Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনও ‘কার্যকর’, টেক্কা দেবে দাম ও সংরক্ষণে


২৩ নভেম্বর ২০২০ ২২:০১

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে সঙ্গে নিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনও ‘কার্যকর’ বলে প্রমাণ মিলেছে। এর আগে মার্কিন ফাইজার ও বায়োএনটেক এবং মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিন ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে জানালেও অক্সফোর্ডের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য বলছে, তাদের ভ্যাকসিন ৭০ শতাংশ কার্যকর। গবেষকরা বলছেন, এই ফলাফলও ‘সন্তোষজনক’। তবে করোনা প্রতিরোধের এই হার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত অর্জিত হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

কার্যকারিতা নিয়ে এমন ‘সন্তুষ্টি’ ছাড়াও দুইটি দিক থেকে অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন ফাইজার বা মডার্নার ভ্যাকসিনকে টেক্কা দিতে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে। প্রথমত, দামের দিক থেকে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি বাকি দুইটি কোম্পানির ভ্যাকসিনের চেয়েই অনেক কম। দ্বিতীয়ত, ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য শূন্যের অনেক নিচের তাপমাত্রা প্রয়োজন হলেও অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সাধারণ রেফ্রিজারেটরেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। ফলে বিশ্বব্যাপী বাজারজাতকরণের অনুমোদন পেলে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটিই অনেক বেশি সহজলভ্য হয়ে উঠতে পারে।

বিজ্ঞাপন

মাত্র ১০ মাসের গবেষণায় অক্সফোর্ড এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে। যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলে ২০ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবীর ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে এই ভ্যাকসিন। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য বলছে, যাদের ভ্যাকসিনটির দুইটি ডোজ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩০ জনের শরীরে কোভিড সংক্রমণ শনাক্ত করা গেছে। গবেষকরা বলছেন, এই ভ্যাকসিট ৭০ শতাংশ কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করেছে। আর ভ্যাকসিন দেওয়ার পরও যাদের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তাদের কারও সংক্রমণই উচ্চমাত্রার ছিল না এবং কাউকেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে হয়নি।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, ট্রায়ালের ফলে তিনি ‘সত্যিই সন্তুষ্ট’। আর ট্রায়ালের এই ফলের অর্থ হলো, পৃথিবী করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো একটি ভ্যাকসিন এখন আমাদের রয়েছে।

অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনের অন্যতম কারিগর অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট বলেন, করোনাভাইরাস যেভাবে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিল, আজকের এই ঘোষণা আমাদের এই ধ্বংসলীলার অবসান ঘটানোর আরও একধাপ কাছে নিয়ে এলো।

এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য সরকার অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনের ১০ কোটি ডোজের প্রি-অর্ডার দিয়ে রেখেছে। অ্যস্ট্রাজেনেকা বলছে, আগামী বছর নাগাদ তারা বিশ্ববাসীর জন্য এই ভ্যাকসিনের তিনশ কোটি ডোজ প্রস্তুত করতে সক্ষম।

দাম ও সংরক্ষণ পদ্ধতিতে এগিয়ে অক্সেফোর্ডের ভ্যাকসিন

ফাইজার ও মডার্না উদ্ভাবির ভ্যাকসিন দুইটির কার্যকারিতা ৯৫ শতাংশ ঘোষণার পর অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা জানানো হলো ৭০ শতাংশ। তবে কি এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কম? অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, মোটেও তেমনটি নয়। বরং কার্যকারিতার এই হার সন্তোষজনক। আর ট্রায়ালের কিছু অংশের তথ্য বিশ্লেষণে এটি ৭০ শতাংশ কার্যকারিতা দেখালেও সার্বিকভাবে এর হার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

কেবল কার্যকারিতা নয়, দাম আর সংরক্ষণ পদ্ধতিতেও অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনটিই বাকি দুইটি ভ্যাকসিনের চেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারে সহজেই। কেননা এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, ফাইজার ও বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের একেকটি ডোজের দাম হবে প্রায় ২০ মার্কিন ডলার (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসেবে প্রায় ১৭০০ টাকা)। মডার্নার ভ্যাকসিনের খরচ আরও বেশি— একেক ডোজ প্রায় ৩৩ মার্কিন ডলার (প্রায় ২৮০০ টাকা)। সে তুলনায় অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির একেক ডোজের খরচ পড়বে মাত্র ৪ মার্কিন ডলার (৩৪০ টাকা)।

অক্সফোর্ড বলছে, তারা এই ভ্যাকসিন গণহারে উৎপাদন করার জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, সেটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী। অন্যদিকে এই ভ্যাকসিন উৎপাদনের পেছনে যে ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা যুক্ত রয়েছে, তারাও এই ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ‘অলাভজনক’ নীতি অবলম্বন করবে।

এদিকে, ভ্যাকসিন তো কেবল বাজারজাত করলেই হবে না, এর সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে বিশ্বকে। মডার্না যেমন বলছে, তাদের ভ্যাকসিনটি ছয় মাস সংরক্ষণ করা যাবে, তবে সেটি রাখতে হবে শূন্যের নিচে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। আর ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন তো রাখতে হবে শূন্যের নিচে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়! অর্থাৎ এই দুইটি ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার জন্যই বিশেষায়িত পদ্ধতির প্রয়োজন হবে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এই ঝামেলা একেবারেই নেই। কেননা, সাধারণ রেফ্রিজারেটরেই এই ভ্যাকসিনটি সংরক্ষণ করা সম্ভব। ফলে বলাই বাহুল্য, অ্যাস্ট্রাজেনেকা যদি তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী বিপুল পরিমাণে ভ্যাকসিনের ডোজ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে তাদের ভ্যাকসিনের চাহিদাই থাকবে তুঙ্গে।

সবগুলো কোম্পানির ভ্যাকসিন বাজারে আসার পর দাম বা সংরক্ষণ পদ্ধতির ভিত্তিতে ‘ভ্যাকসিন যুদ্ধে’ কোন কোম্পানির জয় হবে— এ প্রশ্নের উত্তর না হয় সময়ের কাছেই তোলা থাক। কিন্তু ভ্যাকসিনগুলো বাজারে এলে শেষ পর্যন্ত জয়টা কিন্তু হবে মানবজাতির, বিজ্ঞানের। বিশ্বকে নাস্তানাবুদ করে দেওয়া করোনাভাইরাসের কবল থেকে যে মুক্তির মন্ত্রই এই ভ্যাকসিন।

(বিবিসি অবলম্বনে)

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাস করোনার ভ্যাকসিন কোভিড ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ ফাইজার বায়োএনটেক ভ্যাকসিন সংরক্ষণ ভ্যাকসিনের দাম মডার্না

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর