নানা অজুহাতে থুতনিতে মাস্ক, কঠোর হচ্ছে প্রশাসন
৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:৩৮
ঢাকা: করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন বাজারে না আসা পর্যন্ত ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাস্ক ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে চিকিৎসকসহ বিশেষজ্ঞরা। তবে অনেকের মধ্যেই মাস্ক ব্যবহারে রয়েছে অনীহা। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে রাজধানীসহ সারাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অভিযানও চালিয়ে আসছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে সাধারণ মানুষ মাস্ক ঘরে রেখে বাইরে এসে নানা অজুহাত শোনাচ্ছেন প্রশাসনকে। কিছু মানুষ মাস্ক পরলেও সেটা তারা থুতনিতে রেখে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে কঠোর হচ্ছে প্রশাসন। ব্যাপক অভিযান চালানোর প্রস্তুতিও চলছে।
গত কিছুদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সুপারিশের ভিত্তিতে মাস্ক পরিধানে সচেতনতা আরও বাড়াতে ব্যাপক অভিযানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অভিযান চালানোর জন্য সর্বাত্বক প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। এ সপ্তাহ থেকে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক অভিযান শুরু হচ্ছে।
জানতে চাইলে র্যাব-৩ এর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মাস্ক ব্যবহার বেড়েছে। এখন অনেকেই সচেতন। আমরা এ সচেতনতার ওপরে আরও জোর দিচ্ছি। তবে একটা পর্যায়ে গিয়ে যদি তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা না যায়, সে ক্ষেত্রে জরিমানা বাড়িয়ে অভিযান আরও কঠোর করা হবে।’
অভিযানে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘নানা অজুহাত দিয়ে কিছু মানুষ মাস্ক ছাড়াই ঘর থেকে বের হচ্ছেন। আবার একশ্রেণির মানুষকে পাবেন যারা মাস্ক পরলেও সেটি থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখছে। এমন কিছু মানুষজনের জরিমানা করা হচ্ছে। তবে স্বাভাবিক জরিমানার চেয়ে এদের জরিমানা ডাবল করা হচ্ছে। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে আরো ব্যাপক হারে অভিযান আসছেও বলে’ যোগ করেন তিনি।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, সচেতনভাবে বিষয়টি অবহেলা করার জন্য এই ধরনের মানুষজনের দ্বিগুণ জরিমানা করা হচ্ছে।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জল হালদার বলেন, ‘শিক্ষিত শ্রেণির বেশির ভাগ মাস্ক ব্যবহার করলেও একটি অংশ মুখের নিচে অর্থাৎ থুতনিতে মাস্ক ব্যবহার করছেন। অশিক্ষিত ও অর্ধ শিক্ষিতদের মধ্যে যাদের মাস্ক নেই তাদের একবার মাস্ক ধরিয়ে দিলেই তারা সেটি ব্যবহার করছেন। সেটি নষ্ট বা হারিয়ে গেলে আর ব্যবহার করছে না। প্রতিদিন কিনে মাস্ক ব্যবহার করতে হয় এমনটা না কিনে ধুয়ে পড়া যায় সেরকম কাপড়ের মাস্ক কেনা উচিত।’ তিনিও অভিযান জোরদার করার ইঙ্গিত দেন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের রোগতত্ত্ব গবেষক ডা. কিঙ্কর রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার সংক্রামণ ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। প্রয়োজনে কঠোর অভিযানের মাধ্যমে এ অভিযান জোরদার করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘মার্কেটগুলোতে যেভাবে ভিড় বাড়ছে, বাসেও আগের মতো প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। মার্কেট ও বাসে দেখা গেছে অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছে না। এতে সংক্রমণ ভয়াবহভাবে বেড়ে যাবে বলে মনে করছি। যে কোনো মূল্যে এটি ঠেকাতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা জেলা প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে ডিএমপি, র্যাব, আনসারসহ সহযোগিতা চেয়ে সকলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাস স্টপেজ ও শপিং মলগুলোতে করোনা প্রতিরোধে সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরও চিঠি দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে। প্রয়োজনে সব জায়গায় অভিযান জোরদার করা হবে।’
ছবি তুলেছেন: সিনিয়র স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট হাবিবুর রহমান।