করোনায়ও পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা!
২৯ নভেম্বর ২০২০ ১৯:১২
ঢাকা: করোনা মহামারির মধ্যে দেশের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্থবিরতা নেমে আসলেও ব্যতিক্রম ছিলে দেশের পুঁজিবাজার। দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে মন্দাভাব থাকলেও করোনা পরবর্তী সময়ে তা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এই সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে পুঁজিবাজার তার তারল্য সংকট অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে সব সূচক ও বাজার মূলধন। সর্বশেষ ৬ মাসে (গত ৩১ মে থেকে ২৯ নভেম্বর) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এর পর লকডাউন শুরু হলে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকে। পরে গত ৩১ মে থেকে লকডাউন পরবর্তী লেনদেন শুরু হয়। লকডাউনের পর লেনদেন শুরু হলে চাঙ্গা হয়ে উঠে পুঁজিবাজার। মাঝে মাঝে দুয়েকদিন বিরতি দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বাড়তে থাকে সব সূচক, আর্থিক ও শেয়ার লেনদেন। এত করে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যায় বাজার মূলধন। সর্বশেষ ছয় মাসে (৩১ মে-২৯ নভেম্বর) মূলধন বেড়েছে ৭৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, করোনাকালীন লকডাউনের পর গত ৩১ মে লেনদেন শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ১৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। গত ছয় মাসে পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ সর্বশেষ ছয় মাসে ডিএসইর বাজার মূলধন ৭৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা বেড়েছে। একই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৪ হাজার ৮ পয়েন্ট থেকে ৮৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৮৮১ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি ডিএসই থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৩২ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনাকালীন পুঁজিবাজারে সূচক, লেনদেন এবং বাজার মূলধন বৃদ্ধি পাওয়াটা ইতিবাচক।’
তিনি বলেন, গত মে মাসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এসব পদক্ষেপের কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা মহামারির আগে থেকেই পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট ছিল। করোনার শুরুতে এই সংকট আরও বেড়ে যায়। তবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বিদায়ী কমিশন শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে। এটা পুঁজিবাজারকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার শুরুর দুই সপ্তাহ পর দুই মাস লকডাউনের কারণে পুঁজিবাজার বন্ধ থাকে। পরবর্তী সময়ে লেনদেন শুরুর পর ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া হবে। এরকম নানা আলোচনার কারণে বাজারে প্যানিক সৃষ্টি হয়। বর্তমান কমিশন ফ্লোর প্রাইসের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিলে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পায়। এছাড়াও ব্যাংকের সুদের হার কমে যাওয়া এবং নতুন কমিশনের নানা উদ্যোগের কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’