Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে বেনাপোল কাস্টমসের রাজস্ব আহরণ


১১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:৪৩

যশোর: দেশের বড় স্থলবন্দর বেনাপোলে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখনও আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক হয়নি। ফলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। এর মধ্যেও বেনাপোল কাস্টম হাউস কর্মকর্তাদের তৎপরতা, তদারকি আর নতুন নতুন পদক্ষেপের ফলে রাজস্ব আদায় বাড়ছে।

লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পযন্ত এই পাঁচ মাসে আহরণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। শুধু নভেম্বরে আহরণ প্রবৃদ্ধি ৪৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। কাস্টমসের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবিত হচ্ছে। এর ফলে প্রতি মাসে আহরণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অপরদিকে, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় এরইমধ্যে সাত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। চার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর এ কাস্টম হাউসের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৫০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে এক হাজার ৫০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছর একই সময়ের তুলনায় ২৫৭ কোটি ২০ লাখ টাকা বেশি। পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

অপরদিকে, অর্থবছরের সদ্যবিদায়ী নভেম্বর মাসের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আদায় হয়েছে ৩৭৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের নভেম্বর মাসের তুলনায় ১১৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বেশি। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ৪৬ দশমিক ৪০ শতাংশ।

সূত্র জানায়, বেনাপোল কাস্টম হাউস রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে বদ্ধ পরিকর। আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি ও শুল্ক ফাঁকি রোধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। করোনার কারণে এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানির পরিমাণ কমে গেছে। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আমদানি-রফতানি, বাড়ছে রাজস্ব আহরণ। তবে সুযোগসন্ধানী একশ্রেণির অসাধু আমদানিকারক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহায়তায় রাজস্ব ফাঁকি দিতে সব সময় তৎপর। বিশেষ করে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে এ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যদিও ফাঁকি রোধে তৎপরতা বাড়িয়েছে বেনাপোল কাস্টম হাউস। তার ফলও আসতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে দেড় মাসে প্রায় অর্ধশতাধিক আমদানিকারকের মিথ্যা ঘোষণার অতিরিক্ত পণ্য আটক, অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়, জরিমানা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গত পাঁচ মাসে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় ছয়টি সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। চার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। বাতিল করা এজেন্টগুলো হলো রিমু এন্টারপ্রাইজ, তালুকদার এন্টারপ্রাইজ, এশিয়া এন্টারপ্রাইজ, সানি ইন্টারন্যাশনাল, মদিনা এন্টারপ্রাইজ, মুক্তি এন্টারপ্রাইজ ও রিয়াংকা এন্টারপ্রাইজ।

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে, বেনাপোল কাস্টম হাউসে বাজেয়াপ্ত অনিলামযোগ্য ৫৬ টন পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। ধ্বংস করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে-আতশবাজি, মদ, সিগারেট, ওষুধ, প্রসাধনী প্রভৃতি। এনবিআরের স্থায়ী আদেশ (আদেশ-৯৩/২০১৯/কাস্টমস, ২০/০৬/২০১৯) অনুযায়ী ২ অক্টোবর পৃথকভাবে এসব পণ্য ধ্বংস করা হয়। আহ্বায়ক কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার ড. মো. নেয়ামুল ইসলামসহ অন্যান্য সব সদস্যের উপস্থিতিতে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। বেনাপোল কাস্টম হাউসের ইতিহাসে সর্বপ্রথম এত বেশি ঝঁকিপূর্ণ পণ্য ধ্বংস করা হয়।

অপরদিকে, আমদানি-রফতানি গতিশীল ও সহজতর করতে হাউসের কার্গো শাখার এন্ট্রি গেটে একটি পয়েন্টে এন্ট্রি কার্যক্রম চালু করা হয়। এর আগে কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ইএই আলাদাভাবে এন্ট্রি করার কারণে সময় বেশি লাগত যা আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হতো। বিগত প্রায় ১০ বছর যাবত এভাবে চলছিল। দফায় দফায় আলোচনা করে এ সমস্যা সমাধান করা হয়। আমদানি-রফতানি গতিশীলকরণে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘পরিস্থিতি যত স্বাভাবিক হচ্ছে, তত রাজস্ব আহরণ বাড়ছে। রাজস্ব ফাঁকি রোধে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে দৃশ্যমান ফল পাচ্ছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি লাইসেন্স বাতিল ও আমদানিকারককে জরিমানা, অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ফলে অসাধু আমদানিকারক-সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কাছে কঠোর বার্তা গেছে। এছাড়া ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের জন্য আমরা কিছু কাজ করেছি, আরও কিছু কাজ হাতে রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমদানিকৃত পণ্য বন্দরে প্রবেশের পর এর ব্যবস্থাপনা করার দায়িত্ব বন্দর কর্তৃপক্ষের হলেও এ নিয়ে বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। কোন পণ্য কোন শেডে রাখা হবে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম ছিল না, ফলে শেড ভিত্তিক একটি অসাধু সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বেনাপোল কাস্টম হাউস বিষয়টি তদারকি করে। একজন ডেপুটি কমিশনার অব কাস্টমসকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে কোন পণ্য কোন শেডে যাবে এ বিষয়ে কাস্টমস হাউস বেনাপোল থেকে একটি অফিস অর্ডার করা হয়। এখন থেকে বিষয়টি কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ করায় একটি শৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এছাড়ও পাসপোর্ট যাত্রীদের পণ্য বহনের বেনাপোল চেকপোস্টে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

আহরণ বেনাপোল রাজস্ব

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর