ইসি ঘোষিত ২৫ পৌর নির্বাচনেও অংশ নেবে বিএনপি
৩০ নভেম্বর ২০২০ ১৭:১৯
ঢাকা: ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে ফেরা রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত ২৫ পৌর নির্বাচনেও অংশ নেবে।
সোমবার (৩০ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরে সই করা এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে রোববার (২৯ নভেম্বর) বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যরিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় বলা হয়, যদিও বর্তমানে দেশে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূলে নয় তারপরও স্থানীয় পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে নির্বাচন কমিশন কতৃক ঘোষিত ২৫টি পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি।
গত ২ সপ্তাহে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় সভায়। সভায় মত প্রকাশ করা হয় যে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকেই সরকারের ক্ষমাহীন উদাসীনতা ও ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনও পরীক্ষার হার অত্যন্ত সীমিত। পরিকল্পিতভাবে সংখ্যা কম দেখানোার ফলে সঠিক চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে না।
‘অন্যদিকে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত থাকায় মৃত্যুর হারও বাড়ছে। বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ ও ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ শয্যা সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হওয়াতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে। ঢাকার বাইরেও মহানগর, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড নেই বললেই চলে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর থেকে প্রায় এক বছর সময় পেয়েও গেলেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যার্থ হয়েছে’— বলা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়।
সভা মনে করে, সামগ্রিকভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সরকারের চরম ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, উদাসীনতা, দুর্নীতি এবং জনগণের জীবনের মূল্য না দেওয়ায় এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সভা মনে করে অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে জেলা, উপজেলা এবং ঢাকাসহ সকল মহানগর পর্যায়ে কোভিড-১৯ সহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে।
সভায় বলা হয়, ‘করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে ইতোমধ্যেই কয়েকটি দেশে চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। অনেক দেশের সরকার ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের দায়িত্বজ্ঞানহীন সরকার এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে তা স্পষ্টভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরছে না। বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ বিভ্রান্তিমূলক তথ্য তুলে ধরছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অযোগ্যতার কারণে জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন সংগ্রহ কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
সভা মনে করে, ভ্যাকসিন সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিতরণের বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে না পারলে জনগণ উপকৃত হবে না। উপরন্তু ব্যাপক দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করবে। যেহেতু যথাযথ তাপমাত্রায় এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করতে হবে সেহেতু আগে থেকেই এ বিষয়ে সকল পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সভায় বলা হয়, ভ্যাকসিনের সুষ্ঠু বিতরণের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ১৬ কোটি মানুষের জন্য ৩২ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ প্রয়োজন হবে। সভা মনে করে বর্তমানে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দফতরের পক্ষে এই ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে পালন করা সম্ভব নয় বলে এই কাজে সশস্ত্রবাহিনী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। বেশ কয়েকটি উন্নত দেশেও সশস্ত্রবাহিনীকে কাজে লাগানোর কথা বলা হয়েছে। সভা অবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহের পর সংরক্ষণ ও বিতরণের স্বচ্ছতা, কঠোর নজরদারি এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা সম্বলিত পরিকল্পনা জনগণের সামনে উপস্থাপনের দাবি জানায়।
সভায় জানানো হয়, সাম্প্রতিক ঢাকা মহানগরে অনেকগুলো বস্তিতে রহস্যজনকভাবে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। ফলে অসংখ্য বিত্তহীন কর্মজীবী মানুষ বাস্তুহীন হয়ে পড়েছে। মুক্ত আকাশের নিচে খাদ্যাভাবে অসহনীয় জীবন কাটাচ্ছে। সভা মনে করে সরকারের মদদপুষ্ট প্রভাবশালী মহলের সরকারি জমি দখলের অসৎ উদ্দেশ্যেই এসব অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। সভা অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়। এছাড়া রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ, জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় সভা থেকে।