অক্টোবরের চেয়ে ৩ গুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত নভেম্বরে
২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:৫৪
ঢাকা: দেশে চলতি বছর এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ অন্যান্য বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর শেষে কমতে শুরু করলেও এ বছর নভেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা গাণিতিক হারে বেড়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গু সংক্রমণ কম হলেও অক্টোবর মাসে দেশে ১৬৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। তবে নভেম্বরে মাসে মোট ৫৪৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। যা আগের মাসের তুলনায় ৩ দশমিক ৩৫ গুণ বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে যদি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে তবে তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে কর্মসূচি ও জনগণের মাঝে সচেতনতা খুবই জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, সোমবার (৩০ নভেম্বর) সকাল আটটা থেকে থেকে মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সময়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০ জন। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী পরিচালক ডা. মো. কামরুল কিবরিয়ার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর ২০১৯ সালের জুন মাসেই ব্যাপকভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। ডেঙ্গু সংক্রমণ অব্যাহত থাকে জুলাই মাসেও। আগস্ট মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। পরে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসেও দেশে ১৯৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসে। ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। পরবর্তী সময়ে মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। অক্টোবর মাসে ১৬৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু নভেম্বরে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই মাসে সর্বমোট ৫৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, জেলা শহরগুলোর মধ্যে চলতি বছর যশোরে সর্বোচ্চ ৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯৪ জন চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে রাজধানীতেই চিকিৎসাধীন ৮২ জন। রাজধানীতে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এছাড়াও রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ১৪১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে ঢাকা ছাড়া এই বিভাগের অন্যান্য জেলায় ৪২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। খুলনা বিভাগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, বরিশাল বিভাগে তিনজন, সিলেট ও রাজশাহী বিভাগে একজন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। রংপুর বিভাগে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি চারটি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর প্রায় পুরোটা সময় আসলে কোভিড-১৯ নিয়েই সবার চিন্তা ছিল। এটি নিয়ে ভাবতে গিয়ে অন্যান্য রোগের বিষয়ে আসলে তেমন আলোচনা হয়নি। তবে ডেঙ্গু রোগ এখন বাড়ছে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এটা বলা যেতে পারে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু রোগীর শনাক্ত বাড়ছে। কারণ ডেঙ্গু পিক টাইমে কিন্তু অনেকেই হাসপাতালে যায়নি কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে। আসলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যেতে হবে সারাবছর। এর কোনো বিকল্প নেই। সমন্বিতভাবে বিভিন্ন সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।’
চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে মার্চ মাসে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার পরে একটা সময় পরে চলাচল সীমিত করে দেওয়া হয়। সে সময় আসলে মানুষজন সেইভাবে হাসপাতালে যায়নি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষজন হাসপাতালে যাচ্ছে। আর এ কারণে হয়তোবা এই সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এর মানে এই নয় যে, অন্য সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম ছিল। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে বছরব্যাপী কাজ করে যেতে হবে।’