Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পদ্মার বুকে বিস্ময়, শেষ স্প্যানে দৃশ্যমান পূর্ণাঙ্গ পদ্মাসেতু


১০ ডিসেম্বর ২০২০ ১২:১০

পদ্মাসেতু প্রকল্প এলাকা থেকে: ভোর থেকেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারপাশ। সূর্যের দেখা নেই। এমন কুয়াশার চাদর ভেদ করে পদ্মার বুকে এগিয়ে গেল বিশালাকৃতির ক্রেন। তাতে রাখা পদ্মাসেতুর ৪১তম তথা শেষ স্প্যানটি। সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত স্প্যানটি উঠে গেল ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর। তাতেই সংযোগ পূর্ণ হলো মাওয়া-জাজিরার। মুন্সীগঞ্জ আর শরিয়তপুরের মধ্যে জলপথে যে কয়েক ঘণ্টার দূরত্ব, তা মাত্র পাঁচ মিনিটে নামিয়ে আনার শেষ ধাপটি যেন পূরণ হলো।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণের জেলাগুলোর দূরত্ব যেন ছিল অলঙ্ঘনীয়। সেই দূরত্ব কাটিয়ে উঠতেই স্বপ্নের পদ্মাসেতুর যাত্রা শুরু। সেই যাত্রা শেষ করার পথে অন্যতম একটি ধাপ আজ পূরণ হলো শেষ স্প্যানটি বসার মাধ্যমে।

বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ২ মিনিটে ৪১তম এই স্প্যানটি চূড়ান্তভাবে বসে যায় ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো পূর্ণ ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার।

এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় এই শেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ। গতকাল বুধবারই (৯ ডিসেম্বর) স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ক্রেনে তুলে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির কাছে এনে রাখা হয়েছিল।

সকালে শুরু হয়ে দুপরের আগেই পদ্মার এপার-ওপারে ইস্পাত কংক্রিটের কাঠামোতে সংযোগ বাঁধলো। তীব্র খরস্রোতা এই নদীতে সেতু নির্মাণ সমসায়িক বিশ্বে বিরল ঘটনা। প্রায় ২০ থেকে ২২ বছরের প্রচেষ্টার সফলতা মিললো।

১৯৯৮ সালে যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর যাত্রা শুরু হলে পদ্মায় সেতু নির্মাণের দাবি প্রবল হয়। সেই দাবি থেকে কাজ শুরু হতে আরও এক দশক সময় লেগে যায়। এরপর দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। একপর্যায়ে সে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে সংশ্লিষ্ট মামলা খারিজ হয়। তবে বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহযোগিতা শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়।

বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ানোয় পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বকে বিস্মিত করে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন— বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতু নির্মাণ করবে। নানা মহলের সমালোচনা অগ্রাহ্য করে শেষ পর্যন্ত নিজের ঘোষণায় অটল ছিলেন শেখ হাসিনা। শেষ পর্যন্ত দেশের মানুষের টাকাতেই গড়ে উঠলো দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম এই অবকাঠামো।

২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের। কিন্তু নদীর তলদেশে মাটির গঠনগত বৈচিত্র্যের কারণে কাজ পিছিয়ে যায়। সাড়ে ৪ বছর ধরে শুধু সেতুর খুঁটির কাজ চলে। আর ৩ বছর তিন মাস সময় লাগে সেই খুঁটিতে স্প্যান বসাতে। সেতুর ৪২টি খুঁটির ওপর ৪১টি স্প্যান তুলে দিয়ে সেই সেতুটি চালুর দিকে যাচ্ছে সরকার।

পদ্মাসেতুর খুঁটি ৪২টি, স্প্যান ৪১টি। প্রতিটি স্প্যান ১৫০ মিটার লম্বা। শধু নদীতে সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই পাড়ের সঙ্গে সংযোগ মিলিয়ে সেতুটি সাড়ে ৯ কিলোমিটার। রোড ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার। রেল ভায়াডাক্ট শূন্য দশমিক ৫৩২ কিলোমিটার। অর্থাৎ সংযোগ ও ভায়াডাক্টসহ সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৪৮২ কিলোমটার। প্রমত্ত এই নদীর বুকে সেতু গড়তে নদী শাসন করা হচ্ছে ১৪ কিলোমিটার। সংযোগ সড়ক উভয়দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার।

চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সেতুটি নির্মাণ কাজ করছে। নদী শাসন কাজ করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের আবুল মোনেম লিমিটেড। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যার পুরোটাই দেশের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।

আগামী বছর ২০২১ সালের ডিসেম্বর সেতুর ওপরে সড়ক ও ভেতরে রেলপথের কাজ শেষ করে চালু করার লক্ষ্য সরকারের।

১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটি ৪১তম স্প্যান ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মাসেতু পূর্ণ সেতু পূর্ণাঙ্গ সেতু দৃশ্যমান শেষ স্প্যান


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর