Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএনপি ঠেকাতে নতুন ইসলামী জোট!


১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ১০:৪৭

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা:বিএনপির ভোটের হিসাব বদলে দিতে আসছে নতুন ইসলামী জোট। আর এ উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপির এক সময়ের রাজনৈতিক মিত্র ও ২০ দলীয় জোটের তৃতীয় বৃহৎ শক্তি ইসলামী ঐক্যজোট। সমমনা রাজনৈতিক দল নিয়ে খুব শিগগিরই নতুন জোটের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আগামী সংসদে বিএনপিকে প্রধান বিরোধীদল হিসেবে রাখার পাশাপাশি বিকল্প আরেকটি বিরোধী দল রাখতে চায় সরকার। সেই লক্ষ্যেই কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সচেষ্ট তারা। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার সরকারি স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা শোনাতে গণভবনে ডেকে নেওয়া হয় ওলামা মাশায়েখদের। সেখানে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়- আগামী সংসদে অন্তত ২০জন ওলামা-মাশায়েখ ঠাঁই পাবেন। তবে গণতান্ত্রিক পন্থায় তাদেরকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।

সরকারের দেওয়া ‘গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত হয়ে আসার’ শর্ত পূরণের লক্ষ্যেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সাবেক শরিক ইসলামী ঐক্যজোট ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি বড় জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের এই উদ্যোগে শরিক হওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মনে করি বাংলাদেশে ইসলামের পুনঃজাগরণ দরকার। বিষয়টি সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। সে জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করছি সেই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে। কথা-বার্তাও হয়েছে সমমনাদের সঙ্গে। তবে কোনো কিছু এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত মাওলানা মো. আব্দুল লতিফ নেজামী ও মুফতি ফয়জুল্লাহর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী ও মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী ও আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জুবাইর-এর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান ও মাওলানা মাহফুজুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ও অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আল্লামা এম এ মান্নান ও এম. এ মতিনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট- ধর্মভিত্তিক এই ৬টি রাজনৈতিক দলসহ বেশ কয়েকটি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের প্রক্রিয়া অবহ্যত রয়েছে।

এছাড়া ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক মাওলানা মোহম্মদ ইসহাক ও ড. আহমেদ আব্দুল কাদের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, মাওলানা শায়েখ আবদুল মোমিন ও মাওলানা নূর হোসেন কাসেমীর নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সরকারের সঙ্গে থাকা সৈয়দ মুজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও এম এ আউয়াল নেতৃত্বাধীন তরিকত ফেডারেশন, সরকারের প্রতি অনুগত মোস্তফা আমীর ফয়সাল ও এজাজুর রসূল নেতৃত্বাধীন জাকের পার্টিকেও নতুন এই জোটে ভেড়ানোর চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দিকে ‘বিশেষ’ নজর রয়েছে নতুন জোট গঠনে উদ্যোগী নেতাদের।

সূত্রমতে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত বাংলাদেশের সব চেয়ে প্রাচীন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মুহম্মদ ওয়াক্কাচ এরইমধ্যে মন্ত্রীত্বসহ ৫টি সংসদীয় আসনের প্রস্তাব পেয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে নির্বাচনের আগে বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে নতুন জোটে ভিড়তে পারেন মুফতি ওয়াক্কাস।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুফতি ওয়াক্কাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। এখন পযর্ন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে আছি। ভবিষ্যতের হিসাব ভবিষ্যতে হবে। নির্বাচন এখনো অনেক দূর!’

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে ধর্মভিত্তিক অসংখ্য রাজনৈতিক দল থাকলেও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত এই ১০টি ইসলামী রাজনৈতিক দল ভোটের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদেরে সম্মিলিত শক্তি যে কোনো বড় রাজনৈতিক দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম। ২০১৩ সালে হেফাজতের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তির জানান দিয়েছিল এরা। এদের কাঁধে ভর করে ৫টি সিটিতে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছিল বিএনপি। অতীতে জাতীয় নির্বাচনেও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রয়াত আমীর মুফতি ফজললু হক আমিনী এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মুহম্মদ ওয়াক্কাস ও সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুর পাশা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এ ছাড়াও এদের ভোট ও সমর্থন নিয়ে বহুবার নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছে বিএনপি। সুতরাং ভবিষ্যতে ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক দলগুলোর পৃথক জোট হলে ভোটের মাঠে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বিএনপি। অন্যদিকে ইসলামী দলগুলোকে আনুগত্যে এনে তাদেরকে সংসদে নিতে পারলে বিকল্প একটি বিরোধী দল গঠনের সুযোগ থাকবে সরকারের হাতে। এতে করে সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেও সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না।

অবশ্য এগুলো নিয়ে এখনই কিছু ভাবতে চাইছে না বিএনপি। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ইসলামিক দলগুলোকে ২০ দলীয় জোটে রেখে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের সব চাহিদা পূরণ করে জোটে রেখে দেওয়ার মতো অবস্থা বিএনপির নেই। অনেক বেশি পাওয়ার আশায় তারা জোট ছেড়ে চলে গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কিছুতেই মনে করি না, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর আলাদা জোট হলে বিএনপির ভোট কমে যাবে। অতীতে যারা বিএনপিকে ভোট দিয়েছে ভবিষ্যতেও তারা বিএনপিকে ভোট দেবে।

সারাবাংলা/এজেড/এসআই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর