করোনার ৯ মাস: সংক্রমণ, মৃত্যু সবই ঊর্ধ্বমুখী
১১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:০৩
ঢাকা: বাংলাদেশে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয় চলতি বছরের ৮ মার্চ। এর পর কখনও বেড়েছে, আবার কখনও কমেছে শনাক্তের হার। তবে সম্প্রতি দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হার বিগত সময়ের তুলনায় বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে মৃত্যু হারও। করোনা শনাক্তের অষ্টম মাসের তুলনায় নবম মাসে নমুনা পরীক্ষার হার বেড়েছে ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ। এই সময়ে দেশের ১০ টি জেলায় ৫ ডিসেম্বর থেকে নমুনা শনাক্তকরণের জন্য যুক্ত হয় অ্যান্টিজেন টেস্ট। অষ্টম মাসের তুলনায় নবম মাসে দেশে শনাক্তের হার বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও মৃত্যু হার বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়লেও এটাকেই করোনা সংক্রমণের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বা ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ বলে মানতে রাজি নন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে এখনো কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বর্তমানে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী আছে। তবে এখনো এর কারণে দেশে দ্বিতীয় ঢেউ বা সেকেন্ড ওয়েভ এসেছে বলা যাবে না। এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ বিপৎসীমা ছাড়াতে পারে।
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার সই করা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৬ ডিসেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সময়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ৩৬ জন মারা গেছেন। এই সময়ে ১৪ হাজার ৩৬৯ টি নমুনা পরীক্ষা করে দুই হাজার ১৯৮ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে চার লাখ ৭৯ হাজার ৭৪৩টি নমুনায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এই সময়ে কোভিডে মারা গেছেন মোট ছয় হাজার ৮৭৪ জন। এছাড়া বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬২৩ জন কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশের ৯ মাসের করোনা পরিস্থিতি: বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম তিনজনের শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রথম মৃত্যুবরণের ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। প্রথমদিকে দেশে মৃত্যুহার বেশি থাকলেও সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ার পর এটি কমে আসে। ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণের হার কমে আসতে থাকে। একইসঙ্গে এই সময়ে কিছুটা কমে আসে মৃত্যুহারও। তবে ৮ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোভিড-১৯ শনাক্ত ও মৃত্যুর হার আগের মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।
৮ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ৩ হাজার ৭৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬৪ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। এর মধ্যে ১৭ জন মৃত্যুবরণ করেন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ৪ দশমিক ৩৬ সংক্রমণ শনাক্ত হলেও মৃত্যু হার ছিল ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
৮ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত দেশে এক লাখ ১ হাজার ২২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২ হাজার ২৬১ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। এই সময়ে ১৮২ জন মৃত্যুবরণ করেন, যা শনাক্তের বিপরীতে ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এই সময়ে নমুনা পরীক্ষায় ১২ দশমিক ১১ শতাংশের শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যায়।
৮ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত সময়ে দেশে দুই লাখ ৯২ হাজার ৪৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই সময়ে ৫৩ হাজার ৩৪৪ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যায়, যা নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে ১৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। এই সময়ে দেশে ৬৮৯ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যান, যা শনাক্তের বিপরীতে ১ দশমিক ২৯ শতাংশ।
৮ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সময়ে দেশে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যা মাসিক হিসেবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই সময়ে ১ লাখ দুই হাজার ৮৭৬ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যায়, যা নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এই ৩০ দিনেই মূলত বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোভিড-১৯ সংক্রমিত পাওয়া যায়। ওই ৩০ দিনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এক হাজার ২৬৩ জন, যা এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ। এই মাসের পরিসংখ্যান লক্ষ্য করে দেখা যায়, করোনা শনাক্তের তুলনায় ১ দশমিক ২৩ শতাংশ মৃত্যুবরণ করেছেন, যা আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কম।
৮ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮৩ হাজার ৮৫৭ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এই মাসে ২৩ দশমিক ২১ শতাংশের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যায়, যা শতাংশ হিসেবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই সময়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এক হাজার ১৮২ জন, যা শনাক্তের তুলনায় ১ দশমিক ৪১ শতাংশ। ৮ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে ৪ লাখ ৬ হাজার ৯০১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই সময়ে ৭৪ হাজার ৮৫৭ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যায়, যা নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। এই সময়ে ১ হাজার ১৮৩ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, যা শনাক্তের অনুপাতে ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে দেশে তিন লাখ ৮২ হাজার ১৮০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৫ হাজার ৭৯২ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। নমুনা পরীক্ষা বিপরীতে এই মাসে শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ম। তবে এই সময়ে দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯২৪ জন। শনাক্তের বিপরীতে এই মাসে মারা গেছেন ২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যা বিগত মাসগুলোর চেয়ে বেশি।
৮ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে চার লাখ তিন হাজার ৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৫ হাজার ৬১৩ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এই মাসে শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ম। এই সময়ে দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬০৯ জন। শনাক্তের বিপরীতে এই মাসে মারা গেছেন ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা বিগত মাসের তুলনায় কম।
৮ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চার লাখ ৪৭ হাজার ৬৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মাঝে ৬০ হাজার ৯৭৯ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে এই মাসে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ, যা সপ্তম ও অষ্টম মাসের তুলনায় বেশি। এই সময়ে দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮২৫ জন। শনাক্তের বিপরীতে এই মাসে মারা গেছেন ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা করোনা শনাক্তের অষ্টম মাসের তুলনায় কম।
দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের অষ্টম মাসের তুলনায় নবম মাসে ৪৪ হাজার ৬৬২টি বেশি সংক্রমণ শনাক্তকরণে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যা আগের মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ বেশি। অষ্টম মাসের তুলনায় নবম মাসে ১৫ হাজার ৩৬৬ টি বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয় (৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি)। এ সময়ে দেশে মৃত্যু হার বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ (২১৬ জন)।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে কোনো ঢেউ এসেছে কি না বা ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ হচ্ছে কি না, তা নিয়ে আসলে তেমন ভাবার দরকার নেই। বাস্তবতা হচ্ছে আমরা বিপৎসীমার মধ্যেই আছি। আমাদের এখানে সংক্রমণ স্থিতিশীল একটি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত কিছুদিনের তথ্য যদি হিসাব করা হয়, নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার কিন্তু একটি নির্দিষ্ট মাত্রার কাছাকাছিই আছে। এক্ষেত্রে একদিন ১৬ শতাংশ অতিক্রম করলেও পরবর্তীতে তা নেমে আসে। পরবর্তীতে এটা ১২ থেকে ১৫ শতাংশের মাঝেই আছে। এটা যদি চলমান চিত্র হয়, তাহলে ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ বা ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ এলে এই হার দেড়গুণ পর্যন্ত হয়ে যাবে। সেই পরিস্থিতি যদি সপ্তাহ দুয়েক বজায় থাকে, তখন দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এখনো আমরা সে পরিস্থিতিতে যাইনি।
তবে দ্বিতীয় ঢেউ না এলেও স্থিতিশীল পরিস্থিতিটিকেই যথেষ্ট বিপজ্জনক বলে মনে করছেন ডা. মোশতাক। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিকে দ্বিতীয় ঢেউ না বলে বিপৎসীমা বাড়ছে বলাই শ্রেয়। জুন-জুলাইয়ের পর সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমলেও অবস্থা যে খুব বেশি ভালো হয়ে গেছে, তেমনটা বলার সুযোগ নেই। কারণ আমাদের এখানে মাসখানেক হলো সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট অবস্থানের আশপাশেই রয়েছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনোভাবেই এই শতাংশের হার বেড়ে না যায়।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ এখনো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না— এটি বিপজ্জনক হতে পারে। এ অবস্থায় আমাদের নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। দরকার হলে এলাকাভিত্তিক আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু সংক্রমণ বাড়ছে, ফলে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের বিকল্প নেই।
কোভিড প্রতিরোধবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও ভাইরোলজিস্ট ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের যে হার তা আসলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। তবে এটি কেন কম?- তা নিয়ে এখনও কিছু ভাবনার বাকি আছে। নমুনা পরীক্ষা কিছুটা বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ১০টি জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। এগুলোকে ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে আমাদের মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম হলেও আগের চেয়ে এখনও আমাদের শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বিগত সময়ের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক এই উপাচার্য আরও বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী যদি বলা হয় তবে এই মাত্রা পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে না আসা পর্যন্ত পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরেই বলতে হবে। আর এক্ষেত্রে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে বাড়াতে হবে নমুনা পরীক্ষাও। সবাইকে নমুনা পরীক্ষার আওতায় আনা না গেলে পরিস্থিতি বোঝা আসলে কষ্টকর। প্রথম দিকে মানুষজন যখন বাসায় ছিল তখন স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা হলেও মানা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত নজরদারি রাখা গেছে। মানুষজন নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে সময় মতো। তবে বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি কিন্তু তেমন মানা হচ্ছে না। আমরা লকডাউন ও রোগী শনাক্ত কোনোটাই করতে পারছি না। একদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, আবার অন্যদিকে নমুনা পরীক্ষায় অনীহা- এই দুই মিলে মৃত্যুর হার বাড়ছে। অথচ আমরা যদি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নির্বাচন করে নমুনা পরীক্ষা ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে পারতাম তবে হয়তো তা কিছুটা হলেও আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে সাহায্য করতো।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় আমরা বলতে পারি, একটা স্টেডি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সংক্রমণের হার। শীতকালে এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষজন শ্বাসকষ্টজনিত কিছু রোগে ভোগে। এর মধ্যে ডেঙ্গুতেও ইদানিং অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আমাদের আসলে কোনোভাবেই রিল্যাক্স থাকার সুযোগ নেই। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জ্বর, সর্দি, কাশি বা যে কোনো শারীরিক অসুস্থতার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষায় অনীহার কারণে অধিকাংশ সময়ে উপসর্গহীন রোগীদের প্রথমদিকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। যখন শনাক্ত করা হচ্ছে তখন হয়তোবা হাসপাতালে নিতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই আবার দেখা যাচ্ছে, কো-মর্বিডিটি আছে এমন রোগীকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পরবর্তী সময়ে যখন হাসপাতালে আনছেন তখন আর কিছুই করার থাকছে না। এসব কারণেও মৃত্যু হার বাড়ছে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে এর কোনো বিকল্প নেই।’
দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি একটা স্টেডি গ্রাফ আকারে যাচ্ছে। এটাতে আসলে ভালো কিছু হয়েছে বা আমাদের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এমনটা ভেবে রিল্যাক্স থাকার কোনো সুযোগ নেই। বরং সামনের দিনগুলোতে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে, যাতে পরিস্থিতি এর চেয়ে বেশি খারাপের দিকে না যায়। সবাইকে তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া আসলে আর অন্য কোনো উপায় নেই।’