বেটার ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশকে এশিয়ান টাইগারে পরিণত করবে— ডাচ দূত
৮ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:২৯
ঢাকা: অর্থনীতিতে এশিয়ান টাইগারে পরিণত হওয়ার সক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারওয়াজ। এর জন্য বাংলাদেশের ‘বেটার ব্র্যান্ডিং’ প্রয়োজন বলে মত তার।
ডাচ রাষ্ট্রদূত বলেন, কৃষি ও হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। চলমান করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির মধ্যে বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বজায় রেখেছে, সেটাই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে প্রচুর কর্মশক্তি রয়েছে। এই কর্মশক্তি কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ নিডস বেটার ব্র্যান্ডিং। আর এই ব্র্যান্ডিং করতে পারলেই বাংলাদেশ অর্থনীতিতে এশিয়ান টাইগারে পরিণত হবে।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত দুই দিনব্যাপী (৮-৯ ডিসেম্বর) ভার্চুয়াল বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দিনে মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) ডাচ উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবক এবং অংশগ্রহণকারীরা এমন মন্তব্য করেন। পাশাপাশি ডাচ উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকরা বাংলাদেশের কৃষি ও হালকা প্রকৌশল খাতে অধিকতর সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
ভার্চুয়াল বিনিয়োগ সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারওয়াজ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ৫০ বছরের। দুই দেশই বিভিন্ন সময়ে নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করেছে, যা নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করেছে। চলমান করোনার মধ্যেও বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত রেখেছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশ বিদেশিদের জন্য ব্যবসা করার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। দেশটির যে পরিমাণ কর্মশক্তি ও সম্ভাবনা রয়েছে, তা ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে অচিরেই অর্থনীতিতে দেশটি এশিয়ার টাইগারে পরিণত হবে। এ জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন বেটার ব্র্যান্ডিং।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ’র সঞ্চালনায় প্রথম অধিবেশনে বাংলাদেশের কৃষি-খাদ্য খাতে ডাচ বিনিয়োগ আকৃষ্টের বিষয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। দুই দেশের সংশ্লিষ্ট পাঁচ জন মুখ্য ব্যক্তিত্বের উপস্থাপনায় এ খাতে সম্ভাব্য ডাচ উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক ও বিনিয়োগকারীরা কিভাবে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়।
আলোচকরা অভিমত জানান, বাংলাদেশের কৃষির বিভিন্ন খাত, বিশেষ করে পোল্ট্রি, ডেইরি এবং মৎস্য খাতের উন্নয়নে ডাচদের উন্নত প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। আলু, টমেটো, পেঁয়াজসহ অন্যান্য সবজির উন্নত মানের ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধী শস্য বীজ সরবরাহ, শস্য আহরণ পরবর্তী ক্ষতি হ্রাস, পশু খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিতকরণ, মাটির উর্বরতা বজায় রাখা ইত্যাদি বিষয়ে ডাচ উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ খাতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, স্মার্ট ফার্মিং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি স্থানান্তরে ডাচ প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতার ইঙ্গিত দেন।
দ্বিতীয় অধিবেশনে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের খাত সংশ্লিষ্ট মুখ্য ব্যক্তিত্বের উপস্থাপনায় এ খাতে সম্ভাব্য ডাচ উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক ও বিনিয়োগকারীরা কিভাবে আরও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়। দেশব্যাপী বিস্তৃত ৪০ হাজারেরও বেশি হালকা প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ডাচ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যক্তারা সহজে যুক্ত হতে পারেন। দেশের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর চাহিদা বিবেচনায় ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস, বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাইসাইকেল ইত্যাদি খাতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডাচ উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারেন। তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন পশ্চাৎমুখী শিল্প যেমন— পানি শোধনাগার, ওয়াশিং প্ল্যান্ট, প্রিন্টিং মেশিন স্থাপনেও ডাচরা সরাসরি বিনিয়োগ করতে পারে। পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, ইয়ার্ন পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ, গার্মেন্টসের বর্জ্য পরিশোধন, ফ্যাশন ডিজাইন প্রভৃতি সেক্টরে ডাচ উদ্যোক্তারা সহজেই যুক্ত হতে পারেন বলেও জানানো হয়।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, এই বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সরাসরি যোগাযোগ ও নতুন সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের পাশাপাশি ব্যবসা সংক্রান্ত ডাচ সরকারের শীর্ষ সংস্থা দূতাবাসের এই উদ্যোগের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংযুক্ত হয়েছে।
২ দিনব্যাপী সম্মেলন অর্থনীতি এশিয়ান টাইগার কৃষি ডাচ বিনিয়োগকারী ডাচ রাষ্ট্রদূত ভার্চুয়াল সম্মেলন হালকা প্রকৌশল হ্যারি ভারওয়াজ