কমে আসছে খাদ্যের মজুত, ১ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত
৮ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৫৬
ঢাকা: কমে আসছে সরকারি খাদ্যগুদামে থাকা ধান-চাল মজুতের পরিমাণ। দফায় দফায় বন্যা, ঘুর্ণিঝড় আর মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণে সহায়তা বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার ধান-চালের মজুত অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সময়ে এমনিতেই মজুতের পরিমাণ কমই থাকে। তবে এবার আশানুরূপ বোরো সংগ্রহ না হওয়ায় মজুত গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যদিও এরই মধ্যে আন্তজার্তিক বাজার থেকে এক লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির টেন্ডার দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি গুদামে খাদ্য মজুতের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিকটন চাল আর গম ২ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিকটন। ২০১৯ সালের নভেম্বরে খাদ্য মজুদের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ মেট্রিক টন। এই পরিস্থিতিতে এক লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির টেন্ডার দিয়েছে সরকার।
এদিকে চলতি আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সাড়ে আট লাখ মেট্রিক টন ধান-চাল কেনার কর্মসূচি শুরু হয়ে গেছে। কেজিপ্রতি ২৬ টাকা দরে দুই লাখ মেট্রিক টন ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা প্রতিকেজি দামে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। গত ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ উদ্যোগে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৯০ মেট্রিক টন আমন সিদ্ধ চাল আর ধান ১০ মেট্রিক টন।
জানা গেছে, বোরো মৌসুমের মত আমন সংগ্রহেও চালকল মালিকদের আগ্রহে ঘাটতি রয়েছে। দেশের কুষ্টিয়া ও নওগাঁ থেকে সবচেয়ে বেশি ধান চাল সংগ্রহ হয়ে থাকে। এবার সেসব জেলা থেকে ধান চাল সংগ্রহে চালকল মালিকদের কাছ থেকে সারা মেলেনি। কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ধানের উৎপাদন ভালো হলেও বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে কেজিপ্রতি ৩৭ টাকা দরে চাল সংগ্রহ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’
অন্যদিকে নওগাঁ জেলার চালকল মালিকরা জানিয়েছে, তারাও সরকারের ধান-চাল সংগ্রহে অংশ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ধান-চাল সংগ্রহে বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় না করলে এবারও এ উদ্যোগ ব্যর্থ হবে বলে মনে করেন নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন।
এর আগে গত ২৫ নভেম্বর বগুড়া শহরের একটি রেস্ট্রুরেন্টে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয় যে, সরকারকে এবার তারা ধান-চাল সংগ্রহে সহযোগিতা করতে পারবে না। এর কারণ হিসেবে বাজারে চালের বর্তমান দামের অসামঞ্জস্যতাকে দায়ী করেন তারা। বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি চালের দাম ৪০ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত ৩৭ টাকা ধরে চাল সংগ্রহ করতে চাওয়ায় তারা অনীহা প্রকাশ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
খাদ্যের মজুত বাড়াতে চলতি বোরো মৌসুমে বিগত সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ২০ লাখ মেট্রিক টন ধান ও চাল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু বিদ্যমান বাজার মূল্যের তুলনায় সরকারি সংগ্রহের দাম কম হওয়ায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক ধান-চালও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য মন্ত্রণালয়। এমনকি চলতি আমন মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না শঙ্কায় এরই মধ্যে এক লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির দরপত্র আহ্বান করেছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সরকারই এ চাল আমদানি করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাজারে বড়ধরনের সংকট তৈরি হলে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে এক লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ বুঝে যদি চালের বাজার ঠিক হয়ে আসে তাহলে আমদানির সিদ্ধান্ত বাতিলও হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর।
খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুমে যে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ হবে না। তাই আমরা আমদানির প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এরই মধ্যে এক লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে কি পরিমাণ আমদানি করা হবে তা নির্ভর করছে আমন সংগ্রহের ওপর।’
উল্লেখ্য, এবার কয়েকদফা বন্যা এবং করোনা মহামারীর কারণে সরকারের মজুত থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্য সহায়তা দিতে হয়েছে। পাশাপাশি খোলাবাজারে চাল বিক্রির উদ্যোগও চলমান ছিল।