতু; এবং পাবনায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’ উদ্বোধন করেন।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন শেষে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রান্ত থেকে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, মাগুরা, নারায়ণগঞ্জ, যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল। এর মধ্যে পাবনার ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বর’ এ যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা।
রূপগঞ্জ প্রান্তে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ অন্যান্যরা যুক্ত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। পাবনায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বকুল স্বাধীনতা চত্বর থেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্কয়ার গ্রুপের অঞ্জন চৌধুরী।
জাতির পিতার আত্মত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাবা-মা ভাই সব হারিয়ে রিক্ত নিঃস্ব হয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই আকাঙ্ক্ষাটা পূরণ করব, সেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই হবে। যা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তরিকভাবে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত জীবন দিবেন,তার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।’
বারবার সরকার গঠনের সুযোগ দিতে দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা আমাদেরকে বারবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার সুযোগ দিয়েছে। সে কারণেই কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।৯৬ থেকে ২০০১ প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশ যে অন্ধকার যুগে ছিল, একটু আলোর ঝলকানি পেয়েছিল ৯৬ থেকে ২০০১ সালে। বাংলাদেশের জন্য একটা স্বর্ণযুগ ছিল। কিন্তু আবার ২০০১’র পর যে অত্যাচার নির্যাতন শুরু হল বা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারল না একটা চক্রান্তের ফলে। বাংলাদেশের মানুষের জীবন থেকে আবার প্রায় ৮টা বছর পিছিয়ে গেল। ২০০৯’র যখন ফের আমরা সরকার গঠন করি তারপর থেকে ধারাবাহিক ভাবে সরকারে আছি বলেই আজকে দেশের মানুষের উন্নতিটা করতে পারছি।’
গ্রামপর্যায় পর্যন্ত মানুষের যে জীবনমান উন্নত করা যায়, সেটাও আমরা প্রমাণ করেছি। সেই সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎসহ অর্থনীতির চাকাটা সবসময় যেন সচল থাকে সবদিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েই কাজ করার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা সংগঠন। আওয়ামী লীগ হঠাৎ করেই কোনোকিছু করেনি। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে তখন থেকেই কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা ছিল। জাতির পিতা কিন্তু এসব পরিকল্পনা বহু আগেই করে গেছেন। তিনি আমাদের যে সংবিধান দিয়ে দিয়েছিলেন সেই সংবিধানেই কিন্তু এদেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নের কথা মৌলিক চাহিদা পূরণের কথা স্পষ্ট উল্লেখ করে গেছেন।’
‘সেইদিকেই অনুসরণ করেই আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনাটা নেই। ফলে অন্য কিছু করবার প্রয়োজন হয়নি এবং তার বক্তৃতাগুলো যদি শুনি সেখানেই কিন্তু স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে, কিভাবে এদেশের উন্নতি হতে পারে। আমরা সেটাই অনুসরণ করে সব সময় প্রস্তুতি নিয়েছি, পরিকল্পনা নিয়েছি এবং যখনি সরকারে এসেছি তা বাস্তবায়ন করেছি। যার শুভফলটা দেশের মানুষ পাচ্ছে’ বলে দাবি করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মুজিব বর্ষের কর্মসূচি জাঁকজমকভাবে পালন করতে না পারার আক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাপক আয়োজন ছিল। কিন্তু যেভাবে আমরা করতে চেয়েছিলাম ঠিক সেভাবে করতে পারিনি। করোনাভাইরাস নামে এমন একটা ভাইরাস সারাবিশ্বকে অচল করে দিল। শুধু বাংলাদেশ বলে না, সমগ্র বিশ্বের মানুষই কিন্তু এর জন্য দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’
পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির সময় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সহায়তা প্রদান করার জন্য,দেশের মানুষের পাশে থাকার জন্য প্রজাতন্ত্রের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সশস্ত্র বাহিনীসহ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের ভূমিকার কথা স্মরণ করে তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘তারপর আর একটা নতুন ধাক্কা আসছে বিশ্বব্যাপী। আমাদের এখন থেকে সেই প্রস্তুতিও আমরা নিচ্ছি। কারণ এর ফলে মানুষ যেন আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কারণ প্রথমদিকে আমাদের অতটা অভিজ্ঞতা ছিল না। এখন অন্তত অভিজ্ঞতা হয়েছে। কাজেই নিজেকে সুরক্ষিত রাখা এবং অপরকে সুরক্ষিত করা, এই দায়িত্বটা সকলকে পালন করতে হবে এবং আমরা এটা করতে পারবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
‘তাছাড়া যে ভ্যাকসিনটা আবিষ্কার হচ্ছে, সেটা এরইমধ্যে ক্রয় করার জন্য আমরা আগাম টাকা পয়সা দিয়ে এই জিনিসটা বুকড করে রেখে দিয়েছি। কাজেই সেইদিক দিয়ে দেশবাসীর চিন্তার কিছু নেই। আমরা অন্যান্য সবকিছু বাদ দিয়ে আগে মানুষকে কিভাবে সুরক্ষিত করব, সেগুলি আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি বলে’ অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু এই ধরনের একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের যে উন্নয়ন কাজগুলো চলছে সেজন্য এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘এটাই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের মানুষ আসলে পারে যে কোনো কাজ করতে। এটি জাতির পিতাও বলে গেছেন। কাজেই সেভাবেই আমরা করেছি।’
উদ্বোধনকৃত তিনটা সেতু কিন্তু এই সমস্ত অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নের দিকে বিশেষ অবদান রাখবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর সারাদেশে যোগাযোগর একটা ব্যাপক নেটওয়ার্ক আমরা গড়ে তুলেছি এবং যার ফলে আজকে আামদের অর্থনীতির চাকা অনেক সচল এবং আরও অনেক কাজ আমরা শুরু করেছি। সেগুলোও আমরা সম্পন্ন করব ইনশাল্লাহ।’