লক্ষ্যভিত্তিক অর্থ ব্যয়ের দিকে যাচ্ছে সরকার: পরিকল্পনামন্ত্রী
২৬ নভেম্বর ২০২০ ১৮:২৭
ঢাকা: পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, আমাদের টাকার অভাব নেই। তবে এখন থেকে লক্ষ্যভিত্তিক অর্থ ব্যয়ের দিকে যাচ্ছে সরকার। গত একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অর্থ ব্যয় কোথায় হচ্ছে সেটি দেখতে হবে। তাই এখন থেকে ব্যয়টা টার্গেট করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধান টার্গেটে থাকবে পানি। এর সঙ্গে হাইজিন ও স্যানিটেশন। রাষ্ট্রের অর্থ বেশি ব্যয় হবে তাদের জন্য, যারা নিম্ন আয়ে আছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনবিষয়ক ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ শীর্ষক এক ওয়েবিনার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এশিয়া প্যাসেফিক অর্থমন্ত্রী সভা উপলক্ষে যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) এবং ডরপ।
ডিজেএফবির সদস্য সুশাস্ত সিনহার সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। আলোচনায় অংশ নেন এসডবিব্লউএ-এর দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি ও ডরপ’র গবেষণা পরিচালক যোবায়ের হাসান, ডিজেএফবি’র সভাপতি এফএইচএম হুমায়ন কবীর, স্থানীয় সরকার বিভাগের পলিসি সাপোর্ট ব্রাঞ্চের যুগ্ম-সচিব ইমদাদুল হক চৌধুরী, ইউনিসেফের ওয়াশ স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ মনিরুল আলম, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রিকিডস’র গ্রান্ডস ম্যানেজার আবদুস ছালাম মিয়া, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেন এবং ওয়াটার এইড বাংলাদেশের রঞ্জন ঘোষ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উন্নত দেশে যেতে চাচ্ছি। উন্নত দেশের প্রধান পরিচয় হবে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ। আমরা সেই চেষ্টা চালাচ্ছি। অনেকটা সফলও হয়েছি। কিন্তু তারপরও কাজ করতে হবে। বাজেটে ওয়াশ সেক্টরে বরাদ্দ আরও বাড়ানো প্রয়োজন। আমাদের অর্থ খরচের টার্গেট নিয়ে নানা ঝামেলা হয় অনেক সময়। নানা ধরনের চাপ থাকে। এজন্য একবারেই ওয়াশ সেক্টরে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু সরকার বরাদ্দ বাড়াচ্ছে এবং সেটি অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি হাওর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ৮০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। স্যানিটেশনের জন্যও প্রকল্প হচ্ছে।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা হচ্ছে, গ্রাম হবে শহর। এটি রাতারাতি হবে না। তবে বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি করা হচ্ছে। শহরের সব সুবিধা গ্রামে পৌঁছানো আমাদের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব।’
মূল প্রবন্ধে ড. শামসুল আলম বলেন,‘উন্নয়নের জন্য ওয়াশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) গোল-৬ এর সঙ্গে যুক্ত এটি। এই ওয়াটার, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) বাস্তবায়ন না হলে এসডিজির অনেক লক্ষ্যই অর্জন হবে না। এসডিজির লক্ষ্য পূরণে বাজেটে ওয়াশ খাতের ব্যয় কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। বিশ্বে এখনও ৭০ কোটি মানুষ খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করে। আমাদের দেশেও অনেকে খোলা জায়গায় পায়খানা করে। আমাদের দেশে পানি আছে অনেক। কিন্তু সেই পানি সুপেয় কি-না সেটি বড় কথা। কোভিড এসে স্পষ্ট করেছে হাত ধোয়াটা কত জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘খাদ্য পাওয়া যেমন মানুষের মৌলিক অধিকার, তেমনি ওয়াশও মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পরে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন নিয়ে সুনিদিষ্ট অনেক পদক্ষেপ রয়েছে। যেমন: রেইন ওয়াটার হারভেস্ট, আর্সেনিকমুক্ত পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, নদীগুলোতে জলাধার সৃষ্টি করা এবং পানির মান বাড়ানো। গ্রামগুলোতে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া উন্নতমানের পায়খানা স্থাপন করা হবে। পানির দাম নির্ধারণে কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে ওয়াশ সেক্টরের সার্বিক উন্নতি করতে হলে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে।’
ওয়েবিনারে এমদাদুল এক চৌধুরী বলেন, ‘ওয়াশ একটি খাত। এখানে আমাদের অনেক অর্জনও আছে। পাশাপাশি কাজও হচ্ছে অনেক। পলিসি ইস্যুতে অনেক কাজ হচ্ছে। ইতোমধ্যেই স্যানিটেশন স্ট্রাটেজি-২০১৪ রিভিউ করা হয়েছে। আগামী মার্চে এটি সমাপ্ত হতে পারে। এছাড়া ওয়াশে কোভিডের প্রভাব মূল্যায়ন করা হচ্ছে। মেয়েদের মাসিককালীন পরিচ্ছতার বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হচ্ছে।’
আবদুস সালাম মিয়া বলেন, ‘দেশের কিছু এলাকা আছে যেখানে পানি অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শহরায়ন। শহর ও গ্রামের মধ্যে বাজেট বৈষম্য কমাতে হবে।’ যোবায়ের হাসান বলেন, ‘এসডিজি-৬ বাস্তবায়নে ওয়াশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এখানে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। আগামী বাজেটে আরও বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।’
এনিরুল আলম বলেন, ‘আগে মনে হতো টিউবওয়েল আর ল্যাট্রিন দিলেই হয়ে যাবে। কিন্তু এখন চিন্তার বদল হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এখন ৯৮ শতাংশ মানুষ পানি পাচ্ছেন। কিন্তু বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন মাত্র ৪৩ শতাংশ মানুষ। বাজেটে হাইজিনে বরাদ্দ মোট বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ। অথচ করোনার কারণে এর গুরুত্ব কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।’