Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা: ৫ বছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮.৫১%


৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:১২

ঢাকা: গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ধাক্কায় সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। সরকারের হিসাব বলছে, ওই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা, করোনা মহামারির ধাক্কা এখনো শেষ হয়নি। বরং আগামী কয়েক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী এর জের চলবে। তবে এর মধ্যেও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশস সূত্র জানিয়েছেন, ৮ দশমিক ৫১ শতাংশের এই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেই অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। খসড়ায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২২ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং পরিকল্পনার বাস্তবায়নের শেষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই প্রাক্কলনের মূলে রয়েছে কর্মসংস্থান। খসড়ায় আগামী পাঁচ বছরে এক কোটিরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য ধরা হয়েছে। বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ধরা হয়েছে এই পরিকল্পনায়। শিগগিরই এই খসড়াটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস মহামারি খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না। কেননা আশা করা হচ্ছে আগামী একবছরের মধ্যেই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তারপর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যতই বাড়বে, প্রবৃদ্ধিও ততই বাড়বে। ফলে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে, সেটি যথেষ্টই যৌক্তিক।

পরিকল্পনায় কর্মসংস্থানের যে প্রাক্কলন করা হয়েছে, তা পূরণ হবে বলেও আশাবাদী ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, রাতারাতি তো এই কর্মসংস্থান তৈরি হবে না। পাঁচ বছর ধরে এই কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এখানে দেশের অভ্যন্তরে যেমন, তেমনি প্রবাসীদের বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। তাছাড়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে তুলনা করলে এই লক্ষ্যমাত্রাটিও অস্বাভাবিক কিছু নয়।

জিইডি সূত্র জানায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী পাঁচ বছরে নতুন এক কোটি ১৯ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ৮৪ লাখ ২০ হাজার এবং প্রবাসে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থান ধরা হয়েছে। তবে কর্মসংস্থানের এই লক্ষ্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তুলনায় ১০ লাখ কম।

জিইডির প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ২২ লাখ ৮০ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে— দেশীয় ১৫ লাখ ৮০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ১৬ লাখ ২০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ মিলিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি হবে ২৩ লাখ ২০ হাজার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ লাখ ৮০ হাজার— দেশীয় ১৬ লাখ ৮০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই লক্ষ্য কিছুটা কম ২১ লাখ ২০ হাজার— দেশীয় ১৪ লাখ ২০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ। আর পরিকল্পনার শেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশীয় ১৮ লাখ ১০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ মিলিয়ে মোট কর্মসংস্থান ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ১০ হাজার।

জিইডি সূত্রে জানা গেছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় গত পাঁচ বছরে (২০১৬-২০) মোট কর্মসংস্থানের লক্ষ্য ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ। এর মধ্যে দেশীয় ১ কোটি ৯ লাখ ও বিদেশি ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃজনের লক্ষ্য ছিল। পাঁচ বছর শেষে অবশ্য লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি, কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে ৯৫ লাখ— এর মধ্যে দেশীয় ৬০ লাখ ও প্রবাসে ৩৫ লাখ।

এদিকে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পায় বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে অর্থবছরভিত্তিক লক্ষ্য হচ্ছে— চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে জিডিপির ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ ও ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ আসবে বিনিয়োগ থেকে।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়ায় বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নেমে আসবে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কর্মসংস্থান জিডিপি জিডিপি প্রবৃদ্ধি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বিনিয়োগ মূল্যস্ফীতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর