Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ প্রকল্প: প্রস্তাবেই অনিয়ম!


৩০ নভেম্বর ২০২০ ০৮:১৮

ঢাকা: প্রকল্প প্রস্তাবেই অনিয়ম করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর। মানা হয়নি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার সিদ্ধান্ত। জনবল নির্ধারণেও নেওয়া হয়নি অর্থবিভাগের অনুমোদন। ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ সভার সিদ্ধান্ত না থাকলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই বাড়ানো হয়েছিল বিপুল অর্থ। ‘চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন’ প্রকল্পে ঘটেছে এমন ঘটনা। সম্প্রতিকালে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় এসব ক্রুটি ও অনিয়ম তুলে ধরেছে পরিকল্পনা কমিশন।

বিজ্ঞাপন

এ পরিপ্রেক্ষিতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ রোববার (২৯ নভেম্বর) সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগেও প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি সভা হয়েছিল। প্রকল্প প্রস্তাবে নানা ক্রটি-বিচ্যুতি ছিল। আমরা সেগুলো সংশোধনের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাবটি ফেরত পাঠিয়েছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো নিয়ম না মানাটাইতো অনিয়ম। তবে এসব বিষয়ে আমি একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধানকে কমিটির প্রধান করে এর সঙ্গে আইএমইডির কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট অফিসার রাখার কথা বলা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, আমরা চাই এরকম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা হোক। যাতে দেশের যেকোনো জেলায় নতুন করে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল হলে আর সমস্যা না হয়।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি নিয়ে গত ২৬ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত হয় পিইসি সভা। ওই সভার কার্যপত্রে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কার্যপত্রে বলা হয়েছে, পূর্বের ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনাবাসিক ভবন খাতে ৬৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও পুর্নগঠিত ডিপিপিতে ১৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বাড়িয়ে ওই খাতে ২২৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। আগের পিইসি সভা ও ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ সভার সিদ্ধান্ত না থাকার পরও নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলনে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন খাতে বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার কোনো যৌক্তিকতা পুনর্গঠিত ডিপিপিতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া সুপার স্ট্রাকচার কস্ট, এডিশনাল সুপার স্ট্রাকচার কস্ট, ফাউন্ডেশন কস্ট এবং আদার বিল্ডিং কস্ট এ বিষয়গুলোর স্পষ্ট করা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলনে বিভিন্ন খাত যেমন,ইন্টারনাল রোড, মাস্টার ড্রেন, সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, এক্সটার্নাল গ্যাস কানেকশন, ফুট ওভার ব্রিজ ইত্যাদির সুনিদিষ্ট পরিমাণ বা ইউনিট ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়নি।

পিইসি সভার কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর অনুষ্ঠিত ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইনসিনারেটর বাদ দিয়ে আধুনিক মাইক্রোওয়েভ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংস্থান রাখার কথা থাকলেও পুনগঠিত ডিপিপিতে তা সুনিদিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।

এছাড়া অর্থ বিভাগের সুপারিশ মোতাবেক প্রকল্পের জনবল কাঠামো সংশোধনের কথা থাকলেও পুনর্গঠিত ডিপিপিতে তা সংশোধন করা হয়নি। পুনর্গঠিত ডিপিপিতে মেডিকেল যন্ত্রপাতির তালিকায় বিভিন্ন বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত যন্ত্রপাতির অসামঞ্জস্যতা দূর করা প্রয়োজন। সুনিদিষ্ট কিছু বিভাগের জন্য এসি, কম্পিউটার, ইউপিএস ইত্যাদি প্রস্তাবের যৌক্তিকতা সভাকে জানানো যেতে পারে। কোনো বিভাগের জন্য স্টেথোস্কোপ প্রস্তাব করা হয়নি, যা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমের জন্য অত্যবশকীয়।

এছাড়া বেড, হুইল চেয়ার, রোগী বহনের ট্রলি ইত্যাদি যন্ত্রপাতি বিভিন্ন বিভাগের জন্য পৃথক প্রস্তাব না করে সমন্বিতভাবে হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির আওতায় প্রস্তাব করা যেতে পারে। শিশু বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত যন্ত্রপাতির মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বৈততা পরিলক্ষিত হয়, যা দূর করা প্রয়োজন।

আরও বলা হয়েছে, পিইসি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত সব আসবাবপত্র বিএফআইডিসি থেকে সংগ্রহের কথা থাকলেও এ বিষয়ে পুনগঠিত ডিপিপিতে সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণের যৌক্তিকতা পুনগঠিত ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়নি। বৈদেশিক প্রশিক্ষণে উল্লেখিত দেশসমুহ প্রস্তাবে যৌক্তিকতা ডিপিপিতে সংযোজন করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। তাই প্রয়োজনে দীর্ঘমেয়াদী বা মধ্যমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্থাপত্য নকশতায় স্থাপত্য অধিদফতরের সিল ও স্বাক্ষর নেই, যা থাকা আবশ্যক।

পিইসি সভার কার্যপত্র পর্যালোচনা করে দেখো গেছে, বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ। এছাড়া একজন পরামর্শকের জন্য ১০ লাখ টাকা, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের জন্য ৪৮ লাখ টাকা, আপ্যায়ন বাবদ ৫ লাখ টাকা, প্রকল্প পরিচালকের জন্য দুটি মোটরযান বাবদ ১ কোটি ৬ লাখ টাকা, প্রকল্প পরিচালকের অফিস সরঞ্জামাদি খাতে ৭ লাখ টাকা এবং প্রকল্প পরিচালকের আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ ৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রস্তাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, চাঁদপুর চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জনবহুল জেলা। তারপরও চাঁদপুরবাসী স্বাস্থ্য সেবার জন্য নোয়াখালী জেলার টারশিয়ারী লেভেল হাসাতাপালের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চাঁদপুরের নবজাতক মৃত্যুর হার ২৫ দশমিক ৫ এবং ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ। পাশাপাশি এ জেলার রোগ এবং দুর্যোগ সংক্রান্ত কারণে শারিরিক প্রতিবন্ধীর হার শতকরা ১২ দশমিক ২ শতাংশ। চাঁদপুর জেলার স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য ২০১০ সালের ২৭ আগস্ট চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, আসবাবপত্র সংগ্রহ, যানবাহন ক্রয়, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ক্রয়, প্রশিক্ষণ এবং জনবল নিয়োগ করা হবে।

একনেক চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিকল্পনা কমিশন পিইসি শিক্ষা অধিদফতর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর