‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে এগিয়ে থাকতে এখনই লোকবল তৈরি করতে হবে’
২৫ নভেম্বর ২০২০ ২৩:১১
ঢাকা: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে এগিয়ে থাকতে হলে সবচেয়ে দক্ষ ও কর্মজ্ঞানসম্পন্ন লোকবল এখনই তৈরি করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে সবচেয়ে দক্ষ ও কর্মজ্ঞানসম্পন্ন লোকবল তৈরির উদ্যোগ এখন থেকেই না নিলে আমরা পিছিয়ে যাব। কিন্তু আমরা পিছিয়ে যেতে চাই না। আমরা পদক্ষেপগুলো সেভাবে নিতে চাই। বিশ্ব প্রযুক্তিগতভাবে যতটা এগিয়ে যাবে, আমরাও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলব।
বুধবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ‘ফ্রিল্যান্সার আইডি’ বিতরণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অডিটরিয়ামে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও সিনিয়র সচিব এম এন জিয়াউল আলম। অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ শীর্ষক দুইটি অডিও-ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
ফিল্যান্সদের উপার্জিত অর্থ দেশে আনার ক্ষেত্রে এর আগে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ ছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটা সমস্যা বিশ্বব্যাপী— একদিকে করোনাভাইরাস, আরেকদিকে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস। এই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস অনেক মানুষকে সন্দিহান করে তোলে। কাজেই কেউ একটা ভালো অর্থ উপার্জন করলেই সেখানে আরেকটা প্রশ্ন এসে যায়, টাকাটা কেন এলো? কোথায় পেল? কে দিলো? কী কাজ করেছে, কে কাজ দিয়েছে? এরকম হাজারও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
এসব প্রশ্ন এড়িয়ে ফ্রিল্যান্সাররা যেন নির্বিঘ্নে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে আসতে পারেন, সেই উদ্যোগই সরকার নিয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এসব প্রশ্নের সম্মুখীন যেন হতে না হয়, এটাকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ও স্বীকৃতি যেন দেওয়া যায়, সে কারণেই নির্দেশ দিয়ে বলেছিলাম— যারা আমাদের ফিল্যান্সার, তাদের একটা আইডি দরকার। তারা যে এই কাজটা করে, এটা তাদের যে কর্মসংস্থান, সেই পরিচয় তাদের দিতে হবে। এর উদ্দেশ্য, তারা যেন আরও ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে নিজেদের কাজগুলো করতে পারে। সবাই চাকরি না করলেও যেন ঘরে বসে নিজের অবসর সময়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে, সেদিকে গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তিখাতের ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে যাওয়ার জন্য জাতির পিতার অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তিনি আমাদের শুধু বাংলাদেশটা দিয়ে যাননি, তিনি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সব কাজগুলোর ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে গেছেন। শুধু তার ওপর দাঁড়িয়ে আমরা যদি কাজ করি, তাহলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়— সেটা আবারও প্রমাণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ, বঙ্গবন্ধু স্যালেলাটই-১ উৎক্ষেপণসহ বিভিন্ন নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, স্টার্টাআপ প্রোগ্রাম— এটাও কিন্তু সজীব ওয়াজেদ জয়, রেজোয়ান মুজিব সিদ্দিক— এদের পরামর্শেই করা হয়েছে। আমরা যেকোনো সময় বসে খুব খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করি সব বিষয় নিয়ে, সেই সুবিধাটা আমাদের আছে আমাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। আর তাছাড়া তরুণ প্রজন্মের কাছে তো আমাদের মতো বয়োবৃদ্ধদের শেখার অনেক কিছু আছে। আমি যতদূর পারি তাদের কাছে শিখে নেই, তাদের কাছে জেনে নেই।
‘তাদেরই পরামর্শ ছিল এই স্টার্টাআপ কর্মসূচি শুরু করা। আমরা স্টার্টআপের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রেখেছি। যারাই কিছু করতে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে যেন তারা আর্থিক সহযোগিতাটা পায়, সেই ব্যবস্থাটাও আমরা দিচ্ছি ‘— বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, মানুষ যেন কর্মসংস্থানের বিভিন্ন সুযোগ পায়, সেটাও আমরা করে দিয়েছি। প্রাইভেট ব্যাংকগুলো এখন তাদের জন্যও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিচ্ছে। সবাইকে কাজের জন্য শহরে আসতে হবে না। নিজের গ্রামে বসে শহরের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা যেন পায়, সে ব্যবস্থাটাও আমরা নিচ্ছি। সেজন্যই আমি বলেছি ‘আমার গ্রাম আমার শহরে’র কথা। এই উদ্যোগকে আমরা সেভাবেই তৈরি করতে চাচ্ছি।
আগামীতে বিশ্বে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে কিন্তু আমাদের পিছিয়ে থাকলে চলবে না। হয়তো একটু পরিবর্তন আসবে, একসময় মানুষ হাত দিয়ে কাজ করত, এরপর মেশিন দিয়ে কাজ করবে। সে ট্রেনিংগুলো দরকার। আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। আমরা তাদের সঙ্গে পদক্ষেপগুলো সেভাবেই নিতে চাই।’
‘আমি আবারও বলছি— আমরা জানি, আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক অনেক বেশি মেধাবী। খুব অল্পতেই তারা শিখতে পারে। শুধু তাদের সুযোগটা তৈরি করে দেওয়া দরকার। আমরা সেটিই করছি,’— বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রিল্যান্সার কার্ড