Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতিতে কোরামিনের মতো কাজ করেছে’


৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০৬

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির মধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সহায়তা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। এই প্রণোদনা রীতিমতো দেশের অর্থনীতিতে কোরামিনের মতো কাজ করেছে বলে মনে করেন তিনি।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ দেশের অর্থনীতিতে কোরামিনের মতো কাজ করেছে। এই প্রণোদনার কারণে রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি না হলেও মাইনাস হবে না। বরং আমাদের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হব।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এফবিসিসিআই সহসভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক এসব কথা বলেন। ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানের এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রফতানি খাত’। সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর রাজনীন ফারজানার সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ।

আলোচনায় সিদ্দিকুর রহমান বলেন, করোনাকালে দীর্ঘ একমাস তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ থাকার পর নানা সমালোচনার পরও আমরা কারখানা খুলে দেই। কারখানা খোলার পর প্রমাণিত হয়েছে, কারখানা চালু করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। শ্রমিকরাও তখন কাজে করতে চেয়েছিল।

তিনি বলেন, অনেক বুদ্ধিজীবী ঢালাওভাবে মন্তব্য করছেন— তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। কিন্তু তা সত্য নয়। করোনাকালে কোনো কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই হয়নি, বরং প্রধানমন্ত্রীর এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর কারখানা চলেছে। এই প্রণোদনা কোরামিনের মতো কাজ করছে। দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এই প্রণোদনা বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় প্রণোদনা বাস্তবায়নে ব্যাপক সহায়তা করেছে।

বিজ্ঞাপন

তৈরি পোশাক খাতের কারখানাগুলোর মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক এই সভাপতি বলেন, আমাদের মোট রফতানির ৮৪ শতাংশ ইউরোপে হয়। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও কানাডায় ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ পণ্য রফতানি রফতানি হয়। করোনাকালেও আমাদের রফতানির যে ধারাবাহিকতা রয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে আমাদের এ বছর রফতানিতে প্রবৃদ্ধি না হলেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি (মাইনাস গ্রোথ) হবে না। এটাই আমাদের বড় অর্জন হবে।

এফবিসিসিআইয়ের এই সহসভাপতি বলেন, কাঁচা চামড়া আমরা রফতানি করতে চাই না। কারণ আমাদের কারখানায় কাঁচা চামড়া কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি কারখানাগুলো সাভারে স্থানান্তর করার কারণে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। কারণ সাভারে ইপিটি, সিপিটি প্রস্তুত না করে যেখানে যাওয়ার কারণে চামড়া খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপ্রস্তুত অবস্থায় সেখানে যাওয়ার কারণে উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে বায়াররা অন্য দেশে চলে গেছে। চামড়া শিল্পটাকে আমরা হাতে ধরে, গলা টিপে হত্যা করেছি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় জোন হলো মীরসরাই জোন। কিন্তু সেখানেও শতভাগ অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়নি। ফলে ইকোনমিক জোনের বাইরে শিল্প কারখানা করা যাবে না। এই মুহূর্তে এটা করা হলে অনেক সমস্যা হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাতের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমারা অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছি। বর্তমানে বিশ্বের সেরা ১২টি কারখানা বাছাই করা হলে বাংলাদেশের সাতটি কারখানা সেখানে স্থান পায়। ফলে আমাদের সম্ভাবনা অনেক। আমাদের পণ্যর গুণগত মান যাচাই করলে ৯৫ শতাংশ ভালো পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এ ক্ষেত্রে চীনের ৬০ শতাংশ ও তুরস্কের মাত্র ৪৫ শতাংশ পণ্য ভালো হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে অনেক দ্রুত সময়ে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এ কারণে আমাদের রফতানি খুব একটা কমেনি। আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা রয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে।

শামস মাহমুদ বলেন, বর্তমানে বিশ্বের পাটপণ্যর চাহিদা বাড়ছে। কাঁচামাল হিসেবেও কাঁচা পাট রফতানি হচ্ছে। এছাড়াও আমাদের আইটি খাত, চামড়া, ওষুধ শিল্পে রফতানির ক্ষেত্রে নতুন সম্ভবনা রয়েছে। করোনাকালীন মানুষের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমে গেছে। ফলে আমাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও কিছুটা কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে।

ঢাকা চেম্বারের এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আমাদের এসএমই খাতের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমাদের লিংকেজ পলিসি গত ৩০ বছরেও করা হয়নি। আমাদের অনেক পণ্য চীন থেকে আনলে ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয় না। কিন্তু ধোলাইপাড় থেকে আনলে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। তাই যদি হয়, তাহলে আমাদের এসএমই খাত কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে?— প্রশ্ন রাখেন তিনি।

শামস মাহমুদ আরও বলেন, আমাদের কারিগরি শিক্ষা খাতের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের উদ্যেক্তা তৈরি করতে হবে। তাহলেই আমাদের নতুন নতুন সম্ভবনাও তৈরি হবে।

এফবিসিসিআই করোনা মহামারি করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ ডিসিসিআই বিজিএমইএ শামস মাহমুদ সারাবাংলা ফোকাস সিদ্দিকুর রহমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর