ঢাকা: আমাদের দেশের তরুণরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে চলবে— এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফ্রিল্যান্সার কার্ড তাদের এ ক্ষেত্রে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার তরুণ সমাজ নিজের পায়ে দাঁড়াবে। নিজের বস নিজে হবে এবং নিজেরা কাজ করবে। আত্মমর্যাদা নিয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে চলবে। ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড প্রদান করার জন্য ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে, যা থেকে সকল ফ্রিল্যান্সার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। এই কার্ড ফিল্যান্সারদের সামাজিক পরিচয় তৈরির পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ পেতে পারবে এবং তাদের ক্ষমতায়নে সহযোগিতা করতে পারবে।
বুধবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ‘ফ্রিল্যান্সার আইডি’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অডিটরিয়ামে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন- ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে এগিয়ে থাকতে এখনই লোকবল তৈরি করতে হবে’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও সিনিয়র সচিব এম এন জিয়াউল আলম। অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ শীর্ষক দুইটি অডিও-ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক অনেক বেশি মেধাবী। খুব অল্পতেই তারা শিখতে পারে। শুধু তাদের সুযোগটা তৈরি করে দেওয়া সরকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হয়ে উঠবে, পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হবে— এমন আশাবাদ জানান তিনি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুফল দেশ পাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই ডিজিটাল বিনিমার্ণের ফলে আমাদের যে মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে, তাতে দেশের বাইরে বিদেশেও কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বাড়বে। ফ্রিল্যান্সিং সবচেয়ে বড় একটি উদ্যোগ। এমনকি যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার, তারাও কিন্তু এর মাধ্যমে কিছু একটা করতে পারবে। তারা ঘরে বসেই অনেক কিছু করে যাচ্ছে। আমরা তাদেরকে সেভাবে ট্রেনিং দিয়ে কাজে লাগতে চাই। যেন সমাজে তারা অবহেলিত না হয়। সেটাই আমাদের কাজ।
তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য ছিল একটাই— আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া। কারণ ফ্রিল্যান্সিং যারা করে, যদি আমরা তাদেরকে স্বীকৃতি না দেই, তাহলে কিভাবে হবে? কাজ করতে গেলে কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে— আপনি কী কাজ করেন, এর উত্তরে ফ্রিল্যান্সিং বললে আবার জিজ্ঞাসা করে সেটা আবার কী!
ফ্রিল্যান্সিং কাজে সামাজিকভাবে নানা সমালোচনার কথা তুলে বরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাও একটা কাজ। এটাও একটা ধরনের চাকরি। এটাও এক ধরনের, কিন্তু সেটা হচ্ছে নিজেই নিজের বস। এবং নিজের শুধু বস না, আরও অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া। অর্থ্যাৎ অন্যের বস হওয়া। অন্যকে কাজ করে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। সে ধরনের সুযোগটাও হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যি কথা বলতে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অনেক শুরু থেকে বলছি এটা করতে হবে। কিভাবে করতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছি। আজ ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড দেওয়ার জন্য একটা ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে, যা থেকে সব ফ্রিলান্সার রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। এই কার্ড ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক পরিচয় তৈরির পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ পেতে সহায়তা করবে। তাদের ক্ষমতায়নে সহযোগিতা করতে পারবে। ওই চাকরির খোঁজে আর ঝামেলা করতে হবে না। নিজেরা কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে গৃহিণী যারা, তারাও অর্থ উপার্জন করতে পারবে। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। এটা ছেলেমেয়ে সবার জন্য একটা বড় সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী দেশের তরুণদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, যারা বিদেশে গিয়ে সশরীরে কাজ করছে, তারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। আবার যারা ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আনছে, সেটাও কিন্তু আমরা একটা রেমিট্যান্সে হিসেবে ধরে নিতে পারি। সেদিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমি আমার তরুণ সমাজকে অভিনন্দন জানাই এবং আবারও ধন্যবাদ জানাই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ বেসরকারি খাতের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ছেলেমেয়েদের স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তারা আমাদের সমাজে বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও রাখতে পারবে। তাই আমি মনে করি, আজকের পর আমাদের আরও অনেক উদ্যোক্তা, অনেক তরুণ-তরুণী এই ফ্রিল্যান্সিং কাজে মনোনিবেশ করবে। তারা আমাদের যে ভাষা শেখার অ্যাপস আছে, সেখান থেকে পৃথিবীর আরও বিভিন্ন দেশের ভাষা শিখে বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিজেরাই করতে পারবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে, নিজের বস নিজে হবে এবং নিজেরা কাজ করবে আত্মমর্যাদা নিয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে আমার তরুণ সমাজ চলবে।