Wednesday 17 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অপরাজেয় গাজী গ্রুপকে হারিয়ে দিল টাইগার ক্রিকেট!


২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:৫১ | আপডেট: ২ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৪৯
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে মাঠের ক্রিকেটে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে এখনো হারাতে পারেনি কেউ। বরং যতোগুলো দল তাদের সামনে পড়েছে প্রতিটিকেই ব্যাটে-বলে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে দলটি। অথচ সেই গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামই কিনা হেরে গেল একটা ওয়েবসাইটের কাছে!

ভুল পড়ছেন না, এটিই সত্যি। বঙ্গবন্ধু টি টোয়েন্টি কাপে যে দলটি টানা তিন জয়ে উড়ছে, যে দলের পারফরম্যান্সে বুঁদ হয়ে আছে গোটা দেশের ক্রিকেট ভক্তরা, সেই দলটিকেই কী না হারিয়ে দিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অফিসিয়াল ওয়েবসাইট টাইগার ক্রিকেট ডট কম! মাঠের পারফরম্যান্স নয়, কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের দুর্বার দলটি হেরে গেছে ওয়েবসাইটটির ভুলে ভরা তথ্য ও ‍উপাত্তের ডামাডোলে!

বিজ্ঞাপন

গত পরশু রাতের ম্যাচের কথা। টুর্নামেন্টের অষ্টম ম্যাচে বেক্সিমকো ঢাকার প্রতিপক্ষ ছিল জেমকন খুলনা। যেখানে মুশফিকের ঢাকার বিপক্ষে ৩৭ রানের জয়ে মাঠ ছাড়ে মাহমুদউল্লাহ-সাকিবের খুলনা। কিন্তু টাইগার ক্রিকেটের স্কোরকার্ড দেখলে ওই ম্যাচের ফল বুঝা সম্ভব নয়। ম্যাচ হেরেছে খুলনা, কিন্তু টাইগার ক্রিকেটে লেখা ৩৭ রানে হেরেছে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। আবার ঢাকার স্কোর বর্ণনায় দেওয়া হয়েছে খুলনার স্কোর বর্ণনা। স্কোর বর্ণনায় খুলনার নামই নেই। যেখানে জেমকন খুলনা লেখা থাকার কথা ছিল সেখানে লেখা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম!

প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া অবান্তর নয়, এখানে গাজী গ্রুপ কী করে এল? ওই দিনের প্রথম ম্যাচেই তো ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ১০ রানে টুর্নামেন্টের তৃতীয় জয় তুলে নিল বন্দর নগরীর দলটি। তাহলে কী ইদানিং ক্রিকেটে এক ম্যাচে তিনে দল খেলছে? নাকি রাতারাতি ক্রিকেটের নিয়মকানুন বদলে ফেলেছে আইসিসি? অথবা গাজী গ্রুপকে মাঠের বাইরে হারিয়ে দিতেই এমন আয়োজন?

ধরেই নিচ্ছি এর কোনটিই নয়। তাহলে দোষটা কার? অবধারিতভাবেই তা টাইগার ক্রিকেটের উপরে গিয়ে বর্তায়। আরো নির্দিষ্ট করে বললে স্কোর ইঞ্জিন ও এর চালকদের উপরে। তাদের অদক্ষতাই এমন মর্মান্তুদ ভূলের মূল কারণ। যা একদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গৌরবোজ্জ্বল ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে, অন্যদিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তাদের ডিজিটালাইজেশনের মনোভাব ও দক্ষতা।

টাইগার ক্রিকেটের এহেন দীনতা অবশ্য নতুন কোন বিষয় নয়। কালের বিবর্তনে মাঠের উড়ন্ত পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ ক্রিকেট আজ এশিয়ার পরাশক্তি হয়ে উঠলেও বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটি কিন্তু এখনো সেই সেকেলে! নেই কোন লাইভ স্কোরিং সিস্টেম, যাও আছে দুর্বল। প্লেয়ার্স প্রোফাইল নেই, আন্তর্জাতিক তো বটেই বাংলাদেশের হয়ে স্বীকৃত ঘরোয়া ক্রিকেটও যারা খেলেছেন তাদের সবারই প্রোফাইলও এখানে থাকা উচিত কিন্তু নেই। এগুলো না থাকায় কোন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের পরিসংখ্যানও এখানে মেলে না।

একটি ভিডিও এবং ফটো আর্কাইভ নেই! টেক্সট আর্কাইভ আছে কিন্তু মান সম্মত নয়। ধরেন আপনার মনে চাইল ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোন ম্যাচের ভিডিও ফুটেজ দেখবেন। হলফ করে বলতে পারি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাবেন না। কারণ নেই। আবার কখনো মনে হল, আপনি বাংলাদেশের ওয়ানডে কিংবা টেস্ট হ্যাটট্টিকগুলো দেখবেন। এবং সেজন্য বেশ আয়োজন করে টাইগার ক্রিকেটে ঢুকলেন, এবারও মন খারাপ করে ফিরে আসবেন। কারণ ওই একটিই, নেই।

এতো গেল ভিডিও আর্কাইভ। এবার আসি ফটো আর্কাইভ প্রসঙ্গে। ধরেন আপনি কোন সিরিজ বা ইভেন্টের নাম লিখে ফটো চাইছেন অথবা ২০১৬-১৭ মৌসুমে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের ফটো বা ওই ম্যাচের স্কোর দেখতে সাইটে ঢু মারলেন। তাকেও ভঙ্গুর মনে ফিরতে হবে।

এবার আসি সাইটের ডিজাইন প্রসঙ্গে; ভীষণ ম্যারম্যারে এবং হালের আধুনিকতার ছোঁয়া এখানে উধাও। চকিতেই মন খারাপ হয়ে যাবে। অভিযোগ আছে, সাইটের গতি নিয়েও- নিদারুণ মন্থর। একটি তথ্য পেতে আপনাকে মিনিটের পর মিনিট ডেস্কটপ, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রাখতে হবে। এক পর্যায়ে আপনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং ভেঙে যেতে পারে ধৈর্য্যের বাঁধ। শুধু তাই নায়, অনেকের মতে ম্যাচ অফিসিয়ালদের পরিসংখ্যানও সাইটে থাকা উচিত যা অনুপস্থিত। এছাড়া সাইটটি ব্যবহার বান্ধরবও নয়।

পক্ষান্তরে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কিংবা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) ওয়েবসাইটে আপনি নিমিষেই তথ্যগুলো পেয়ে যাবেন। দুই বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গেলে আপনি বছর অনুযায়ী যাবতীয় এসব তথ্য উপাত্ত নিমিষেই সামনে এসে যাবে। ভিডিও, টেক্সট ও ফটো আর্কাইভও বেশ সমৃদ্ধ। সাইটের গতি মন্থর নয়, ব্যবহারও বেশ সহজ। আর স্কোর ইঞ্জিনের ভুলভালের বালাই একবারেই নেই।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তো ধনী বোর্ড নামে সুনাম আছে। তাহলে কেন আজও তারা নির্ভুল, মান সম্মত ও সহজে ব্যবহারযোগ্য একটি সাইট তৈরী করতে পারল না? কেন আজও ভুলে ভরা স্কোর দেখতে হয়? কেন আজও দক্ষ স্কোর ইঞ্জিন চালক নিয়োগ দিতে পারল না?

টাইগার ক্রিকেট ডট কমের অতি সাম্প্রতিক সময়ে এই ভুল নিয়ে বিসিবি’র ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের ম্যানেজার নাসির উদ্দিন আহমদ নাসু’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘এমন তো হওয়ার কথা নয়। কোন ভুল হয়ত হয়েছে। আমি দেখছি। একটু চেক করতে হবে।’

তবে আম্পায়ার্স কমিটির সেক্রেটারি সয়লাব হোসেন টুটুল শোনালেন অন্য কথা। তার ভাষ্যমতে সম্প্রতি টাইগার ক্রিকেটে নতুন একটি সফটওয়্যার ইনস্টল করা হয়েছে। ফলে তা অপারেশনে কিছুটা ভুল হয়ত হতে পারে বলে মত তার।

‘সত্যি বলতে বিষয়টি আমি জানতাম না। তবে জেনে ভাল হল। আসলে আমার এখানে ১০ জন স্কোরার কাজ করছে। ওদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে, আমার মনে হয় স্কোরিংয়ে শুদ্ধতা আনা সম্ভব। নতুন সফটওয়্যার ইনস্টল করা হয়েছে সেকারনে হতে পার। আমি দেখছি।’

আর টাইগার ক্রিকেট ডট কমের ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা কন্টেন্ট ম্যাটার্সের হেড অব অপারেশন্স মো. নাজমুল আলম স্বরুপ জানালেন, ‘আমরা গত চার বছর ধরে বিসিবি’র স্কোর ইঞ্জিনটি বিসিবি’র পূর্ণ অনুমোদন সাপেক্ষেই ব্যবস্থাপনা করে আসছি। বিভিন্ন সময় এই স্কোর ইঞ্জিনটি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বিসিবিই সব চেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে! বিসিবি’র বিভিন্ন অফিসিয়ালরা সময়ে সময়ে ইনপুট দিয়ে এই স্কোর ইঞ্জিনটিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের ইঞ্জিনে রূপান্তরিত করতে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করেছেন। বিসিবি’র সমস্ত স্কোরার প্যানেলের সদস্যদের এই ব্যাপারে ট্রেইনও করা হয়েছে। এই স্কোর ইঞ্জিনটি বিগত সময়ে নির্ভুলভাবে স্কোরও দিয়ে আসছে। কিন্ত চলমান বঙ্গবন্ধু টি টোয়েন্টি কাপের আগে হটাৎ করেই আমাদের জানানো হয়েছে একেবারেই নতুন করে একটা স্কোর ইঞ্জিন বসানো হবে। এবং আমাদের স্কোর ইঞ্জিনটি আর ব্যবহার করা হবে না। তাই এই ভুল বা পুরো ব্যাপারটি নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা এটি পরিচালনা করছি না। আমাদের জানাও নেই কারা এটি করছে।’

একই বিষয়ে সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন ডেইলি নিউজ এর যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক আজাদ মজুমদারও। তার ভাষ্যমতে, ‘ডিজিটালাইজেশনের যুগে একটি প্রতিষ্টানের মুখবায়ব হচ্ছে তার ওয়েবসাইট। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান ওয়েবসাইট দেখে যে কেউই তাদের সম্পর্কে ভুল ধারণা পেতে পারে। কারণ এই ওয়েবসাইটটা মোটেও মানসম্মত নয় এবং এর ব্যবস্থাপনাও ভাল নয়। এর ফলে যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় তারা ওয়েবসাইটটি দেখলে ভুল ধারণা পোষণ করবে। কারণ তারা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে প্রথম দেখে বিসিবি’র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে, শের-ই-বাংলায় এসে নয়। টাইগার ক্রিকেট ডট কমের উদ্যোগ এমন এক সময়ে নেয়া হয়েছিল যখন ভারত ক্রিকেট বোর্ডেরও ওয়েবসাইট ছিল না। উদ্যোগটা খুব ভাল ছিল কিন্তু এর সুফল বিসিবি কখনো পায়নি। এর আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে বিসিবিতে একটা নির্দিষ্ট মহল আছে যারা বিসিবি’র চেয়ে তাদের ভেন্ডরদের স্বার্থই বড় করে দেখে। ভেন্ডরদের লাভবান করতে গিয়ে বিসিবির মান নিয়ে তাদের মাথাব্যথা থাকে না। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর