Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষায় উদার রাজনীতির বাংলাদেশ


১ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:২১

ঢাকা: দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে উদার রাজনীতির বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, জাতীয় সংকট ও প্রয়োজনে একতা জরুরি। আইনের শাসন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতারও তাগিদ দিয়েছেন তারা।

সোমবার (৩০ নভেম্বর) সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তরুণ প্রজন্মের গণমাধ্যমকর্মী ও ছাত্রনেতারা এসব কথা বলেন। সারাবাংলা ফোকাসের এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘কেমন বাংলাদেশ চাই’।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা ফোকাস সঞ্চালনা করেন সারাবাংলা ডটনেটের স্পেশাল করেসপনডেন্ট এমএকে জিলানী। আলোচনায় অংশ নেন চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের সিনিয়র রিপোর্টার মোর্শেদ হাসিব হাসান, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব মো. আমানউল্লাহ আমান। সারাবাংলা ডটনেটের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জিটিভিতে অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হয়।

আলোচনায় যুক্ত হয়ে গণমাধ্যমকর্মী মোর্শেদ হাসিব হাসান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি থেকে বাংলাদেশ এখনো কোনো শিক্ষা নিতে পারেনি। কেননা প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে। আগে বলা হয়েছিল একবার যার করোনা হবে, তার আর হবে না। সেটি ঠিক হয়নি। আবার বলা হলো— দুইবার যার করোনা হবে, আর জীবনেও করোনায় সে আক্রান্ত হবে না। কিন্তু দেখা গেল, কেউ কেউ তিন-চারবারও আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য খাতে প্রচুর সংকট রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এ দেশের পেশাজীবী সংগঠনগুলো দলীয় লেজুরবৃত্তি করে। চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী সবাই। কিন্তু সবাই মিলে সমন্বিতভাবে করোনা মোকাবিলায় কাজ করা উচিত ছিল। রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা থাকবে, কিন্তু পেশার ক্ষেত্রে তার কোনো প্রভাব পড়বে না— এমনটিই হওয়ার কথা ছিল।

এক প্রশ্নের জবাবে মোর্শেদ হাসিব বলেন, কেমন বাংলাদেশ চাই— এ নিয়ে যুদ্ধ এখনো চলছে। সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে মাথাব্যথা নেই। কারণ তারা জানে, যে দলই ক্ষমতায় আসুক পরিস্থিতি একই হবে। তবে আওয়ামী লীগ একটি ভালো কাজ করেছে, পরিকল্পনামাফিক এগুচ্ছে। অন্য দলগুলোও সেটি করতে পারে।

এখনকার সময়ে দায়িত্ব পেলে কোন কাজটি করতে চান— জানতে চাইলে এই গণমাধ্যমকর্মী বলেন, দায়িত্ব পেলে পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত রাখব।

ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, রাজনীতিতে মতভেদ থাকবে। তবে জাতীয় অনেক বিষয়ে ঐক্যবদ্ধতা প্রয়োজন। যেমন— মুক্তিযুদ্ধ, জনস্বাস্থ্য, শহিদদের রক্তের দায়বদ্ধতা পূরণ— এসব বিষয়ে একতাবদ্ধ হতে হবে। দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়েও রাজনীতি হয়েছে। জরুরি বিষয় হলো— জাতীয় অর্জন নিয়ে মতবিরোধ থাকাটা ঠিক নয়।

তিনি বলেন, কেমন বাংলাদেশ চাই— মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ জীবন দিয়ে এটি ফয়সালা করে গেছেন। তাদের আত্মত্যাগেই আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। এই পাতাকাকে সমুন্নত রাখতে হলে জাতীয় ঐক্যমত থাকতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা একটি চলমান প্রক্রিয়া। সব যে অর্জন হয়েছে, সেটি আমরা বলব না। কেননা স্বাধীন এ দেশে দীর্ঘ এক দশক সামরিক সরকার ক্ষমতায় ছিল। সংবিধান কাঁটাছেঁড়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা এখনো দলীয় রাজনীতির বাইরে যেতে পারি না। জাতীয় ঐক্যবদ্ধতার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ান অন্য রাজনৈতিক নেতারা। যে সময় বিশ্ব গণতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময় আমাদের ২১ আগস্টের রক্তের ইতিহাস পার করতে হয়েছে। পৃথিবীতে কোথাও পাবেন না, জাতির জনকের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) হত্যার বিচার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে বন্ধ করা হয়। এমন নির্লজ্জ রাজনৈতিক বক্তব্য তরুণ প্রজন্ম বরদাশত করবে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম বলেন, মানুষের জন্য কাজ করে যাব। এই মুহূর্তে দায়িত্ব পেলে শিক্ষা খাতে বরাদ্দে জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করব।

ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সাম্য, মানবিক বাংলাদেশ ও ন্যায় বিচারের জন্যই। আজ কোথায় আছে এসব? এক শ্রেণির মানুষের জন্য সাম্য ও ন্যায় বিচার আছে। এখন সবার জন্য ভোটাধিকার নেই।

তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে যার যেখানে অবদান, সেটি স্বীকার না করা। জাতির জনকের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) সময়ই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বীর উত্তম উপাধি পেয়েছিলেন। এখন সেটি উপেক্ষা করা হচ্ছে। সবাইকে বাদ দিয়ে একক ক্রেডিট নেওয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেক্টর কমান্ডার এ কে খন্দকার, জিয়াউর রহমান ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে রাজাকার বলা হয়। আমি মনে করি, যার যার যেখানে অবদান আছে সেটি স্বীকার করতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, একজনকে এবং একটি দলকে সবকিছুর কৃতিত্ব দেওয়াটা সঠিক নয়। জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। জেনারেল ওসমানী, শহিদ সোহরাওয়ার্দী ও ভাসানী— সবারই অবদান ছিল মুক্তিযুদ্ধে। কিন্তু দেখুন, ভাসানী নভোথিয়েটারের নাম পরিবর্তন করে আজ বঙ্গবন্ধুর নামে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের বাইরে কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন— সেটি স্বীকারই করছে না আওয়ামী লীগ। আজ নতুন প্রজন্ম ভোট দিতে ভুলে গেছে। আওয়ামী লীগের লোকজনও ভোট দেয় না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস শুধু আওয়ামী লীগের নয়। সব মানুষের অংশগ্রহণের ইতিহাস। তাই সবার অবদানকে স্বীকার করতে হবে।

বর্তমান সময়ে দায়িত্ব পেলে কী করবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে আমানউল্লাহ বলেন, এই মুহূর্তে দায়িত্ব পেলে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে সমন্বয় তৈরি করব।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, কেমন বাংলাদেশ চাই— তার সমাধান মুক্তিযুদ্ধের সময়ই হয়ে গেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এরকম শিরোনামে কথা বলতে হয়— এটা লজ্জার। করোনায় স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও সংকটের চিত্র উঠে এসেছে। রাজনীতির জায়গাগুলোকে অপরাজনীতির সঙ্গে মেলালে হবে না।

তিনি বলেন, অপরাজনীতির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ সরকার ভোটাধিকার হরণ করেই ক্ষমতায় এসেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে টোটাল সিস্টেমটাই ভাঙতে হবে। সরকারকে দমন-পীড়নের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। করোনাকালীন স্বাস্থ্য-শিক্ষা— কোনো খাতেই সরকার সমন্বয় করতে পারেনি। করোনার মধ্যেও শাহেদদের মতো মানুষরা বেরিয়ে আসছে। কিন্তু এদের পেছনে কারা আছে, সেটি বের হচ্ছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্র ইউনিয়নের এই নেতা বলেন, আমরা সবাই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে চাই। দেশের মানুষের জন্য এটা চাই। কিন্তু কথা হচ্ছে সুযোগটা কে দেবে? রাতে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজদের প্রতি, ধর্ষকদের প্রতি উদারতা দেখানো হচ্ছে। সবার জন্য আইনের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই।

এই মুহূর্তে দায়িত্ব পেলে কী করবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ উল্লাহ বলেন, এই মুহূর্তে দায়িত্ব পেলে মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করব।

গণমাধ্যমকর্মী মোর্শেদ হাসিব হাসান ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ছাত্রদল নেতা আমানউল্লাহ আমান ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসাইন টপ নিউজ তরুণ প্রজন্ম তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি সারাবাংলা ফোকাস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর