শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আসছে পৌষ
১৩ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৪৮
ঢাকা: পৌষ আসতে আর দুদিন বাকি। গেল ১০ বছর ধরে পৌষের আগমন রাজধানী ঢাকায় বড় কোনো পরিবর্তনের কারণ হতে পারেনি। বরং পৌষকে হেমন্তেরই বিস্তার ভেবেছে মানুষজন। তবে এবারের হেমন্তে যে পরিমাণে শীত পড়েছে তাতে মনে হচ্ছে এই পৌষেই পাল্টে যাবে শীতের হিসেব। আবহাওয়া অফিসও বলছে একই কথা। তাদের দাবি, পৌষের দ্বিতীয় দিনেই মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা।
আবহাওয়ার মেঘ মানচিত্রে ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ থেকে ঢাকার আকাশে জমাট কুয়াশা দেখা গেছে। এই সময়ে হিমালয় থেকে আসা উত্তরের হাওয়াও বয়ে যাবে দেশের আকাশে। তাই আবহাওয়া অফিস বলছে, মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহটি ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ শুরু হবে দেশ জুড়ে। ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে এর প্রভাব।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে আগামী ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে এর প্রভাব থাকবে সপ্তাহ জুড়ে। এই সময়ে সারাদেশেই থাকবে ঘন কুয়াশার আধিক্য। এর সাথে সামান্য পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘তারিখ হিসেবে পৌষ না এলেও পৌষের আমেজ কিন্তু এখনই পাওয়া যাচ্ছে। বরং শীতের তীব্রতার কারণে এই সময়কে মাঘের মতোই মনে হচ্ছে। এবছর শীত আসছে শৈত্যপ্রবাহ নিয়েই। কুয়াশার প্রাবল্য থাকবে, আছে বৃষ্টিরও সম্ভাবনা। তবে শৈত্যপ্রবাহটি অতটা তীব্র হবে না।
এদিকে ঢাকার অবস্থা যেমন তেমন দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে দুপুরেও সূর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে সাধারণ মানুষেরাও নিদারুণ কষ্ট রয়েছে।
চলতি কুয়াশা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি না হলেও রোববার (১৩ নভেম্বর) সার্বিক তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। তবে সামনের সপ্তাহে সেটা কমতে শুরু করবে। বাংলাদেশে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শীত আসার কথা থাকলেও এ বছর একটু আগেই এসেছে। তবে সামানের সপ্তাহের শুরুতেই ঠাণ্ডা জেঁকে বসবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
বাংলাদেশে কনকনে ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করে উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের জন্য। সাইবেরিয়া অঞ্চলের ঠাণ্ডা ও শুষ্ক হাওয়ার কিছু অংশ হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশে। উপমহাদেশীয় এই উচ্চচাপ বলয় ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে বিরাজ করতে শুরু করেছে। যার প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় ব্যাপক শীতের ঝাপটা লেগেছে। কুয়াশা কেটে গেলে এই ঠাণ্ডা আরও বাড়বে।
রোববার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশিমক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। আবাহওয়া অফিস বলছে, প্রথম শৈত্যপ্রবাহে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ নিচে নামতে পারে। আর পুরো মৌসুমে তিনটি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তিনটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায় দেশজুড়ে। শৈত্যপ্রবাহগুলোর স্থায়ীত্বকাল ছিল ৫ থেকে ৬ জানুয়ারি, ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি এবং ২৩ থেকে ৩০ জানুয়ারি। ২০১৫ সালেও তিনটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়। এর ব্যাপ্তিকাল ছিল ৬ থেকে ১৪ জানুয়ারি, ১৮ থেকে ২৩ জানুয়ারি এবং ২৫ থেকে ২৭ জানুয়ারি। ২০১৭ তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায় দুটি। ১৮ সালেও একই পরিস্থিতি ছিল। তবে গেল বছর শীত পড়েছিল ভালোই। শৈত্যপ্রবাহও বয়ে যায় তিনটি।
উল্লেখ্য, শীতকালে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে চলে যায়। ফলে দেশে কমে আসে দিনের তাপমাত্রা, কমতে থাকে দিনের দৈর্ঘ্যও। সবচেয়ে ছোট দিন ২২ ডিসেম্বরের পর থেকে সূর্য ধীরে ধীরে উত্তর গোলার্ধের দিকে যেতে থাকে। ফেব্রুয়ারির প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। ঢাকায় এই সময়ে শীত পুরোপুরিভাবেই মিলিয়ে যায়। তবে গ্রামে ও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে মার্চেও পাওয়া যায় শীতের হাওয়া।