Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অবমাননা: দেশব্যাপী আ.লীগ ও সহযোগীদের বিক্ষোভ


৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:৫৮

ঢাকা: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অব্যাহত অপপ্রচার ও কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অবমাননার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদমুখর হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। এসব মিছিল ও সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারীদের হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়, তারা যেন বাড়াবাড়ি না করেন। একইসঙ্গে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর সাজা দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

প্রতিবাদ সমাবেশগুলোতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতির জনক একটি বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ছিল সবার জন্য কল্যাণকর একটি ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশে আজ মৌলবাদীদের হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা দেশের স্বাধীনতার চেতনার বিরোধিতা।

রোববার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর ঢাকার বিভিন্ন স্থানসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো এসব বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে। রাজধানীতে ফার্মগেট, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন স্থানে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামি দলের বিরোধিতার মধ্যে শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার নির্মাণাধীন একটি ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখ ও বাম হাতের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলা হয়।

এর প্রতিবাদে শনিবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ আহ্বান করেন। এর ধারাবাহিকতায় রোববারও ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এর মধ্যে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও ধানমন্ডিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

রোববার কুষ্টিয়াতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ জেলা নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এসময় হানিফ কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবেই। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর যারা আঘাত করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, তাদের কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। যে বা যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে এবং মদত দিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এদিন বিকেল ৩টায় ঢাকা মহানগর উত্তরের ৬৫টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে একযোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের দফতর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সাংগঠনিক ওয়ার্ডগুলোর সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও এস এম মান্নান কচি সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, একাত্তরের শক্তিরাা ঐক্যবদ্ধ হলে পালাবারও পথ পাবেন না। সময় থাকতে নিজেদের শুধরে নিয়ে সোজা পথে আসুন।

কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে যুবলীগ। বিকেল ৩টায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও ফার্মগেটসহ সারাদেশে একযোগে এসব বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশের নির্দেশে ফার্মগেটের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে প্রধান অতিথি ছিলেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। তিনি বলেন, অবিলম্বে মামুনুল হককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ওই ধর্মান্ধ-মৌলবাদী-প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী, যারা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি, তারা আবারও মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। অবিলম্বে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে হামলাকারী ও হুকুমদাতাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে নেতৃত্ব দেন যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতারা। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, মো. রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বাদশা, মো. রফিকুল ইসলাম সৈকত জোয়ার্দার, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান সোহাগ, জহির উদ্দিন খসরু, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দফতর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন পাভেল, ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনউদ্দিন রানা, উত্তর সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজাসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।

এদিকে, বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর তিতুমীর কলেজের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত প্রতিবাদে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক ও বাবুনগরীসহ অন্যদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে মহাখালীতে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ। তিনি বলেন, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের অন্যতম মূলমন্ত্র। স্বাধীনতার পরাজিত শত্রু এবং পঁচাত্তর ও ২১ আগস্টের খুনি চক্র একই সূত্রে গাঁথা। তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা উচ্ছেদের হুমকি দিয়ে যে সীমাহীন ধৃষ্ঠতা ও আস্ফালন দেখাচ্ছে, এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, বাংলাদেশ কিভাবে চলবে, সেটা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়। এটা মীমাংসিত ইস্যু। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর ও সংবিধানের অন্যতম মূলমন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে ভ্রান্ত ফতোয়া দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানে প্রতিরোধ করা হবে।

কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য অবমাননা ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। সংগঠনের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও বিভিন্ন ইউনিট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। মিছিল থেকে ‘শিবিরের চামড়া, তুলে নেব আমরা’, ‘লাল সবুজের পতাকায় মুজিব তোমায় দেখা যায়’, ‘মৌলবাদের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’— এসব স্লোগান দেওয়া হয়।

মিছিল শেষে সমাবেশে ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের প্রতিটি জনগণের হৃদয়ের অবস্থান করছেন। ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে জনগণের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে দূরে রাখা যাবে না। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মকে পুঁজি করে অরাজকতা তৈরি করছে।’

তিনি বলেন, ‘এদের উদ্দেশ্য একটিই। একাত্তর সালেও তারা এ দেশকে অস্বীকার করেছিল। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ধর্মের নাম করে অশান্তি তৈরি করলে এক চুলও ছাড় দেওয়া হবে না। ছাত্রলীগ সবসময় শান্তিতে বিশ্বাস করে।’ হেফাজত নেতা মামুনুল হকের উদ্দেশে জয় বলেন, ‘তোরা ফেসবুকে ওয়াজ মাহফিলে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিস। সামনে আয় তোদের দেখব।’

ছাত্রলীগ সভাপতি জয় বিক্ষোভ সমাবেশে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানান। এছাড়া ভাস্কর্য বিরোধিতাকারীদের কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করার জন্য সরকারসহ গোয়েন্দা সংস্থাকে অনুরোধ জানান জয়।

সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ইমোশন (আবেগ), সংবিধান, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ নিয়ে কথা বলার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে— এ কথা আপনাদের স্পষ্ট করতে হবে। ওহি নাজিলের মতো সকালবেলা হঠাৎ করে বলা শুরু করলেন ভাস্কর্য থাকবে না। আজব ব্যাপার! আপনাদের বারবার সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গতকাল আপনারা আপনাদের সীমা লঙ্ঘন করেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অনেক ধৈর্য ধরেছে। অনেক প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু এখন আর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিবাদে বিশ্বাস করবে না। আপনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’

সমাবেশে উপস্থিত থেকে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ।

আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ প্রতিবাদ সমাবেশ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিক্ষোভ মিছিল ভাস্কর্য বিরোধিতা যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর