Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নারী-পুরুষের সমান সুযোগ সৃষ্টি করেছি বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে’


৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:৩৬

ফাইল ছবি

ঢাকা: আমাদের মেয়েরা যাতে সমানভাবে এগিয়ে যেতে পারে সেটা নিশ্চিত করে দিয়েছি এবং সেইভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এই উদ্যোগের ফলে আজকে বাংলাদেশকে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের কাছে। অর্থনৈতি অগ্রগতি হচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচন করা হচ্ছে। আমাদের এই সমাজে যেহেতু নারী-পুরুষ সকলে সমান অধিকার নিয়ে তাদের কাজ করতে পারে, সেই সুযোগটা সৃষ্টি করেছি বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সমাজসেবায় বিভিন্ন অবদানের জন্য এ বছর পাঁচ নারীকে বেগম রোকেয়া পদক ২০২০ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার।

বেগম রোকেয়া পদক-২০২০-এর জন্য মনোনীত পাঁচ জন নারী ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা পদক, সনদ ও চেক প্রদান করা হয়। নারী শিক্ষায় প্রফেসর ড. শিরীন আখতার, পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কর্নেল (ডা.) নাজমা বেগম, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মঞ্জুলিকা চাকমা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বেগম মুশতারী শফি (বীর মুক্তিযোদ্ধা) এবং নারী অধিকারে অবদানের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার এ বছর বেগম রোকেয়া পদক লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার কাছ থেকে সম্মাননা পদক, সনদ ও চেক গ্রহণ করেন।

নারী জাগরণে বেগম রোকেয়ার অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জাতির পিতার নেতৃত্বে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর শিক্ষা, নারীর জাগরণ নারীর অধিকার সম্পর্কে জাতির পিতার অবদান স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আমাদের সচতেন করে গেছেন। শুধু এখন বলে না, তার যে বইগুলি সেখানেই আছে। এমনকি চীন ভ্রমনের কাহিনী। সেই ৫২ সালে তিনি চীনে গেছেন, সেখানে তিনি নারীদের অবস্থান দেখেছেন, সেখানেও তিনি নারী ক্ষমতায়নের কথা উল্লেখ করেছেন।

আজকে আমাদের মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা চাই আমাদের দেশের মেয়েরা সমানভাবে এগিয়ে যাক। কারণ বেগম রোকেয়াই আমাদের পথ দেখিয়ে গেছেন। আর একটা সমাজে যেখানে অর্ধাংশ নারী, একটা সমাজকে যদি উন্নত করতে হয়, যেখানে আমাদের অর্ধেকই প্রায়, অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অর্ধেকের বেশিও নারীদের দরকার, তারা সমানভাবে যদি নিজেদেরকে তৈরি করতে না পারে, তাহলে সেই সমাজ কিভাবে গড়ে উঠবে? বাংলাদেশকে আমরা উন্নত দেশ হিসাবে গড়তে চাই। কিন্তু সমাজের অর্ধাংশ আমরা যদি তাদেরকে এগুতেই না দেয় তাহলে তারা কি করে একটা সমাজ দাঁড়াতে পারে।

সমাজকে তো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হবে। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই স্বাধীনতার পর আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নেই। যার ফলে আজকে বাংলাদেশ আমি বলবো, যে নীরীদের ক্ষমতায়নে যথেষ্ট আমরা অগ্রগতি পেয়েছি।

নারীর ক্ষমতায়নে জাতির পিতার অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েদের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা এটা কিন্তু জাতির পিতা করে দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যদি সেই ব্যবস্থাটা না করতেন তাহলে অনেক মেয়েই সরকারি চাকরি পেত না। তারপরও আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম।’

১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশের পিছিয়ে যায়, সে কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে একটা অবিচারের ধারা বাংলাদেশে অব্যাহত ছিল, সেখান থেকে বাংলাদেশকে একটা সুবিচারের দিকে নিয়ে আসা এবং মানুষকে সহযোগিতা করা, এটাই আমাদের কাজ। জাতির পিতা যে আদর্শ রেখে গেছেন সে আদর্শ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।’

যার জন্য আজকে আমাদের নারী সমাজ। আমি যখন সরকার গঠন করি আমাদের উচ্চ আদালতে কোনো মহিলা জর্জ ছিল না। আমি ১৯৯৬ সালে আসার পর উদ্যোগ নেই। নারী ক্ষমতায়নে বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার বাস্তবায়ন করার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতা সবসময় বলতেন, ‘মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাটা হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক স্বাধীনতাটা যদি থাকে সে যদি অর্থ উপার্জন করে তাহলে পরিবারে তার একটা অবস্থান থাকে। পরিবারে তার একটা গুরুত্ব থাকে। কাজেই সেদিক থেকে তিনি সবসময় এটা চিন্তা করতেন যে মেয়েরা কিভাবে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবে। কাজেই লেখাপড়া শেখা এবং আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করা।‘

প্রধথানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে এই দিকটায় উদ্যোগ নিয়েছি এবং নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা, নারীদেরকে বিভিন্ন সুযোগ দিয়ে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকরি ক্ষেত্রে সব ক্ষেত্রেই তারা যেন তাদের অবস্থানটা দৃঢ় করতে পারে সেই উদ্যোগ নিয়েছি।’

রাজনীতিতে নারীদের কোটা প্রথা চালু করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল থেকে যেন নারী নেতৃত্ব গড়েগ ওঠে আমরা সেই সুযোগটাও সৃষ্টি করে দিয়েছি।‘ তাছাড়া আমার বাড়ি আমার খামার গড়ে তুলে ক্ষুদ্র সঞ্চয় কওে নিজের পাঁয়ে দাঁড়ানোর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করারও তথা তুলে ধরেন এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নতির লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সে কথা উল্লেখ করেন তিনি।

‘নারী ও শিশু নির্যাতন এটা শুধু আমাদের বাংলাদেশে না, এটা বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে হেল্প লাইন, ৯৯৯ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতার করার পদক্ষেপ নিয়েছি। যাতে সমাজে নারীরা যেন নির্যাতিত না হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করেছি।‘ আগে মায়ের নাম সন্তানের পরিচয়ে কিন্তু ছিল না। আমি এসে সন্তানের পরিচয়ে মায়ের নামও সংযুক্ত করে দিয়েছি সে কথাও স্মরণ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী সমাজে নারীদের অবস্থানটা দৃঢ় করে দেয়ার জন্য নারী নেতৃত্ব তৈরির জন্য নারী শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে সমানভাবে অধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘কারণ আমাদের সোনবাহিনীতে শুধুমাত্র মেডিকেল করে নারীরা যেতে পারত, আর কোথাও যেতে পারত না। আমি সরকারে আসার পর সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমানবাহিনী,বিজিবি থেকে শুরু কওে সর্বক্ষেত্রে যাতে মেয়েরা কাজ পায়, আর জাতির পিতা কিন্তু পুলিশে মেয়েদের অংশগ্রহণের সুযোগটা তিনি সৃষ্টি করে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘সেভাবে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থাৎ সকল কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের অবস্থানটা সমানভাবে মেয়েরা যেন পায়, সেটা আমরা নিশ্চিত করে দিয়েছি এবং সেইভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি, আমাদের মেয়েদের জন্য কাজ করে যেতে। আমি মনে করি যে, আমাদের উদ্যোগের ফলে আজকে বাংলাদেশকে যে এগিয়ে যাচ্ছে, সারাবিশ্বের কাছে, অর্থনৈতিভাবে অগ্রগতি হচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে।’

‘আমরা এই সমাজে যেহেতু নারী পুরুষ সকলে সমান অধিকার নিয়ে তারা তাদের কাজ করতে পারে, সেই সুযোগটা সৃষ্টি করেছি বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে’-বলে দাবি করেন।

‘বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবো। আর এই স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে নারী পুরুষ সকলেরই সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে’-বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

মেয়েদের আরও আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বেশি বেশি প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মেয়েদের কর্মক্ষেত্রটা সুবিস্তৃত করে দেওয়া হয়েছে। এখন তারা নিজেরা নিজের পায়ে দাঁড়াবে। সমাজকে সাহায্য করবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, সেটাই আমরা চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা যারা নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলে সকলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে সংগ্রাম করে বিজয় এনেছি, বিজয়ের পতাকা সমুন্নত থাকবে, বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে বিজয়ী জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

দেশ এগিয়ে যচ্ছে নারী পুরুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমান সুযোগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

আইভরি কোস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৪০

সম্পর্কিত খবর