দেশে নতুন এইডস আক্রান্তদের ৭০ শতাংশই বিবাহিত
১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:২৫
ঢাকা: দেশে নতুনভাবে এইচআইভি এইডস শনাক্ত হয়েছে ৬৫৮ জনের শরীরে। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশ পুরুষ ও নারী ২১ শতাংশ ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী তিন শতাংশ। নতুনভাবে শনাক্ত হওয়া এইডস আক্রান্তদের মাঝে বিবাহিতরাই সবচেয়ে বেশি। এদের সংখ্যা ৭০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অবিবাহিতদের সংখ্যা ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। দেশে বর্তমানে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। তবে চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র আট হাজার ৩৩ জন। গত এক বছরে ১২৪ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে এইডসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ‘বিশ্ব এইডস দিবস-২০২০’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (টিবি-এল অ্যান্ড এএসপি) অধ্যাপক ডা. মো. সামিউল ইসলাম এ তথ্য জানান।
আলোচনায় জানানো হয়, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৯টি এইচআইভি এইডস ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ২১ লাখ ৩৩ হাজার।
অধ্যাপক ডা. মো. সামিউল ইসলাম বলেন, ‘গত এক বছরে ৬৫৮ জনের মাঝে এইচআইভি এইডস ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১২৪ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এই সময়ে এইডসে মৃত্যু হয়েছে ১৪১ জনের। দেশে এ রোগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৩৮৩ জন।’
তিনি জানান, নতুন আক্রান্ত ৬৫৮ জন পজিটিভ রোগীর মধ্যে পুরুষ ৭৬ শতাংশ, নারী ২১ শতাংশ ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী তিন শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে বিবাহিতরাই সবচেয়ে বেশি। এদের সংখ্যা ৭০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অবিবাহিতদের সংখ্যা ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।
ডা. সামিউল জানান, নতুন আক্রান্তদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ, ২৫ থেকে ৪৯ বছররের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৪ দশমিক ২০ শতাংশ, ১৯ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে দুই দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। ছয় থেকে নয় বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। এবং শূন্য থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এক দশমিক ৮৮ শতাংশ।
তিনি জানান, নতুনভাবে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২১৮ জন, চট্টগ্রামে ১২৭ জন, খুলনা বিভাগে ৬৪ জন, সিলেট বিভাগে ৪৫ জন, বরিশাল বিভাগে ২৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৫ জন ও রংপুর বিভাগে ১৫ জন রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, দেশে এখনও সাধারণ জনগণের মধ্যে সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশের নিচে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, সমকামী ও হিজড়াদের মধ্যে সংক্রমণের হার দুই শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। যা আগে ২৫ শতাংশের উপরে ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর বিশ্ব পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বের মোট এইডস আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে নতুন আক্রান্ত হয়েছে এক কোটি ৮০ লাখ। মৃত্যু হয়েছে ছয় লাখ ৯০ হাজার মানুষের। এদের মধ্যে চিকিৎসার আওতায় এসেছে দুই কোটি ৫০ লাখের কিছু বেশি।’
ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, ‘সারাদেশে ২৩ জেলার ২৮টি হাসপাতালে এইচআইভি টেস্ট চলছে। জিন এক্সপার্ট মেশিন এইচআইভি ভাইরাস শনাক্তে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য) মো. মোস্তফা কামাল প্রমুখ।
