বেরোবি শিক্ষকের ‘অবৈধ’ নিয়োগ বাতিল চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ
৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:৫৩
বেরোবি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধানের ‘অবৈধ’ নিয়োগ বাতিল চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত একই বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হকের জ্যেষ্ঠতা, সে অনুযায়ী পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও চাকরির আনুতোষিক দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই নোটিশে। তাবিউর রহমানে নিয়োগ বাতিলসহ মাহামুদুলকে তার সব অধিকার ১৫ দিনের মধ্যে দেওয়া না হলে আদালতে মামলা করা হবে বলেও নোটিশে জানানো হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত একই বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হকের পক্ষে বুধবার (২ ডিসেম্বর) নোটিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং ওই বিভাগের প্রধানকে পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ূম। লিগ্যাল নোটিশটি মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, মাহামুদুল হকের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মাহামুদুল হককে ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি গঠিত নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই বোর্ডের সুপারিশ অনুয়ায়ী নিয়োগ দিতে বলেন। হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর ওই রায় দেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই রায় বাস্তবায়ন করেনি। এরপর মাহামুদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ও রেজিস্টারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাও করেন, যা এখনো চলমান রয়েছে।
উপাচার্যের উদ্দেশে নোটিশে বলা হয়েছে, যদিও মাহামুদুল হককে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে দিয়েছেন, কিন্তু তিনি আদালতের রায় অনুযায়ী (ওই বাছাই বোর্ড অনুযায়ী) তাকে নিয়োগ দেননি, যা আদালত অবমাননার সামিল।
নোটিশে বলা হয়েছে, সবোর্চ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী মাহামুদুল হককে বর্তমান উপাচার্য নিয়োগ দেননি। ফলে তিনি ‘অবৈধভাবে’ নিয়োগপ্রাপ্ত তাবিউর রহমানসহ বিভাগের দুজন শিক্ষকের চেয়েও জুনিয়র। এমনকি মাহামুদুল হককে সম্প্রতি পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির অনুমতি দেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির অনুমতি না দেওয়ায় মাহামুদুল হক গত বুধবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর এবং রাষ্ট্রপতির কাছে এক আপিল আবেদনে এর প্রতিকার চেয়েছেন।
বাছাই বোর্ড ও সিন্ডিকেটের নথিতে দেখা যায়, ২০১২ সালে ১৩ জানুয়ারি বাছাই বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী মেধা তালিকায় থেকে একজন যোগদান না করায় অপেক্ষমাণ তালিকার প্রথম মাহামুদুল হকের যোগদান করার কথা। বাছাই বোর্ডের সুপারিশপত্রে তাবিউর রহমানের নামই ছিল না। পরে কম্পিউটারে প্রিন্টকৃত ১ ও ২ নম্বর সিরিয়ালের পরে ৩ নম্বর সিরিয়াল হাতে-কলমে লিখে অপেক্ষামাণ তালিকায় তৃতীয় হিসেবে তাবিউরের নাম অর্ন্তভুক্ত করে ২২তম সিন্ডিকেটে পাস করা হয়। ২৩তম সিন্ডিকেটে তাবিউরের নিয়োগটি বাতিল করার পরও আবার তার নামটি নিয়োগের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। অথচ বাছাইবোর্ড অনুযায়ী ওই তালিকায় প্রথম মাহামুদুল হকের নিয়োগ পাওয়ার কথা ওই সময় থেকেই। মাহামুদুল হক হাইকোর্টের রায়ে ২০১৯ সালের ১০ মার্চ ওই বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের যে শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেই তাবিউর রহমান প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তবে যোগাযোগ করা হলে মাহামুদুল হক বলেন, ‘যেহেতু মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ২০১২ সালের বাছাই বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি, সেহেতু উপাচার্য ও রেজিস্টারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল এখনো বলবৎ আছে। নোটিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজনে আদালত অবমাননার মামলায় তাদের আদালতে হাজিরের আবেদন করব।’
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান তাসনীম হুমায়দার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উকিল নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল মাহমুদুল হক নিজে এসে আমার কাছে উকিল নোটিশ পৌঁছে দিয়েছেন। আর আমার জানা মতে, ভিসি এবং রেজিস্ট্রার এই নোটিশ দু’দিন আগেই পেয়েছেন।’
তাসনীম বলেন, ‘মাহমুদুল হক অন্যায়ের বিরুদ্ধে আইনিভাবে লড়ছেন, সেজন্য তাকে সাধুবাদ জানাই। হাইকোর্ট যেহেতু রায় দিয়েছেন, সেহেতু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই কাজ করতে হবে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনের বিষয়টি মাথায় রেখে একাডেমিক কমিটির সঙ্গে আমরা আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
তবে এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তফা কামাল এবং উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে দফায় দফায় ফোন করা হলে কেউ কল রিসিভ করেননি।
অবৈধ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ নিয়োগ নোটিশ বাতিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় লিগ্যাল