Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পদ্মার তলদেশ স্পর্শ করে যেভাবে দাঁড়ালো খুঁটি


১০ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:৩৪

পদ্মাসেতু। ফাইল ছবি

ঢাকা: বিশ্বে এখন পর্যন্ত যত নির্মিত হয়েছে তার মধ্যে পদ্মাসেতু খুঁটি গড়ে তোলা সবচেয়ে জটিল ও চ্যালেঞ্জিং ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে এর প্রধান কারণ ছিল নদীর তলদেশের ব্যাতিক্রমী মাটির লেভেল। পদ্মা তার পানির স্রোতের সঙ্গে নিচ থেকে বিপুল পরিমাণে মাটি তুলে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এভাবে নদীর নিচের মাটি ক্ষয় হতে পারে ৬৫ মিটার বা ২১ তলা দালানের সমান। যে কারণে খুঁটি নিতে হবে আরও গভীরে।

এই জটিল কারিগরি দিক বের করতে পদ্মার কাজ পিছিয়ে গিয়েছিল প্রায় এক বছর। এ রকম ক্ষয় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল ২২ খুঁটির তলদেশে। যে কারণে ২২টি খুঁটির কাজ বন্ধ রেখে পুনরায় নকশা করে আনতে হয়েছিল। বিষয়টি জানিয়েছিলেন পদ্মাসেতুর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল প্রধান ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

এর সমাধান করা হয় অভিনব এক পদ্ধতিতে। যে পদ্ধতির ব্যাখা করে তিনি জানিয়েছিলেন, নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটি বদলে নতুন মাটি তৈরি করে পিলার গাঁথা হয়েছে। বিশেষ এ পদ্ধতির নাম স্ক্রিন গ্রাউটিং। যা বিশ্বে বিরল।

বর্ণনা দিয়ে জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘এরকম পদ্ধতির ব্যবহার বিশ্বে খুব একটা নমুনা নেই। এ প্রক্রিয়ায় ওপর থেকে পাইপের ছিদ্র দিয়ে কেমিক্যাল নদীর তলদেশে পাঠিয়ে মাটির গুণাগুণ শক্ত করে তারপর সেখানে খুঁটি গাঁথা হয়েছে।’

জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘পদ্মাসেতু নির্মাণে সবচেয়ে বড় জটিলতা তৈরি হয়েছিল সেতুর পাইল ড্রাইভিং নিয়ে। সেতু নির্মাণের আগে নদীর তলদেশের মাটি সম্পর্কে যে ধারণা করা হয়েছিল বাস্তবে কাজ শুরুর পর সেই ধারণার সঙ্গে মেলেনি।’

কাজ শুরু করতে গিয়ে নদীর নিচে মাটির যে স্তর পাওয়া গেছে তা পিলার গেঁথে রাখার উপযোগী নয়। এমন অবস্থায় দুটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত পাইল নিয়ে যেতে হবে আরও গভীরে না হলে সেতু ভেঙে বা দেবে যেতে পারে। আর দ্বিতীয়ত গভীরতা কমিয়ে পাইল সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রথম পদ্ধতিটি সম্ভব ছিল না কারণ বিশ্বের সর্বোচ্চ শক্তির হ্যামার দিয়ে এত গভীরে পাইল ড্রাইভিং করা যাবে না। যে হ্যামার রয়েছে তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেই ড্রাইভিং করা হয়েছে। নদীর আরও গভীরে অর্থাৎ ১৩০ মিটার নিচে পাইল নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। যা এই হ্যামার দিয়েও সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে নতুন আরেকটি হ্যামার আনতে হবে এবং সে ধরনের হেমার জার্মানিতে তৈরি করে আনতে এক থেকে দেড় বছর লাগবে। এ অবস্থায় দেরি হয়ে যেতে পারে পদ্মা সেতু নির্মাণে।

যে কারণে দ্বিতীয় পদ্ধতিটি অবলম্বন করা হয়। বিশেষজ্ঞরা এমন একটি পদ্ধতির দিকে যান যা বিশ্বে বিরল। এ পদ্ধতিতে নদীর তলদেশে মাটির গুণগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে ড্রাইভিং করতে হবে। জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘এমন পদ্ধতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এবং বিশ্বে খুব একটা নজির নেই।’

পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলছিলেন, পাইলের সঙ্গে স্টিলের ছোট ছোট পাইপ ওয়েল্ডিং করে দেওয়া হয়েছে। আর পাইপের ভেতর দিয়ে এক ধরনের কেমিক্যাল পাঠিয়ে দেয়া হয় নদীর তলদেশের মাটিতে। আর তখন সেই মাটি শক্ত রূপ ধারণ করে। এরপর এসব পাইল লোড বহনের সক্ষমতা তৈরি হয়। আর এ পদ্ধতিটির নাম স্কিন গ্রাউটিং।

পদ্মা সেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে ১১টি খুঁটি গড়ে তোলা হচ্ছে।

পদ্মা সেতুর প্যানেল অব এক্সপার্টের বর্তমান প্রধান শামিমুজ্জামান বলেন, ‘পদ্মা মূল সেতুর কাজ আগেই শেষ হচ্ছে। তবে এর সঙ্গে আরেকটি প্রকল্প নদীশাসন নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না। তবে নদী শাসনের জন্য সেতুর চালু হওয়া আটকে থাকবে না।’

নভেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর অগ্রগতি ৯১ ভাগ, নদী শাসন ৭৬ আর সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ।

পদ্মা সেতু টেস্ট পাইলিং কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। একবছর পর মূল পাইল ড্রাইভ শুরু হয়। এরপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছিল ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর তিনবছরে শেষ হচ্ছে ৪১টি স্প্যান বসানো।

পদ্মানদী পদ্মাসেতু স্প্যান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর