অভিযানেও বাড়ছে না মাস্কের ব্যবহার, সচেতনতা জরুরি ব্যক্তি পর্যায়ে
২৯ নভেম্বর ২০২০ ২২:৪৩
ঢাকা: সারাবিশ্বে চলছে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। এই ঢেউয়ে সংক্রমণের মাত্রার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুর হারও। অনেক দেশ ইতোমধ্যে লকাডাউন ঘোষণা করেছে। কোনো কোনো দেশ জারি করেছে কারফিউ। শীতে বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে কি-না তা কেউ বলতে পারছেন না। কিন্তু ইতোমধ্যে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার গত দুই মাসের তুলনায় বেড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় অন্যান্য প্রস্তুতির পাশাপাশি দেশব্যাপী শুরু হয়েছে মাস্ক ব্যবহারের পক্ষে ব্যাপক অভিযান। প্রশাসনের অভিযানে প্রতিদিন জরিমানা, মামলা ও মাস্ক পরিধানসহ করা হচ্ছে সচেতন। তারপরও মাস্ক ব্যবহারে অনেকেই প্রশাসনের নির্দেশনা মানছেন না।
অভিযানকারী দলের ম্যাজিস্ট্রেটরা বলছেন, অভিযানে দেখা গেছে, মাস্ক কারও মুখে আছে, কেউবা কানে ঝুলিয়ে রেখেছেন, কারও শার্টের পকেটে, আবার কেউবা পকেটে রেখে দিয়েছেন। জানতে চাইলে একেকজন একেক অযুহাত দিচ্ছেন। মাস্ক ব্যবহারে নিজে থেকে সতর্ক না হলে হাজার অভিযান চালিয়েও কোনো লাভ হবে না। তারপরও অভিযানের কারণে অনেকেই সচেতন হচ্ছেন এবং মাস্ক ব্যবহার করছেন। করোনা মোকাবিলায় মাস্ক ব্যবহারে আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করছেন অভিযান সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, গত ৪ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে মাস্ক ব্যবহারে সচেতন করতে অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। সারাদেশে অভিযানে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্তত দেড় হাজারের মত মামলা হয়েছে। এছাড়া লক্ষাধিক লোককে ফ্রি মাস্ক বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন।
রোববার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মাস্কের অভিযান চালিয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার রহমান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অভিযানে ৯০ ভাগ লোকের মুখে মাস্ক পাওয়া গেছে। তবে সবাই সচেতন না। কারণ দেখা যাচ্ছে, মাস্ক কারও মুখের নিচে, কারও কানে ঝুলানো বা কেউ পকেটে রেখেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সচেতন করছি। ব্যক্তি বিশেষে ১০০ টাকা, ২০০ টাকা বা ৩০০ টাকা জরিমানা করছি। আর প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে হাজারের ওপর জরিমানা বা মামলা করছি। জরিমানা যা-ই করি না কেন আমাদের মূল টার্গেট মাস্ক পরিধানে সচেতনতা বাড়ানো।’
রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জল হালদার, মতিঝিল এলাকায় সাইফুল ইসলাম, জজ কোর্ট এলাকায় মাইনুল ইসলাম, ওয়ারী এলাকায় ইশতিয়াক, যাত্রাবাড়ী এলাকায় ইশমাম, হাতিলঝিল এলাকায় মোশাররফ হোসেন এবং নিউ মার্কেট এলাকায় রবিউল আলম অভিযান পরিচালনা করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জল হালদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘অভিযানের শুরুর দিকে মাস্ক না পরা অনেককেই পাওয়া গেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা কমে আসছে। মাস্ক পরিধানের সংখ্যা বাড়ছে। সচেতনতাও বাড়ছে। রোববার (২৯ নভেম্বর) ১০ জনের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা হয়েছে। এক হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাস্ক পরিধান করেননি এমন যে কেউ জরিমানার আওতায় আসছে। তবে নিতান্তই গরীব মানুষকে ফ্রি মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রবিউল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিয়মিত অভিযানের ফলে আগের চেয়ে মাস্ক পরিধান করা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে অভিযানে দেখা গেছে, অনেকের মাস্ক থাকলেও সেটি দিয়ে নাক-মুখ ঢাকছে না। কেউ কেউ বলছেন, ময়লা হয়েছে তাই ফেলে দিয়েছি। কেউ বলেন, সামনের দোকানে গিয়ে কিনব। সবাই সচেতন হলে এরকম খোঁড়া অযুহাত কেউ দিত না। যেকোনো উপায়ে মাস্ক পরিধান করেই বাসা থেকে বের হতো।’
রাজধানীর মতো দেশের বিভিন্ন জেলাতেও মাস্ক পরিধানে সচেতনতা বাড়াতে অভিযান পরিচালনা করছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে রাজধানীর বাইরে মাস্ক ব্যবহারের হার ঢাকার চেয়ে অনেক কম। ঢাকায় ৯০ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করলেও ঢাকার বাইরে এর হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এই হার কীভাবে বাড়ানো যায় সেজন্য কাজ করছে প্রশাসন। বাইরে বের হওয়াদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতেই জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে করোনার প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রোববার (২৯ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শনিবার (২৮ নভেম্বর) দেশে করোনায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া একই সময় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৮৮ জন। বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সচেতনতার বিকল্প নেই। সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোগতত্ত্ববিধ কিংকর ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই ঢেউ ঠেকাতে হলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। এবার শিশুদের আক্রান্তের হার বাড়ছে। কাজেই শিশুদেরও বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘এবারে করোনা মোকাবিলায় সামাজিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। মসজিদের ইমাম, জনপ্রতিনিধি, এনজিও, রাজনৈতিক ব্যক্তি সবাই যদি একযোগে মাস্ক ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করে তাহলে সুফল মিলবে। সেইসঙ্গে হাত ধোয়া ও সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বর্তমানে বিমানবন্দর খোলা রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী দেশের ভেতরে প্রবেশ করছে। তাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে প্রবেশ করাতে হবে। এখানে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। এর কোনো বিকল্প নেই। এটি করতে না পারলে করোনা মোকাবিলা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।’