ফল মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্ব— অভিযুক্ত রাবি আইআর বিভাগের সভাপতি
১১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৯:২৭
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের সভাপতি ড. আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে পরীক্ষার ফল বিপর্যয়, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। ওই শিক্ষকের লেখা বই না কিনলে তিনি ভর্তি বা ফরম পূরণের ফর্মে সই করতেন না অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনা তদন্ত করে ফল পরিবর্তনের জন্য সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করেছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা এই বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর সব বর্ষে প্রায় সবাই ভালো ফল অর্জন করি। এর মধ্যে একজন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক ও আরেকজন ইউজিসির বৃত্তিও লাভ করেন। আমাদের এই অর্জনে পূর্ববর্তী সভাপতি ও শিক্ষকরা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভাগের সব শিক্ষার্থীর জীবনে দুঃসময় নেমে আসে। শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন, পক্ষপাতিত্ব, ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণে দায়িত্বে অবহেলা, অনৈতিক কার্যকলাপে বিভাগে ফলাফল খারাপ হয় বলে দাবি করেন তারা।
তথাকথিত ‘সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন’ নামক সংগঠনের কাজে শিক্ষার্থীদের যোগ দিতে ড. আবদুল্লাহ আল মামুন বাধ্য করতেন বলেও শিক্ষার্থীরা আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, তিনি অপ্রয়োজনীয় হলেও তার লেখা ‘A Brief History of Bangladesh’ বইটি সবাইকে ৩৫০ টাকা দিয়ে কিনতে বাধ্য করেন এবং ওই বই না কিনলে ভর্তি বা ফরম পূরণের সময় সই করতেন না। তার এসব অপকর্মে কেউ মৃদু বিরোধিতা করলেও তাদের পরীক্ষায় দেখে নেবেন বলে বিভিন্ন সময় হুমকি দেন বিভাগীয় প্রধান।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগে লিখেছেন, থিসিসের কাজের জন্য আমরা কক্সবাজার গেলে তিনি আমাদের সঙ্গে তার স্ত্রী, সন্তান, শ্যালক-শালিকাদের নিয়ে যান এবং তাদের থাকা, খাওয়া ও যাতায়াতের খরচ দিতে আমাদের বাধ্য করেন। এ ব্যয় আমাদের কারও কারও পক্ষে বহন করা সাধ্যাতীত ছিল।
শিক্ষার্থীদের আরও অভিযোগ, ২০১৯ সালের এমএসএস পরীক্ষায় তাদের ফল বিপর্যয়ের জন্য বিভাগ ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর নৈতিক স্খলনই দায়ী। তাই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষার সব উত্তরপত্র ও থিসিসের পুনর্মূল্যায়ন এবং ইনকোর্সের নম্বর যথাযথভাবে দিয়ে নতুন ফল তৈরির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ফল বিপর্যয়ের জন্য দায়ী পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থারও দাবি জানিয়েছেন তারা।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি ড. সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাস্টার্সের ফল তৈরিতে কোনো ধরনের পদ্ধতিগত ত্রুটির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটা ঠিক যে কিছু শিক্ষার্থীর ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। তবে আগে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের ফল ভালো হয়নি বলেই যে সেখানে অনিয়ম হয়েছে, এমনটি তো নয়। যে শিক্ষার্থী ভালো পড়েছে, তার ফল ভালো হয়েছে। আর পরীক্ষার ফল তো একজন শিক্ষকের হাতেও থাকে না যে তিনি অনিয়ম করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় পরীক্ষার ফলে অনিয়ম করার সুযোগও নেই। এখানে প্রতিটি উত্তরপত্র দু’জন শিক্ষক মূল্যায়ন করেন। তাদের দেওয়া নম্বরের মধ্যে ২০ শতাংশ পার্থক্য থাকলে আবার তৃতীয় একজন পরীক্ষক উত্তরপত্রটি পুনর্মূল্যায়ন করেন।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে বাধ্য করার বিষয়ে ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা সতঃস্ফূর্তভাবে এ সংগঠনে যুক্ত হয়ে থাকে। এতে বাধ্যবাধকতার কিছু নেই। তাছাড়া দেশের ৬৪ জেলায় এর শাখা রয়েছে।
নিজের লেখা বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মামুন বলেন, মাস্টার্সে আমার ৩০ জন শিক্ষার্থী। তাদের বই কিনতে বাধ্য করার কোনো কারণ নেই। আর এ বইটি বিভাগের সিলেবাসের তালিকাভুক্ত। আমার লেখা কয়েকটি বইয়ের হাজার হাজার কপি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা কিনে পড়ছেন। ফলে ৩০টি বই বিক্রির জন্য চাপ প্রয়োগের কোনো যৌক্তিকতা নেই। শিক্ষকদের দলাদলিতে এসব শিক্ষার্থীদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় প্রতিটি বিষয় বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। আমি এটি নিশ্চয়তা দিতে পারি, এ সময়টাতে বিভাগে কোনো অনিয়ম হয়নি। শিক্ষার্থীরা আমার বিষয়ে যেহেতু অভিযোগ দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেগুলো তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আইআর বিভাগ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ ড. সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী পক্ষপাতিত্ব ফল বিপর্যয় বিভাগীয় সভাপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়