Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নভেম্বরে সংক্রমণ বেড়েছে ২৯%, মৃত্যু বেড়েছে ৭%


৩০ নভেম্বর ২০২০ ২২:৫০

ঢাকা: গেল অক্টোবরের তুলনায় চলতি নভেম্বরে এসে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ও এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর পরিমাণ বেড়েছে। নভেম্বর মাসের শেষ দিনের তথ্যসহ পরিসংখ্যান বলছে, এ মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ২৪৮ জন। এ মাসে করোনা সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৭২১ জন। নভেম্বর মাসে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ব্যক্তি অক্টোবর মাসের তুলনায় ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। এ মাসে মৃত্যুও অক্টোবর মাসের তুলনায় বেড়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও শনাক্তের হার এখনো নির্দিষ্ট একটি সীমাতেই রয়েছে। এটি কোনোদিন বাড়ছে, কোনোদিন কিছুটা কমছে। সার্বিকভাবে অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে সংক্রমণ শনাক্তের হার বেড়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বা ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার বদলে বেশি জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।

সোমবার (৩০ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার সই করা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ সংক্রমিত ৩৫ জন মারা গেছেন। এদিনের হিসাব বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৩৭২টি নমুনা পরীক্ষা করে দুই হাজার ৫২৫ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত ২৭ লাখ ৭২ হাজার ৭০১টি নমুনা পরীক্ষা করে চার লাখ ৬৪ হাজার ৯৩২ জনের কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিন লাখ ৮০ হাজার ৭১১ জন করোনা সংক্রম ণথেকে সুস্থ হয়েছেন, মারা গেছেন ছয় হাজার ৬৪৪ জন, বাকিরা চিকিৎসাধীন।

দেশে সর্বশেষ একদিনে আড়াই হাজারের বেশি ব্যক্তির কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ২ সেপ্টেম্বর (২ হাজার ৫৮২ জন)। ওই দিন দেশে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ১৬ দশমিক ৯৮২ শতাংশ। এর ৮৮ দিন পর ৩০ নভেম্বর দুই হাজার ৫২৫ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। একইসঙ্গে ৮৮ দিন পরে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হারও বেড়ে ১৬ শতাংশ পেরিয়েছে।

নমুনা পরীক্ষা, সংক্রমণ ও শনাক্তের হার বেড়েছে

অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের কোভিড-১৯ পরিসংখ্যান তুলনা করলে দেখা যায়, অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে এসে নমুনা পরীক্ষা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে শনাক্তের পরিমাণ এবং নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার। অক্টোবর মাসে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল তিন লাখ ৮৮ হাজার ৬০৭টি। এর বিপরীতে শনাক্তের পরিমাণ ছিল ৪৪ হাজার ২০৫টি। সে তুলনায় নভেম্বরে নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে ৪৭ হাজার ৮৩২টি। এ মাসে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩৯টি। এর বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৫৭ হাজার ২৪৮ জনের শরীরে।

বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যান বলছে, অক্টোবর মাসের তুলনায় নভেম্বরে সংক্রমণ বেড়েছে ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। কেবল সংক্রমণ নয়, সংক্রমণের হারও বেড়েছে নভেম্বরে। অক্টোবর মাসে যেখানে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, সেখানে নভেম্বরে এই হার ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ।

মৃত্যুও বেড়েছে নভেম্বরে

দেশে এখন পর্যন্ত কোভিড সংক্রমণ নিয়ে একমাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটেছিল জুলাই মাসে। ওই মাসে এক হাজার ২৬৪ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আগস্টে এই সংখ্যা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৭০ জনে। মৃত্যু আরও কমতে থাকে পরের মাসগুলোতে। সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ৯৭০ জন, অক্টোবরে ৬৭২ জন। তবে নভেম্বরে এসে ফের করোনা সংক্রমিত ব্যক্তিদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। এ মাসে অক্টোবরের তুলনায় ৪৯ জন বেশি মারা গেছেন, যা শতকরা হিসাবে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের তুলনামূলক হিসাবে করোনা সংক্রমণ, সংক্রমণ হার ও মৃত্যু বাড়লেও এই পরিস্থিতিকেই করোনা সংক্রমণের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বা ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ বলছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ একটি স্থিতিশীল গণ্ডির মধ্যেই রয়েছে। তবে এই পরিস্থিতি নিজেই অত্যন্ত বিপৎজনক।

সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ওয়েভ নিয়ে চিন্তা করার আগেও জরুরি আমাদের সবার সচেতন হওয়া। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে গা ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করেন করোনা নেই। করোনা নিয়ে আরও কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। সেগুলো কাটিয়ে জনগণকে সচেতন করে তোলা জরুরি।

তিনি বলেন, অনেক দেশেই কিন্তু শীত এবং তাদের সংক্রমণ বাড়ছে। অনেক দেশে নতুন করে লকডাউন দিতে হচ্ছে। এখন আমরা যদি সময়মতো সচেতন না হই, আমাদেরও কিন্তু লকডাউনের মতো ব্যবস্থায় আবার যেতে হবে। সেটি এড়াতে চাইলে সচেতন হতেই হবে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে

চলমান পরিস্থিতিতে সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা চলছে— সেটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু সারাবিশ্বের সব মানুষ ভ্যাকসিন না পাওয়া পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়। আর সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করাটা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ফলে তার আগ পর্যন্ত সবাইকে প্রচলিত পদ্ধতিতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

ডা. আবদুল্লাহ বলেন, সরকার সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষণায় আটকে না থেকে এটি যেকোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। সব স্তরের মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। সবাই মিলে জনগণকে সচেতন করে তুলতে না পারলে আমরা সংক্রমণের ঝুঁকিও কমাতে পারব না, দ্বিতীয় ঢেউও ঠেকাতে পারব না।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, দেশের জনগণ এখনো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না— এটি বিপজ্জনক হতে পারে। এ অবস্থায় আমাদের নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। দরকার হলে এলাকাভিত্তিক আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু সংক্রমণ বাড়ছে, ফলে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের বিকল্প নেই।

করোনা করোনা সংক্রমণ করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ দ্বিতীয় ঢেউ পরিসংখ্যান সংক্রমণ সেকেন্ড ওয়েভ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর