Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেরোবিতে ২২ বস্তা কাগজ পোড়ানোতে সমালোচনার ঝড়, তদন্তের দাবি


১২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:৪৭

রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিমের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্যাম্পাস বন্ধের মধ্যেই ২২ বস্তা কাগজপত্র পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি অর্থ-হিসাব দফতরের পরিচালক ও গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বেও রয়েছেন।

সম্প্রতিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সড়ক সংলগ্ন স্থানে ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম একাই দাঁড়িয়ে কাগজপত্র পোড়ানোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন- এ সংক্রান্ত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে-বাইরের বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এঅবস্থায় কাগজপত্র পোড়ানোর ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এ কে এম ফরিদ-উল ইসলাম বলেন, ‘তিনি (ড. সেলিম) কাউকে না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ অবস্থাতেই ২২ বস্তা কাগজপত্র পুড়িয়েছেন। এভাবে কোনো কাগজ পুড়িয়ে ফেলতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি নিতে হয়। সেটি তিনি নিয়েছেন কি না জানি না তবে বিজ্ঞান অনুষদের কাগজপত্র হলে প্রক্টরিয়াল বডি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ওই অনুষদের সব বিভাগের প্রধানের সঙ্গে মিটিং করে সকলের সম্মতি ও উপস্থিতিতেই পোড়ানো উচিত ছিল।‘

এ সময় ড. সেলিম যে বর্তমানে অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালকের পদে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তিনি তা হতে পারেন না বলে অভিযোগ করেন এই শিক্ষক নেতা।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দফতরের প্রধান পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ব্যবসায় প্রশাসন ব্যাকগ্রাউন্ড হওয়ার যে বিধান আছে সেটি লঙ্ঘন করেছেন কারণ তিনি গণিত বিভাগের শিক্ষক।’

তবে পদে থাকার বিষয়ে ড. সেলিম বলেন, ‘আমি আইন অনুযায়ী অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালকের পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না এটি উপাচার্য ভালো বলতে পারবেন। যোগ্য না হলে তো উপাচার্য এই পদে আমাকে নিয়োগ দিতেন না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার দাবি করা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, ‘গত তিন বছরে ভর্তি পরীক্ষায় বেশ কয়েকজন প্রক্সি পরীক্ষার্থী ধরা পড়েছে। এ নিয়ে মামলা হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ এক নারী শিক্ষকের বোন জালিয়াতি করে একটি ইউনিটে প্রথম হয়েছেনসহ আরও অনেক অভিযোগ আছে। ফলে কেন তাড়াহুড়া করে কাগজ পোড়ানো হলো তা উপাচার্যসহ ড. সেলিম ভালো বলতে পারবেন।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও বাকি পাঁচটি অনুষদ আছে সেখানেও কাগজের স্তুপ পড়ে আছে সেগুলোও তো তাহলে পোড়ানো উচিৎ। বাকি পাঁচ অনুষদের কাগজপত্র না পুড়িয়ে হঠাৎ বিজ্ঞান অনুষদের কাগজ পোড়ানো হলো এটা আমরা সকলেই জানতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতি ছাড়ায় এতগুলা কাগজ তিনি পোড়াতে পারেন না। এজন্য কেন হটাৎ করেই এসব কাগজপত্র পোড়ানো হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের তা খোলাসা করা উচিৎ।’

২২ বস্তা কাগজ পোড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে ড. সেলিম বলেন, ‘প্রতিবছর বিজ্ঞান অনুষদে হাজার হাজার ভর্তিচ্ছু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। যে রুমে এসব রাখা হয়েছিল সেখানে জায়গা হচ্ছিল না। আর ভর্তিচ্ছুদের ওএমআর-অ্যাডমিটকার্ড শেষ তিন বছরের সংরক্ষণ করে বাকি পুরনো বছরের কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলার নিয়ম আছে, তাই অনুষদের অন্যান্য বিভাগের প্রধানদের অনুমতি নিয়েই কাগজ পোড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু ডিন, সেহেতু এখানে প্রক্টরিয়াল বডি, পুলিশ সদস্যের প্রয়োজন পড়ে না। ২২ বস্তা কাগজ ছিল দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় লেগেছে পোড়াতে। সেখানে অন্যান্য বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক এসেছিলেন পরে তারা চলে গেলেও আমি পুরোটা সময় ছিলাম।’

অর্থ ও হিসাব দফতর সংশ্লিষ্ট কোনো কাগজ সেখানে পোড়ানো হয়নি এবং তিনি সততার সঙ্গে কাজ করেন উল্লেখ করে বলেন, কোনো কোনো মহল ঈষান্বিত হয়ে এসব কথা রটানোর চেষ্টা করছেন

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

২২ বস্তা কাগজ বেরবি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর