ভ্যাকসিনের দাম হবে ২শ টাকার মধ্যে, আসতে পারে জানুয়ারিতে
২৫ নভেম্বর ২০২০ ১৯:১০
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ইমিউনাইজেশনে অর্থায়ন করা সংস্থা দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স-গ্যাভি’ থেকে ৬৮ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাবে বাংলাদেশ। ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম হতে পারে ১ দশমিক ৬২ থেকে ২ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যার দাম হতে পারে ১৩৮ থেকে ১৭০ টাকা। একজন মানুষকে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নিতে হবে।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাস নাগাদ এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশে এসে পৌঁছাতে পারে। এরইমধ্যে ভ্যাকসিনের জন্য অর্থ বিভাগ থেকে প্রায় ৭৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বুধবার ( ২৫ নভেম্বর) ‘কোভিড-১৯ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক হালনাগাদ তথ্য অবহিতকরণ সভা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ সব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, যদি সবকিছু ঠিক থাকে তবে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস নাগাদ ভ্যাকসিন আমরা পেতে পারি। তবে এর আগে এখনও অনেক কাজ আমাদের করতে হবে। ভ্যাকসিন রক্ষণাবেক্ষণ সহ বিতরণের সবকিছুর ব্যবস্থাপনা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে।’
এর আগে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক জানান, ‘সারা পৃথিবীতেই এখন ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ হচ্ছে। কিন্তু ভ্যাকসিন যেটাই আসুক আমরা যেন সেটা পেতে পারি সে লক্ষ্যেই কাজ হচ্ছে। যারা আগে জাতীয় ভ্যাকসিন বিতরণ পরিকল্পনা জমা দেবে তারাই আগে ভ্যাকসিন পাবে। গ্যাভি যখন থেকে পরিকল্পনা জমা নেওয়া শুরু করবে, আশা করছি আমরা প্রথম দিনই আমাদের পরিকল্পনা জমা দিতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ টিকা পাওয়ার জন্য জাতিসংঘ গঠিত কোভ্যাক্সে আবেদন করে ৯ জুলাই। ১৪ জুলাই গ্লোবাল ভ্যাকসিন অ্যালাইয়েন্স গ্যাভি সেই আবেদন গ্রহণ করে। ১৮ সেপ্টেম্বর গ্যাভির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অফিসিয়ালি একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে জানানো হয়, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ এই ভ্যাকসিন পেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ গ্যাভির কাছ থেকে ৬৮ মিলিয়ন বা ছয় কোটি ৮০ লাখ ভ্যাকসিন পাবে ( দুই ডোজ) ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য। অর্থাৎ জনসংখ্যার হারে ৩৪ মিলিয়ন বা তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষ এটি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এটা পাওয়া যাবে ২০২১ সালের মধ্যে।’
গ্যাভি এটি বিনা পয়সায় দেবে না উল্লেখ করে ডা. মো. শামসুল হক বলেন, ‘ভ্যাকসিনের জন্য কো-ফিন্যান্সিংয়ে যেতে হবে সরকারকে। আর এটা ১.৬২ থেকে ২ মার্কিন ডলারের মধ্যে কিনতে পারব। ভ্যাকসিন বাবদ সর্বমোট এক হাজার ৫৮৯ কোটি খরচ হতে পারে। বাংলাদেশ এটি নিয়ে কাজ করছে। গ্যাভি ভ্যাকসিন ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার সরাসরি ভ্যাকসিন কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এ জন্য অর্থ বিভাগ থেকে প্রায় ৭৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এরইমধ্যে। ’
সভায় জানানো হয়, এরইমধ্যে সরকার ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পরিবহন খরচ মিলিয়ে কেনা যাবে চার ডলারের বিনিময়ে। এর সঙ্গে পরে যোগ হবে আরও এক ডলার। সেখান থেকে বাংলাদেশ কিনতে পারবে ৩০ মিলিয়ন ডোজ।
জনগণের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সবকিছু করা হবে উল্লেখ করে ডা. মো. শামসুল হক বলেন, ‘এ ভ্যাকসিন অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রি কোয়ালিফায়েড হতে হবে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকতে হবে। এ ছাড়াও ভ্যাকসিন আসার আগে জরুরি হচ্ছে ন্যাশনাল ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যান নিয়ে কাজ হচ্ছে যেটা একেবারেই শেষ পর্যায়ে।’
ডা. শামসুল হক বলেন, “এ দুটি ভ্যাকসিনের সোর্স ছাড়াও সিনোভ্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে, রাশিয়ার স্পুটনিক এগিয়ে আসছে, তাদের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। জেএসকে গ্রুপের সেনোফি এবং ফাইজারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং যদি সে রকম জরুরি হয় তাহলে কীভাবে তাদের ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে সে নিয়েও কথা হচ্ছে। তবে কোনো কোনো ভ্যাকসিন আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খুবই ‘কোয়েশ্চেনেবল’ এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই এত ‘লো টেম্পারেচার’ এর ব্যবস্থা না থাকায় তারাও এ নিয়ে চিন্তিত।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সরকার ভ্যাকসিনের বিষয়ে কাজ করতে কোভিড ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অব ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট ও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রিপায়ের্ডনেস অ্যান্ড ডেপ্লয়মেন্ট কোর কমিটি কাজ করে যাচ্ছে।
মত বিনিময় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম। এতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক আবু হেনা মোর্শেদ জামান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ( প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। সভায় বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী, হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়া, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক প্রফেসর ডা. তাহমিনা শিরিন, এমআইএস শাখার পরিচালক ডা. মো হাবিবুর রহমান, মা, নবজাতক, শিশু ও কিশোরী স্বাস্থ্য কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হকসহ অন্যান্যরা। সভার শুরুতে কোভিড-১৯ তথ্য ব্যবস্থাপনা ও ই-সেবার ওপর তথ্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সেন্ট্রাল ফর মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মারুফুর রহমান অপু।