পার্কিংয়ের জায়গায় অবৈধ দোকান ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা ডিএসসিসির
১২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৪:২৮
ঢাকা: নকশাবহির্ভূত ৯১১টি দোকান চিহ্নিতের পর ভেঙে ফেলার কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গত তিন দিনে অন্তত পাঁচ শতাধিক অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। অভিযান চলবে আগামী মার্চ পর্যন্ত। তবে এরইমধ্যে ডিএসসিসি নতুন পরিকল্পনায় নেমেছে। ৯১১ টি অবৈধ দোকান ভাঙার পরপরই সিটি করপোরেশনের যেসব মার্কেটের বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা ছিল সেখানেও অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে। সেইসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, গাড়ি পর্কিংয়ের জায়গা উদ্ধার হলে গুলিস্তান এলাকায় ভয়াবহ যানজট আর থাকবে না। যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, সার্জেট আহাদ পুলিশ বক্স, ফুলবাড়িয়া এবং সদরঘাটের সড়কে যানজট লেগেই থাকে। পার্কিংয়ের জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া হলে এসব স্থানে অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি পাবে সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারাবাংলাকে বলেন, নগর ভবনের পেছনে এক সাড়িতে ৫টি মার্কেটের মধ্যেই অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে ৯১১ টি। টয়লেট, লিফট এবং মার্কেটের সামনে খালি জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ দোকান। যার ফলে এসব দোকান ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এর পরের পরিকল্পনা হচ্ছে গুলিস্তান এলাকার বড় বড় মার্কেটগুলোর গাড়ি পর্কিংয়ের জন্য বেজম্যান্ট উদ্ধার করা। মার্কেটের নকশাতেই বেজম্যান্টকে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য বলা আছে। তবে একটি চক্র গাড়ি পার্কিংয়ের পরিবর্তে দোকান বানিয়ে তা বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরো বলেন, ‘মেয়রের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, অবৈধ সব দোকান সবার আগে উচ্ছেদ করা হবে। এরপরই গুলিস্তান এলাকার অন্যান্য সমস্যার সমাধান করা হবে। এর মধ্যে গুলিস্তানের ফুটপাতও স্থায়ীভাবে উচ্ছেদের পরিকল্পনা রয়েছে।’
গত ৮ ডিসেম্বর অবৈধ ৯১১টি দোকান উচ্ছেদ করতে যায় ডিএসসিসির তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তিনটি দল। সঙ্গে চার প্লাটুন পুলিশ, এক প্লাটুন বিজিবি সদস্য এবং আনসার সদস্যরাও নিরাপত্তায় অংশ নেন। শুরুতেই বাধাগ্রস্ত হয় ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে। এরপর পুলিশ টিয়ারশেল মেরে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দিয়ে অভিযান শুরু করে ডিএসসিসি।
প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে মার্কেটের সামনের ৪ তলা ২টি বিল্ডিং, পেছনের সারির ১০৪টি দোকান, মার্কেটের ভেতরে ৪০টি দোকানসহ সবমিলিয়ে প্রায় ২০০ শত দোকান উচ্ছেদ করা হয়। তৃতীয় দিনে এসে পাঁচ শতাধিক দোকান উচ্ছেদ করা হয়। অনুমোদিত ভবনের পাশে অবৈধভাবে গড়ে তোলা কয়েকটি ভবন সিটি করপোরেশনের ক্রেন দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব না হওয়ায় বিআইডব্লিউটিএ এর সহযোগিতা চেয়ে ডিএসসিসি।
এদিকে কয়েকটি মার্কেটে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের ঘটনায় যেসব মার্কেটে বেজম্যান্টে দোকান রয়েছে, সেখানকার ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে পড়েছে। তারাও এরইমধ্যে বলা শুরু করেছেন, কবে যেন তাদের দোকান উচ্ছেদের কবলে পড়েন। তবে তাদের দাবি, যাই করা হোক, ব্যবসায়ীদের যেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তা না হলে ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করবেন।
অন্যদিকে বেজম্যান্টে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা দখল করে দোকান বানিয়েছেন যারা তাদের কোনোভাবেই আর খুঁজে পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। যাদের কাছ থেকে কিনেছেন তাদেরও আর পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘবছর ধরে ব্যবসায়ীরা সিটি করপোরেশনকে ফি দিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) আবু নাসের বলেণ, ‘অনেক কিছুই পরিকল্পনা থাকে। বাস্তবায়ন করাই মূল কথা। যেসব মার্কেটে উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে এসব বিষয়ের বাইরে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আগেই বলার সময় আসেনি। বেজম্যান্টে গাড়ি পার্কিংয়ের পরিকল্পনা হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই জানতে পারবেন।’