বাইডেনের মন্ত্রিসভায় জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি

নির্বাচনে জয়ী হলে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলাকে অন্যতম গুরুত্ব দেবেন— নির্বাচনি প্রচারণায় এমন অঙ্গীকার ছিল ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেনের। নির্বাচনের ফল জানার পর নিজের মন্ত্রিসভায় কাকে কাকে স্থান দিচ্ছেন, সেই ঘোষণাতেও প্রথমেই জানিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ দূতের কথাই। আর এই পদে তিনি নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে।

বিবিসি ও আল জাজিরার খবরে বলা হয়, সোমবার (২৩ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো জো বাইডেন মুখ খুলেছেন তার সম্ভাব্য মন্ত্রিসভার কয়েকটি পদ নিয়ে। আর সেখানেই আরও কয়েকজনের সঙ্গে উঠে এসেছে জন কেরির নাম। ‘সফল’ এই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূতের দায়িত্ব, যে পদটিকে বলা হচ্ছে ‘ক্লাইমেট জার’।

সোমবার মন্ত্রিসভার আর যেসব সদস্যের নাম উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে জানা গেছে অ্যান্টনি ব্লিংকেনের নাম। এছাড়া হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতে আলেহান্দ্রো মায়োর্কাস, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক পদে এভরিল হেইনিস, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে জেক সুলিভান ও জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে উঠে এসেছে লিনডা থমাস-গ্রিনফিল্ডের নাম।

এদিকে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, বাইডেনের ট্রেজারি সেক্রেটারি তথা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন জ্যানেট ইয়েলেন। আর সেক্ষেত্রে প্রথম নারী হিসেবে তিনি এই দায়িত্ব পাবেন।

প্যারিস চুক্তি ও জন কেরি

মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূতের পদে জন কেরির নাম ঘোষণাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বাইডেনের ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ‘ফুলটাইম’ একজন দক্ষ ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। আর এ ক্ষেত্রে তিনিই এই পদে অধিষ্ঠিত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলেও জায়গা পাবেন।

২০১৬ সালে বারাক ওবামার নেতৃত্বাধীন সরকারে জন কেরি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবিলায় তাৎপর্যপূর্ণ ‘প্যারিস চুক্তি’তে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সই করেছিলেন তিনি। ওই চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে বিভিন্ন দেশগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বৈশ্বিক উষ্ণতার মতো বিষয়গুলোকে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করেছেন। সবশেষ চলতি মাসেই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে জো বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতায় বসার পর তিনি যত দ্রুতসম্ভব ফের যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তিতে ফিরিয়ে আনবেন। জন কেরির মতো সফল একজন কূটনীতিককে নিজের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূতের মর্যাদা দেওয়ায় বাইডেন পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে নিজের প্রতিশ্রুতিগুলোকে বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যাবেন— এমনটিই মনে করছেন সবাই।

গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সবশেষ প্রাপ্ত ফলে ৩০৬ ইলেকটোরাল কলেজ পেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয় পেয়েছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন। প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২ ইলেকটোরাল কলেজ। তবে এখনো কয়েকটি রাজ্যে ভোট পুনর্গণনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে বেশকিছু রাজ্যেই মামলা করে হেরে গেছেন তিনি। বাকি রাজ্যগুলোতেও ভোট পুনর্গণনার উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়। সেক্ষেত্রে হার মেনেই নিতে হবে ট্রাম্পকে। আর বিধি অনুযায়ী তখন আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন জো বাইডেন।

জন কেরি জলবায়ু পরিবর্তন জো বাইডেন প্যারিস চুক্তি