মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে ভালোবাসা পাওয়া যায়: আইজিপি
২ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:১০
ঢাকা: পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘পুলিশ হবে দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত, জনগণের প্রতি মানবিক, বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে পুলিশি সেবা, জনসেবায় নিবেদিত পুলিশ সদস্যদের কল্যাণও নিশ্চিত করা হবে।’
আইজিপি তার এ পাঁচ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ইউনিটের পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি বুধবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ঢাকা রেঞ্জের ১৩টি জেলার পুলিশ সুপার ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে মতবিনিময় করেন।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা ও নির্যাতন করার কোনো সুযোগ নেই। জনগণের প্রতি যে কোনো প্রকার নির্দয় আচরণ বন্ধ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে হবে।’
মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় এ কথা উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘এর প্রমাণ করোনাকালে পুলিশ পেয়েছে।’
আইজিপি বলেন, ‘যেন কোনো প্রকার দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ না করতে হয়, সে জন্য বর্তমান সরকার সব সরকারি পেশাজীবীর সুযোগ-সুবিধা ও বেতনভাতা অনেক বাড়িয়েছে। তাই আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ জীবন-যাপন করতে হবে। পুলিশের কোনো সদস্য দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবে না।’
পুলিশ প্রধান বলেন, ‘পুলিশের কোনো সদস্য মাদক গ্রহণ করবে না, মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না।’
বিট পুলিশিংয়ের ব্যাপকতা ও গুরুত্ব উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সারাদেশকে ৬ হাজার ৯১২টি বিটে ভাগ করে বিট পুলিশিং চালু করা হয়েছে। এর ফলে বিট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও এলাকার প্রতিটি খানা সম্পর্কে জানতে পারবে, তাদের সমস্যা চিহ্নিত করতে পারবে। ফলে ওই এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও আইনি সেবা দেওয়া সহজ হবে।’
বর্তমান কল্যাণ ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে চাকরিরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসায় কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালগুলো আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। জেলা হাসপাতাল আধুনিকায়নের আওতায় আনা হচ্ছে। আটটি বিভাগে ক্যাডেট কলেজের আদলে উন্নতমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হবে।’
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে ধনী দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করছেন। উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হওয়ার জন্য নিজেদেরকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। নিজের টার্গেট সেট করতে হবে। অধঃস্তনদেরকে তৈরি করতে হবে। সংগঠনকে ভালোবাসতে হবে, সম্মান নিয়ে চাকরি করতে হবে।’
আইজিপি বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তিনির্ভর, জ্ঞানভিত্তিক পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তুলব। ফলে পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা আসবে, দুর্নীতি কমবে। মানুষ সহজে পুলিশের সেবা পাবে।’
আইজিপি বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পুলিশকে জনবান্ধব, মানবিক পুলিশ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশার পুলিশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে গড়ে তোলার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
রেঞ্জাধীন জেলার পুলিশ সুপারগণ বিভিন্ন বিষয়ে পুলিশ প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আইজিপি এসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
এর আগে, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) রেঞ্জের অপরাধ পরিস্থিতি, বিশেষ উদ্যোগ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পাসপোর্ট তদন্ত, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, মাদক মামলা, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি বিষয় আইজিপির সামনে তুলে ধরেন।
আইজিপি ঢাকা রেঞ্জের ইনোভেটিভ ও বিশেষ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আইজিপি, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণকে উপজীব্য করে রেঞ্জ চত্বরে নির্মিত ‘মুক্তির মহাকাব্য’ ম্যুরাল উদ্বোধন করেন। তিনি ঢাকা রেঞ্জে স্থাপিত আধুনিক অপারেশন্স কন্ট্রোল রুম অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার উদ্বোধন করেন। পুলিশি সেবা দ্রুত জনগণের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে রেঞ্জের ১৩টি জেলার ৯৬টি থানাকে এ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে থানার ডিউটি অফিসার, হাজতখানা ও সেন্ট্রি বক্সের কার্যক্রম সিসিটিভির মাধ্যমে সরাসরি মনিটর করা যাবে। রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের একজন অতি ডিআইজি’র নেতৃত্বে পরিচালিত হবে এ কন্ট্রোল রুম।