৯ মাসে ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যা-আত্মহত্যার শিকার ২৮ গৃহকর্মী: বিলস
২৫ নভেম্বর ২০২০ ১৮:৩৩
ঢাকা: চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা ও আত্মহত্যার শিকার হয়েছেন মোট ২৮ জন গৃহকর্মী। এর মধ্যে দুই জনকে হত্যা করা হয়েছে, ‘রহস্যজনকভাবে’ মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ছয় জন গৃহকর্মী। এছাড়াও শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চরমভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাত জন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিন গৃহকর্মী আত্মহত্যা করেছেন।
বুধবার (২৫ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০২০ উপলক্ষে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়। বিলস বলছে, এসব ঘটনা প্রকাশ পেলেও প্রকৃতপক্ষে নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যার সংখ্যা আরও বেশি হবে, যেগুলো প্রকাশ পায়নি।
‘গৃহশ্রমিকের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণ এবং নির্যাতনত প্রতিরোধ: বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংসদ সদস্য শিরিন আখতার। গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসেনের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হক চুন্নু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিলসের নির্বাহী পরিচালক ও মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান। সেমিনারে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নাজমা ইয়াসমিন।
বিলসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ে সারাদেশে ৫৪৭ জন গৃহকর্মী হতাহত হয়েছেন। তবে প্রকৃত অবস্থা আরও ভয়াবহ। কারণ সর নির্যাতনের ঘটনা পত্রিকায় কিংবা জনসম্মুখে আসে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নারী গৃহকর্মীদের তাদের অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠায় সংগঠিত করে তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি গৃহকর্মকে একটি প্রতিষ্ঠানিক কাজ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায় করে নীতিনির্ধারক, সরকার ও সমাজের কাছে গৃহকর্মীর সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করতে হবে।
বিলসের মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশে গৃহকর্মীরা অনেক বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এটা কত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গৃহকর্মীদের মানুষ হিসাবে সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে। তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। কিন্তু অনেকেই গৃহকর্মীদের নানাভাবে নির্যতন করছে। এটি কোনোভাবেই সুস্থ আচরণ হতে পারে না। তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ বন্ধ করতে হবে। তাদের প্রতি সহনশীল হতে হবে। গৃহকর্মীরা যেন কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার না হয়, সেজন্য তাদের আইনি সুরক্ষাও দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই গৃহকর্মীরা আমাদের জীবনকে আরামদায়ক করেন, আমাদের কাজকে অনেক সহজ করে দেন। ফলে তারা অবশ্যই আমাদের কাছে মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু আমরা তা করছি না। এটা খুব অমানবিক।
শিরিন আখতার বলেন, সব স্থানে সব দেশে নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা ভোগের পণ্য হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। অনেক জায়গায় নারীদের প্রতি দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো আচরণ করা হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নারী নির্যাতন বন্ধে অনেক আইন থাকলেও তার প্রয়োগ সবসময় হচ্ছে না। তাই নতুন নতুন আইনের পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
গৃহকর্মী গৃহকর্মী নির্যাতন টপ নিউজ নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিস বিলস মুজিবুল হক চুন্নু শিরিণ আখতার