Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রথম দলের ১৬১৫ রোহিঙ্গা ভাসানচরে


৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:৫১

ঢাকা: কক্সবাজারের টেকনাফের শিবির থেকে প্রথম রোহিঙ্গাদের দলটি নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে। নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীর সাতটি জাহাজে করে যাওয়া প্রথম এই দলে রয়েছেন ১ হাজার ৬১৫ জন রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গারা এখন থেকে এখানে থাকবেন। তাদের জন্যই নোয়াখালীর হাতিয়ার এই ভাসানচরে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আবাসন ব্যবস্থা, যেখানে রয়েছে শহরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়ে দুপুর ২টার দিকে রোহিঙ্গাদের বহনকারী সাতটি জাহাজ পৌঁছায় ভাসানচরে। এসব জাহাজে মোট এক হাজার ৬১৫ জন রোহিঙ্গা রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে কতজন নারী, কতজন পুরুষ ও কতটি শিশু রয়েছে, সেই সংখ্যা জানা যায়নি।

নৌবাহিনী সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীর সাতটি জাহাজ রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভাসানচরের পথে রওনা হয়। এর আগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‌্যাব) সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয় নৌবাহিনীর কাছে। সমুদ্রপথে যেতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। এছাড়া একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সক্রিয়ভাবে রোহিঙ্গা স্থানান্তরে কাজ করছেন।

নৌবাহিনী জানায়, রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও রোহিঙ্গাদের একটি দল ভাসানচর পরিদর্শন করার পর আগ্রহীদের এখানে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হলো। প্রথম ধাপে এক হাজার ৬১৫ জন রোহিঙ্গা এলেন ভাসানচরে।

এর আগে, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তত্ত্বাবধানে বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) টেকনাফের কুতুপালংসহ আরও কয়েকটি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের স্থলপথে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রামে। সেখানে পতেঙ্গায় রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করা হয় নৌবাহিনীর রেডি রেসপন্স বাথ, বিএফ শাহীন কলেজ গেট ও বোট ক্লাব এলাকায়। রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাশেই জেটিতে অপেক্ষমাণ ছিল কয়েকটি জাহাজ। শুক্রবার সকালে সেই জাহাজগুলো রোহিঙ্গাদের নিয়ে রওনা হয়।

বিজ্ঞাপন

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সরকার ও সামরিক বাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িতে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনার শিকার হয়ে রাখাইন ছেড়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন রোহিঙ্গারা। প্রাণে বাঁচতে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এলে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় অস্থায়ী ক্যাম্প করে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়।

রোহিঙ্গাদের স্বভূমে ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও দেশটিতে ফেরত পাঠানো যায়নি। সরকার বলছে, মিয়ানমার সরকারের অনাগ্রহের কারণেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের একাধিক উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।

এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয় সরকার। জাতিসংঘ বলে আসছিল, ইচ্ছার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের যেন কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো থেকে সরানো না হয়। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সরকার জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করেনি বলেও জানানো হয়। তবে সরকার বলছে, রোহিঙ্গাদের এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া তাদের সম্মতিতেই হচ্ছে এবং ভাসানচরেও সরকার রোহিঙ্গাদের আধুনিক জীবনযাপনের সব ব্যবস্থা রেখেছে।

সরকার বলছে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া হয়েছে। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

নৌবাহিনী ভাসানচর ভাসানচরে স্থানান্তর রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা স্থানান্তর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর