Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চমেক হাসপাতালের ৪ ক্যানটিনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করল দুদক


২৯ নভেম্বর ২০২০ ২৩:২২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চারটি ক্যানটিনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারকে বঞ্চিত করে সরকারি জায়গায় অনিয়মের মাধ্যমে এসব ক্যানটিন পরিচালিত হচ্ছে বলে তথ্য-প্রমাণ পেয়ে দুদক এই ব্যবস্থা নিয়েছে।

ক্যানটিনগুলো হচ্ছে- তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সংগঠনের পরিচালিত দুটি, নার্সদের সংগঠনের পরিচালিত একটি এবং অপরটি চমেক হাসপাতাল কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির (মেডিকপস)।

রোববার (২৯ নভেম্বর) চারটি ব্যাংক হিসাব জব্দের নোটিশ জারির পর দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অগ্রণী ব্যাংকের চমেক শাখায় চারটি ব্যাংক হিসাবে মোট ২৯ লাখ ৪৭ হাজার ৬৯৬ টাকা আছে।

দুদক গত অক্টোবরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০৮ সাল থেকে টেন্ডারের ভিত্তিতে যত প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে, সবগুলোর নথি তলব করে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ও নগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর ‘টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্লিনিক ব্যবসা, কমিশন ব্যবসাসহ জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ’ অনুসন্ধানে নেমে এই নথি তলবের বিষয়টি প্রকাশ পায় গণমাধ্যমে।

এর ধারাবাহিকতায় দুদক চমেক হাসপাতালের দরপত্র, খাবার সরবরাহ, চুক্তিভিত্তিক লোক সরবরাহ, রক্ত সঞ্চালন বিভাগের অনিয়ম, কেনাকাটাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। এর অংশ হিসেবে প্রথম দফায় এক চিকিৎসকসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। দ্বিতীয় দফায় ক্যানটিনগুলোর নানা অনিয়মের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে শুরু করে দুদক। অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ মেলার পর চারটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

অনুসন্ধানকারী দুদক, চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে অনিয়ম-দুর্নীতি অনুসন্ধানে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে চারটি ক্যানটিনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলার সময় এখনও আসেনি।’

দুদক সূত্রে জানা গেছে, তিনটি বিষয় সামনে রেখে ক্যানটিনগুলোর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। প্রথমত, উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ায় বরাদ্দ ছাড়ায় সরকারি জায়গা ব্যবহার করে ক্যানটিনগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে, অথচ সরকারি কোষাগারে কোনো টাকা জমা হচ্ছে না। হাসপাতাল কীসের ভিত্তিতে ক্যানটিনগুলোতে গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে দিচ্ছে এবং এ বাবদ কি পরিমাণ আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। সরকারি কোষাগারে টাকা না গেলেও বিএমএ নেতা, হাসপাতালের কর্মকর্তারা ক্যানটিন থেকে আয়ের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগও পেয়েছে দুদক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিনা টেণ্ডারে ১৯৮৫ সাল থেকে ক্যানটিনগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে অথচ এক টাকাও সরকারের তহবিলে জমা পড়েনি। উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় টেন্ডারের মাধ্যমে সেগুলো বরাদ্দ দিলে প্রতিমাসে কম করে হলেও ৮ লাখ টাকা করে ৩২ লাখ টাকা সরকারের তহবিলে জমা পড়তো। এই বিপুল পরিমাণ টাকা বছরের পর বছর ধরে এক শ্রেণির প্রভাবশালী লোকজন ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নতুন করে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ক্যানটিন চারটি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

এদিকে ক্যানটিন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত চার কর্মচারী সমিতির আট সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের ৬ ডিসেম্বর দুদক তলব করেছে। তাদের কাছ থেকে নিজেদের সম্পদ বিবরণী, ক্যানটিন থেকে আয় করা টাকা কাদের দেওয়া হয় তার হিসাবও চেয়েছে দুদক।

ক্যানটিন চমেক হাসপাতাল জব্দ দুদক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর