নদী দখল: এমপি আসলামুলের ৩ প্রতিষ্ঠানে উচ্ছেদ অভিযানে বাধা নেই
৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:৪৯
ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হকের মালিকানাধীন তিন প্রতিষ্ঠান নির্মাণের স্থানে উচ্ছেদ বন্ধ এবং ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিটের ওপর জারি থাকা রুল খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে বুড়িগঙ্গা নদী ও তুরাগ নদের জায়গা দখল করে ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং নির্মাণধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আর কোনো বাধা রইল না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বুধবার (৯ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত রুল খারিজ করে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এর ফলে এমপি আসলামুল হকের মালিকানাধীন যে তিন প্রতিষ্ঠানে উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দূর হলো, সেগুলো হলো— ‘আরিশা প্রাইভেট ইকোনমিক জোন’, ‘মায়িশা গ্রুপ পাওয়ার প্ল্যান্ট’ ও ‘ঢাকা নর্থ পাওয়ার’।
আরও পড়ুন- বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ তীরে এমপি আসলামুলের ২ স্থাপনা অবৈধ
আদালতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মণ্ডল। অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুন্নাহার দিপা। আসলামুল হকের প্রতিষ্ঠান দু’টির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. ওয়াজিউল্লাহ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য।
উচ্চ আদালতের এই রায়ের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শহিদ বুদ্ধিজীবী সেতু (বছিলা সেতু নামে পরিচিত) পার হলেই ডান পাশে নদীর তীর ঘেঁষে আরিশা প্রাইভেট ইকোনমিক জোন ও মায়িশা গ্রুপ পাওয়ার প্ল্যান্ট গড়ে তোলেন ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক।
এর আগে ঢাকা মহানগরীর চারপাশের নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যার দূষণ, অবৈধ দখল বন্ধে ২০০৯ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করে। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ৯ দফা নির্দেশনা জারি করেন আদালত। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে (সিএস) ম্যাপ অনুসারে নদীগুলোর সীমানা জরিপ করে সীমানা পিলার স্থাপন করা ও নদী অভ্যন্তরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে তা চ্যলেঞ্জ করে সিএলসি, ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার, ঢাকা নর্থ পাওয়ারের পক্ষে হাইকোর্টে আরেকটি রিট দায়ের করা হয়। গত ২২ অক্টোবর ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করে বাদীর আবেদন ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এরপর নদী কমিশনের পক্ষে আসলামুল হকের দাবির বিষয়টি তদন্ত করে তার উপস্থিতি ও সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষের মাধ্যমে গত ৯ নভেম্বর একটি রিপোর্ট দাখিল করা হয়। নদী কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, মায়িশা গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান নদীর ১২ দশমিক ৭৮ একর এবং ফোরশোর ৭ দশমিক ৯২ জায়গা দখল করেছে। এমনকি রাজউকের ড্যাপে প্রদর্শিত ৩০ একরের মতো জায়গায় মাটি ভরাট করে জলাশয় ও নদীর প্রবাহে বাধা দেওয়া হয়েছে।
ওই রিপোর্ট সংযুক্ত করে নদী কমিশনের পক্ষে গত ৩০ নভেম্বর আসলামুল হকের রিটের ওপর জারি করা রুল খারিজ চেয়ে আদালতে একটি আবেদন দাখিল করা হয়। সেই আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুলটি খারিজ করে রায় ঘোষণা করলেন।
পরে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের একাধিক রায়ে সিএস রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত জায়গাকে নদীর জায়গা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নদী কমিশনের রিপোর্টেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের দখলে নদীর জায়গা রয়েছে। সুতরাং রিট মামলা খারিজযোগ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘রুলে বাদী পক্ষের প্রার্থনা উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা, জয়েন্ট সার্ভে ও ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতকে বলেছি— যেহেতু আদালতের নির্দেশনায় জরিপ হয়েছে এবং রিপোর্টে নদীর জায়গা দখলের প্রমাণ মিলেছে, সুতরাং বাদীপক্ষের আবেদন খারিজযোগ্য। আদালতকে আরও জানাই, বিআইডব্লিউটিএ গত ২৬ নভেম্বর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাদীর আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রাইভেট ইকোনমিক জোনকে জানিয়ে দিয়েছেন। বাদী বারবার রিট দায়ের করে উচ্ছেদে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন। মায়িশা গ্রুপের পাওয়ার প্ল্যান্ট ‘সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লি.’ হাইকোর্ট বিভাগে বিআইডব্লিউটিএ’র উচ্ছেদ কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে এর আগেও রিট দায়ের করলেও এ মামলার শুনানিতে সে তথ্য গোপন করেছে।’
আরিশা প্রাইভেট ইকোনমিক জোন আসলামুল হক এমপি আসলামুল হক ঢাকা-১৪ আসনের এমপি পাওয়ার প্ল্যান্ট মায়িশা গ্রুপ হাইকোর্ট