‘সরকারি ক্রয়ে এসএমই কোটা নির্ধারণের চেষ্টা চলছে’
১০ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:১২
ঢাকা: শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, শিল্প মন্ত্রণালয়রে মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বা সেবা কেনার জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনে কোটা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা চলছে। এর ফলে এসএমই উদ্যোক্তারা লাভবান হবনে এবং করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রাখবেন।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) করোনায় এসএমই খাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দেশি পণ্য ব্যবহার বাড়ানোর প্রচারণা উপলক্ষে আয়োজিত অনলাইনে সোশ্যাল ক্যাম্পেইন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসএমই উদ্যোক্তাদের তৈরি দেশীয় পণ্য ব্যবহারে ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন এই কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় কোলেটারালের বাধ্যবাধকতা ও অন্যান্য র্শতসমূহ শিথিল করে এমএসএমই উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বিবেচনায় প্রণোদনার অর্থ মঞ্জুরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘করোনাকালীন পণ্য বিপণন সুবিধা সম্প্রসারণে এসএমই উদ্যোক্তা এবং ক্রেতাদের মধ্যে লিঙ্কেজ শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এসএমই ফাউন্ডশেন এবং বিসিক উদ্যোক্তাদের ই-কর্মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এ সকল উদ্যোগের ফলে শিল্পখাতে নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রয়েছে। করোনার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিভিন্ন দেশের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি আয়ত্ব করার পাশাপাশি দেশি ও আন্তর্জাতিক ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের গুণগত মান উন্নত করা যেমন জরুরি, তেমনি এসএমইদের পণ্য বিপণনের সুবিধা বাড়ানোও প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য এসব উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সহযোগিতা করা এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই রয়েছে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের এক বিশাল বাজার। আসুন আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের তৈরি দেশি পণ্য ক্রয় করি এবং ব্যবহার করি।
তিনি বলেন, ‘এসএমই উদ্যোক্তারা পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত সামগ্রী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হ্যান্ডিক্রাফটস, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যারসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে থাকেন। নারী-উদ্যোক্তারাও এসব শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এসব পণ্যের মান যথেষ্ট ভালো এবং অনেক পণ্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, যা বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বদেশী পণ্যের ব্যবহার দেশপ্রেমেরই পরিচায়ক এবং গৌরবের বিষয়ও বটে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন খাঁটি বাঙালি এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোক্তাদের তৈরি দেশীয় পণ্যকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তাই এই ক্রান্তিকালে বিদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমিয়ে করোনা পরিস্থিতিতে যেসব পণ্য দেশে উৎপাদিত হচ্ছে সেগুলো বেশি বেশি ক্রয় করি এবং ব্যবহার করি।’
বাণিজ্যমন্ত্রী আশা করেন, সরকার ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ শতভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের নিকট পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আন্তরিকভাবে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘দেশি ফ্যাশন ডিজাইনাররা বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন করেন। তাই সরকারি কেনাকাটায় এসএমই উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয়ের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হলে দেশি পণ্যের ব্যবহার বাড়ার ক্ষেত্রে তা যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।’ এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণ কার্যক্রমে এসএমই ফাউন্ডেশনকে যুক্ত করতে সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
উল্লেখ্য, দেশীয় পণ্য ব্যবহারে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এসএমই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও সামাজিক মিডিয়ায় প্রচারের জন্য ২৫টি স্লোগান তৈরি করেছে। এছাড়া সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি এবং ইমেইলে এসব স্লোগান পাঠিয়ে সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম গ্রহণ করবে এসএমই ফাউন্ডেশন।
উদ্যোক্তা এসএমই কোটা বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সরকারি ক্রয়