‘গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে সাফল্যগাঁথা প্রচার জনগণ বিশ্বাস করে না’
১২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:০৪
ঢাকা: গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে সাফল্যগাঁথা প্রচার জনগণ বিশ্বাস করে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (১২ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘বিশ্বের দেশে দেশে জনবিচ্ছিন্ন কর্তৃত্ববাদী ভোটারবিহীন সরকারের অবস্থা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মতো। এ ধরনের সরকার গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, জুয়া-জোচ্চুরি চালিয়ে রাষ্ট্রে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে জনগণকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করে। এজন্য তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রাইভেট বাহিনীতে পরিণত করে জনগণকে বন্দি করে রাখার নানা কৌশল অবলম্বন করে।’
‘আইন-প্রশাসন ও আদালতকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে জনগণের নাগরিক স্বাধীনতাকে হরণ করে। সুতরাং সরকার জবরদস্তিমূলকভাবে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে যতই নিজেদের সাফল্যগাঁথা প্রচার করুক—জনগণ এসব বিশ্বাস করে না। এই সরকারের পতন ঘটানোর জন্য জনগণ অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘দেশে দুটি ভয়াবহ দুর্যোগ চলছে। একটি হচ্ছে আওয়ামী দুর্যোগ, আরেকটা হচ্ছে করোনা দুর্যোগ। এই দুই মহাদুর্যোগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করছে এক অকল্পনীয় ক্রান্তিকাল। সেজন্য দেশে রাজনীতি নেই, গণতন্ত্র নেই, চিকিৎসা নেই, মানুষের মনে সুখ নেই, অর্থনীতি সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত।’
রিজভী বলেন, ‘দেশের জনগণ সরকারের যাঁতাকলে অবিরাম পিষ্ট হচ্ছে। গণতন্ত্রের নামে চলছে এক ব্যক্তির স্বৈরশাসন। বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ বিনা দোষে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। তিনি এখন বাসায় থাকলেও প্রকৃতপক্ষে মুক্ত নন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উনার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। সাজা স্থগিত হলে তো তার ওপর কোনো বিধিনিষেধ থাকার কথা না। পার্থক্যটা হচ্ছে, শুধু হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে তাকে তার বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ তার ওপর জুলুমের যেন শেষ হচ্ছে না। সরকার দেশনেত্রীকে ভয় পায়। কারণ, তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত থাকলে সরকারের লাগামহীন লুটপাট-অপকর্মে বিপত্তি ঘটবে। এজন্য তাকে এখন গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। গণতন্ত্রের মা-কে প্রতিহিংসা পরায়ণতার অনলে হত্যা করতে চায় সরকার। আমরা অবিলম্বে তার গৃহঅন্তরীণ অবস্থার অবসান চাই। সম্পূর্ণ মুক্তি চাই। দেশনেত্রীর মুক্তি না হলে গণতন্ত্রের মুক্তি ঘটবে না। দেশবাসীর মুক্তি মিলবে না।’
রিজভী বলেন, ‘দেশনেত্রী গুরুতর অসুস্থ। তার অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট দরকার। কারণ, এখানে ডাক্তার যারা আছেন, তারা বলছেন যে, তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। কিন্তু সরকার নানা শর্তের বেড়াজাল তৈরি করেছে যাতে তিনি তার ইচ্ছামতো চিকিৎসা নিতে না পারেন। স্বাধীনভাবে দেশে-বিদেশে যেখানে ইচ্ছা চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে সকল বাধা অপসারণ করতে হবে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রতিদিন একটি করে সংবাদ সম্মেলন করেন। আর এই সংবাদ সম্মেলনের একটাই বিষয়- বিএনপির বিরুদ্ধে আজগুবি, কল্পিতসব মিথ্যাচার ও কুৎসা উদগীরণ করা। মিথ্যা বলতে বলতে সত্য ভুলে গেছেন তিনি। জনগণ তার কথা শুনলে টিভির চ্যানেল বদলে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘তারা নিশিরাতে একটি পার্লামেন্ট বানিয়েছে। মনের মাধুরী মিশিয়ে পার্লামেন্টের বিরোধীদল বানিয়েছে। আদালত কিংবা নির্বাচন কমিশন সরকারের মাইক্রোফোন হিসেবে কাজ করছে। সব তাদের হওয়ার পরও প্রতিদিন কেন বিএনপির বিরুদ্ধে বলতে হচ্ছে? কেন স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে হচ্ছে? কেন ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলছে অব্যাহত ষড়যন্ত্র ?’
‘কারণ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জনে বিএনপির যে অবদান আছে, সেটি আওয়ামী লীগের নেই। সেই অনুশোচনায় কাদের সাহেবরা ফ্যাসিবাদ কায়েম করে বিএনপি ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে নিশিদিন অশ্রাব্য মিথ্যাচারে লিপ্ত রয়েছেন’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই- জনগণের কাছে শাক দিয়ে মাছ ঢেকে লাভ নেই। সরকার নিজের গর্ত নিজেই খুঁড়ছে। এই সরকার বেশিদিন টিকে থাকবে না। পৃথিবীতে কোন ফ্যাসিবাদ টিকে থাকেনি। এই নির্দয় ফ্যাসিবাদী সরকারও টিকবে না। জবরদস্তি করে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসে থাকার দিন শেষ হবে অচিরেই।’
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ জনগণ বিএনপি বিশ্বাস রিজভী সাফল্যগাঁথা প্রচার