বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর: চট্টগ্রামে রাজপথে বিচারকরাও
১২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিচারকরা। তারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাঙা ভাস্কর্য দেখে বিচারকদের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হয়েছে।
শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর দামপাড়ায় পুনাকের সামনে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির ব্যানারে মানববন্ধনে দাঁড়ান বিভিন্ন পদমর্যাদার প্রায় ১০০ জন বিচারক। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বিচারকরা এম এম আলী রোডে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে যান।
এ সময় চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মো.ইসমাইল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে জাতি আজ বিক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদমুখর। বিচারকেরাও এই জাতির অংশ। তারা এদেশের নাগরিক। বিচারকদেরও দায়িত্ব আছে নাগরিক হিসেবে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার।’
তিনি বলেন, ‘আজ চট্টগ্রামের ১০০ বিচারক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সামিল হয়েছেন। তারা দেশ ও জাতিকে জানাতে চাচ্ছে যে, বিচারকরা শুধু বিচার নয়, প্রতিবাদও করতে জানে। জাতির জনকের প্রশ্নে বিচারকদের কাছে কোনো আপস নেই। সংবিধান জাতির জনকের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার জন্য বিচারকদের দায়িত্ব দিয়েছে।’
এদিকে একই সময়ে সিএমপিসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ মানববন্ধন, কেউ বিক্ষোভ মিছিল, কেউ মৌন মিছিল করেন। পরে সবাই শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে সমবেত হন।
‘জাতির পিতার সম্মান-রাখবো মোরা অম্লান’ এই স্লোগানে সাজানো মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর বীরত্বগাঁথা শোনানোর পাশাপাশি ভাস্কর্য বিরোধীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে একে একে বক্তৃতা করেন বিচারকসহ সবর্স্তরের কমকর্তারা।
বক্তব্য দেন জেলা ও দায়রা জজ ইসমাইল হোসেন, মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান, সিএমপি কমাশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদফতরের পরিচালক আবু সাঈদসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতনরা। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন প্রতিবাদ সভা সঞ্চালনা করেন।
জেলা ও দায়রা জজ ইসমাইল হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা বিচারকরাসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ এক হয়েছি, আমরা মৌলবাদী গোষ্ঠীকে বুঝিয়ে দিতে চাই যে, আমরা একত্রিত। আমরা সবাই মৌলবাদের বিরুদ্ধে, এই ম্যাসেজ দিতে চাই।’
মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান বলেন, ‘জাতির জনকের ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনা আমাদের নাড়া দিয়েছে। যে ঔদ্ধত্যা ও ধৃষ্ঠতা এই মৌলবাদী গ্রুপ দেখিয়েছে, তাতে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। কারণ বিচারক হলেও আমরা মানুষ। সেজন্য আমরা আজ প্রতিবাদে শামিল হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ছোটোবেলায় দেখেছি, গ্রামের বখাটে-খারাপ স্বভাবের ছেলেটাকেই মাথা ঠাণ্ডা করার কথা বলে মাদরাসায় দেওয়া হয়। মেধাবী ছেলেদের কেউ মাদরাসায় দেয় না। এভাবে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাটা ধ্বংস হয়ে গেছে। এখান থেকে আর ভালো কিছু আসছে না। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার যে ঘটনা এই প্রতিক্রিয়াশীল গ্রুপ ঘটালো, তাতে মনে হয়েছে, তারা ইসলামের ক্ষতিই সবচেয়ে বেশি করেছে।’
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘২০২১ সাল এবং ২০৪১ সালকে ঘিরে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার যে স্বপ্ন এবং বাংলাদেশের দূরন্ত অগ্রগতি ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য দেশি-বিদেশি চক্রান্তে একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে এই অপচেষ্টা রুখে দেবে। ইনশল্লাহ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।’
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত হেনেছে, যারা হুমকি দিচ্ছে তারা সবাই একাত্তরের ঘৃণ্য পরাজিত শক্তি। পঁচাত্তরের পরে তাদের ভূমিকা কী ছিল সেটা আমরা জানি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে যারা জাতির পিতার ভাস্কর্যে আঘাত হেনেছে, তাদের আমরা পুলিশসহ প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারীররা মিলে প্রতিহত করব।’