সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি বাস্তবায়ন শিগগিরই, রেশন নিয়ে জটিলতা
৫ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:২০
ঢাকা: মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি, বিভিন্ন পদের নাম পরিবর্তন ও পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি তাদের রেশনের দাবির বিষয় নিয়েও ভাবছে সরকার। তবে এই রেশন প্রদানের ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক জটিলতা। আর এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়েরও রয়েছে দ্বিমত। কিন্তু সরকার তাদের অন্যান্য যৌক্তিক দাবি নিয়ে কাজ করছে বলে প্রশাসনের দায়িত্বশীল এক সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, সারাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে সরকারের কাছে যেসব দাবি-দাওয়া পাঠানো হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পর্যালোচনা শেষে যৌক্তিক দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করবে সরকার। এজন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি প্রতিনিয়ত কাজ করছে। বেশকিছু দাবি বাস্তবায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসংখ্য দাবির মধ্যে কয়েকটা আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারে সরকার। অন্যসব দাবি আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন হতে পারে বলে সূত্রটি আভাস দিয়েছে।
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মচারীদের সমস্যা চিহ্নিত করার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে মন্ত্রণালয়। অনেক সমস্যা ইতোমধ্যে সমাধান করা হয়েছে। তবে সব দাবি কিংবা সমস্যা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এককভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে না। অনেক দাবি রয়েছে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব (সারসংক্ষেপ) পাঠাতে হয়। এরই মধ্যে অনেক প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্রগুলো বলেছে, সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যপরিষদ থেকে সরকারের কাছে দেওয়া নয় দফা দাবি নিয়ে সোমবার (৭ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে ১১ থেকে ২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের বিনাসুদে ৫০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ, ব্লক পদে পদোন্নতির সুযোগ দিয়ে সব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিয়োগবিধি একমুখী করা, কমন নিয়োগবিধিতে পদসংখ্যা বাড়ানোসহ আন্তঃদফতর বদলি চালু, শতভাগ পেনশন সমর্পণ আগের মতো বহাল, পেনশনযোগ্য চাকরিকাল বর্তমানে প্রচলিত ৫ থেকে ২৫ এর স্থলে ৫ থেকে ২০ বছর এবং পেনশনের হার সর্বশেষ আহরিত বেতনের ৯০ শতাংশের জায়গায় ১০০ শতাংশে উন্নীত করাসহ আনুতোষিক ১ টাকায় ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এছাড়াও গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল, ঝুঁকি ভাতা, ওভারটাইম চালু, চিকিৎসা, শিক্ষা টিফিন ও যাতায়াত ভাতা বাস্তবসম্মতভাবে পুনর্নিধারণ, আউটসোর্সিং নিয়োগ বিলুপ্তসহ কর্মরতদের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং উন্নয়ন প্রকল্পে সাকুল্য বেতনভোগীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে বৈঠকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আলি কদর সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সচিবালয়ে কর্মরতদের অসংখ্য দাবি-দাওয়া রয়েছে। আর তাদের এই দাবিগুলো বাস্তবায়নে কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। তাদের যৌক্তিক দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। এ ব্যাপারে সরকারও আন্তরিক।’
এদিকে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যপরিষদের নেতা রহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জনপ্রশাসনের সচিব মহোদয়ের কাছে আমরা নয় দফা দাবি উপস্থাপন করেছি। দাবিগুলো সরকার বাস্তবয়ন করবে বলে আশা করি। শিগগিরই এ ব্যপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকতারা উইং প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ সর্ম্পকিত দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন প্রতিনিধি থাকবেন।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের অপর একজন কর্মকর্তা তার নাম গোপন রাখার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, সারাদেশের জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি দাওয়াসহ অন্যান্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। তাদের পাঠানো প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাইয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তার মতে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব দাবি বাস্তবায়ন সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘রেশন প্রদানের বিষয়টি নিয়ে সরকার ভাবছে। তবে এক্ষেত্রে জটিলতাও রয়েছে। রেশন দিতে গেলে যেমন লোকবলের প্রয়োজন, তেমনি অর্থেরও প্রয়োজন রয়েছে। আর এ সেক্টর চালু হলে দুর্নীতি বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্মচারীরা গাড়ি চেয়েছে। সরকারি চাকরি পদ অনুসারে যে কর্মকর্তা গাড়ি পাওয়ার যোগ্য তাকে গাড়ি দেওয়া হয়েছে। কর্মচারীদের গাড়ি দেওয়া কী সম্ভব?- এ রকম অনেক অযৌক্তিক দাবি রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’
কর্মকর্তা-কর্মচারী জটিলতা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দাবি রেশন সরকারি