চিকিৎসকদের প্রতি অবিচারই করেছি: স্বাস্থ্য সচিব
১৩ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:১৮
ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা যেভাবে সেবা দিয়েছেন, তাতে করে তাদের মূল্যায়নের বদলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবিচার করা হয়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান।
তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা আন্তর্জাতিক মানের। তারা অনেক সম্ভাবনা ও সক্ষমতায় সমৃদ্ধ। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের সুনাম-সুখ্যাতি রয়েছে। তারা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে গোটা জাতিকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গত ৯ মাস ধরে অব্যাহতভাবে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাওয়ার জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমার মনে হয়, আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের প্রতি অবিচারই করেছি।
রোববার (১৩ ডিসেম্বর) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় গাইডলাইনের মোড়ক উন্মোচন এবং হাসপাতালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক অবহিতকরণ সভায় এ কথা বলেন তিনি।
দেশের চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন উল্লেখ করে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, চিকিৎসকরা প্রায় নিয়মিত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ডাকে সাড়া দিয়ে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। আমাদের মন্ত্রী, সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব যখন অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরকে ডেকেছেন, বাসায় চলে গেছেন। সবাই তো বাঁচতে চান। কিন্তু চিকিৎসকরা অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। আমরা তাদের অভিবাদন জানাচ্ছি। তাদের ত্যাগের বিষয়গুলো আমাকে ভাবায়।
দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আবদুল মান্নান বলেন, মার্চ মাস থেকে দীর্ঘ ৯ মাসে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত যেসব ডাক্তার-নার্স ওয়ার্ড বয় চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। একই সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা আরও বড় পরিসরে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখেন। আমরা তাদের যে জায়গায় রেখেছি, আমার মনে হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। তাদের বেলায় আমাদের উচিত সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা।
সচিব আরও বলেন, দেশে সাত হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা গেছেন। ভারতে ১ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। গতকাল বাংলাদেশে সবচেয়ে কম সংক্রমণ হয়েছে— এটা রেকর্ড। যারা গাইডলাইন তৈরি করেছেন, মৃত্যু ও সংক্রমণ কম হওয়ার পেছনে তাদের অবদান রয়েছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় গাইডলাইন বিষয়ে সচিব বলেন, পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিদিন তথ্য হালানাগাদ করে আমরা এই গাইডলাইন তৈরি করেছি। প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করছি, পরিবর্ধন করছি, সংযোজন-বিয়োজন করছি। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ পৃথিবীব্যাপী সবাই প্রায় প্রতিদিনই করোনার বিষয়ে নতুন তথ্য দিচ্ছে। অনলাইন থেকে তথ্য নিয়ে আমরাও আপডেট হচ্ছি।
ন্যাশনাল গাইডলাইন অব্যাহতভাবে হালনাগাদ করার জন্য জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি ধন্যবাদ জানান স্বাস্থ্য সচিব। তিনি বলেন, করোনার সময়ে টেলিমেডিসিনে আড়াই কোটি মানুষের সেবা দেওয়া হয়েছে, ৪০ লাখ কল হয়েছে। টেলিমেডিসিনেও এই গাইডলাইন অনুসরণ করা উচিত।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন কাজ উপস্থাপন করেন রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গাইডলাইন নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ডা. অনিন্দ্য রহমান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলানসহ অন্যরা।
আবদুল মান্নান কোভিড-১৯ জাতীয় গাইডলাইন স্বাস্থ্য সচিব স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক