‘কয়েক শতাব্দী বেঁচে থাকুক প্রমা’
২৭ নভেম্বর ২০২০ ২৩:১২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: তিন দশক বছর পার করেছে চট্টগ্রামের সামনের সারির আবৃত্তি সংগঠন প্রমা। পূর্তি অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদের কামনা, ‘কয়েক শতাব্দী বেঁচে থাকুক প্রমা’।
শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি। প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে অনুপম সেন বলেন, ‘একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে করোনার মধ্যে আজ প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান হচ্ছে। প্রমা আবৃত্তি চর্চায় ৩০ বছর পার করে ফেলেছে। এখন ৩১ বছরে পা রেখেছে। পঞ্চাশ-ষাটের দশকেও আবৃত্তির কথা তেমন শোনা যেত না এদেশে। কিন্তু আজ সারাবিশ্বে আবৃত্তি একটা বিরাট শিল্প। আবৃত্তি মনকে পরিশালিত করে। নাটকে যেভাবে নবজাগরণ ঘটে, তেমনি আবৃত্তিও নবজাগরণ ঘটায়। প্রমা এগিয়ে যাক, ৩০ বছর নয়, কয়েক শতাব্দী টিকে থাকুক।’
উদ্বোধনী বক্তব্যে অনিন্দ্য ব্যানার্জি বলেন, “সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং এদেশের মানুষের আধুনিক চিন্তাধারার চর্চা আমাকে সবসময় মুগ্ধ করে। মৌলবাদী চিন্তাধারা সমাজের উত্তরণে বড় বাধা। মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণা থেকে উত্তরণের জন্য শিল্পচর্চা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। নৈতিক মূল্যবোধ তৈরিতেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যোদ্ধারা হাতে হাত রেখে যুদ্ধ করেছে। মৈত্রীর এ বন্ধনকে কোনো অপশক্তি বিনাশ করতে পারবেনা। আমরা সবসময় প্রমা’র পাশে আছি।”
সভাপতির বক্তব্যে প্রমা’র সভাপতি রাশেদ হাসান বলেন, ‘একটা দহনকাল আমরা অতিক্রম করছি। বাধ্য হয়ে মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্ন হয়েছি। এই রকম দুঃসময় আমাদের জীবদ্দশায় হয়তো আমরা পাইনি, তবে মানবজাতি এরকম মহামারি কাল অতীতে অনেকবার পার করেছে। সকল মহামারি কাল দূর করে বারবার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানুষ তার বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আমরা বিশ্বাস রাখি মানুষের প্রতি, আস্থা রাখি মানুষের প্রতি। অনেকগুলো মাস দূরে ছিলাম এই মঞ্চ, এই কোলাহল থেকে। তারপরও আগের সময়ে ফিরে যেতে পারিনি। নিরাপত্তার বিষয় চিন্তায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেকগুলো মাস পরে সকলে একত্রে মিলিত হয়েছি। আমরা চেয়েছি এই মিলিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে নিজেদের ভেতর সাহস সঞ্চার করতে পারি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, কবি হোসাইন কবির, ইউসুফ মোহাম্মদ, জিন্নাহ চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী দেবাশীষ রুদ্র, মঞ্চমুকুট নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি সুচরিত দাশ।
এছাড়া নৃত্যশিল্পী শুভ্রা সেনগুপ্তার পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্সের শিল্পীরা। একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাবেরী সেন গুপ্তা, সংকর, শ্রেয়সী রায় এবং নাজরাতুন তিভা।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন হাফিজ রশিদ খান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করে কবি টোকন ঠাকুরের লেখা মহাকাব্যের ট্রাজেডি কবিতা আবৃত্তি করেন প্রমা’র আবৃত্তিশিল্পী মঞ্জুর মুন্না। এছাড়াও একক আবৃত্তি করেন সংগঠনের আবৃত্তি শিল্পী সাইফুর রহমান, রাজু দাশগুপ্ত, রোমানা আফাজ রুমী, সালমা জাহান, রুনা চৌধুরী, নাজমুল সাদেকী সুমন, আচরারুল হক।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করে ১৯৯০ সালের ২৯ নভেম্বর জন্ম নেওয়া সংগঠনটি। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এর আগে সদ্য প্রয়াত অভিনেতা আলী যাকেরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ভারতের সহকারী হাইকমিশন এই আয়োজনে সহযোগিতা দিয়েছে।