‘মনে হয় পদ্মাসেতু তাদের পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ে তৈরি’
১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:২০
ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘মনে হয় পদ্মাসেতু তাদের (আওয়ামী লীগ) পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ে তৈরি করেছে। এটা যেন তাদের পৈতৃক সম্পদ। এটা মানুষের পকেট কেটে করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি মানুষ এখানে ট্যাক্স দিচ্ছে। যেখানে এক টাকা ট্যাক্স দিতো, সেখানে ১০ টাকা ট্যাক্স দিচ্ছে।’
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে গুলশানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা সব সময় উন্নয়নের পক্ষে, আমাদের দলই হচ্ছে উন্নয়নের পক্ষে, সৃজনশীলতার পক্ষে। আমরা কখনোই কোনো নেগেটিভ রাজনীতি করি না। আমরা পজেটিভ পলিটিক্স করি। আমরা সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে চাই। আমরা সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে চাই। সেটা বলতে গেলেই তাদের গায়ে জ্বালা ধরে।’
তিনি বলেন, ‘এদেশের উন্নয়নের শুরুটা হয়েছে বিএনপিকে দিয়ে। ১৯৭৫ সালে পট পরিবর্তনের পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন দেশের দায়িত্ব নিলেন প্রথম যে কাজগুলো শুরু করেছিলেন সেটা হচ্ছে অর্থনৈতিক সংস্কার এবং উন্নয়ন। উন্নয়ন বলতে শুধুমাত্র গুটিকতক লোকের উন্নয়ন নয়, উন্নয়ন বলতে সাধারণ মানুষের কৃষক, শ্রমিক মেহনতি মানুষের উন্নয়ন। সেটার যে ভিত্তি তৈরি হয়েছে তার ওপরই আজকে বাংলাদেশ দাঁড়াচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে বিদেশ থেকে যে রেমিটেন্স আসছে, এই রেমিটেন্স শুরুর প্রক্রিয়াটা জিয়াউর রহমানের সময় থেকে। আজকে যে গামেন্টেসের ওপর ভিত্তি করে অর্থনীতি দাঁড়িয়েছে, সেটাও পুরোপুরি জিয়াউর রহমানের সময়ে। কৃষিতে যে বিপ্লব সেটাও জিয়াউর রহমানের সময়ে। তাই আজকে কোনো একটা ব্রিজ তৈরি হওয়া, কোনো একটা রাস্তা তৈরি হওয়া-এটাকে আমরা মনে করি যে, দিস ইজ নট উন্নয়ন। উন্নয়ন হচ্ছে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার কতটুকু পরিবর্তন হলো— সেটা।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ ইস্যুতে বিএনপির নিরবতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ দুইটো। একটি হচ্ছে করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষা করা, ভ্যাকসিন সরবারহ করা এবং যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের চিকিতসার ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে- গণতন্ত্রকে মুক্ত করা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আসা। দিস ইজ দ্য চ্যালেঞ্জ অব আস।’
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, নিম্ন আদালতের বিচারকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার মানববন্ধনে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশ মূলত একটি একদলীয় শাসনের দেশে পরিণত হয়ে গেছে। ১৯৭২ সালের পর একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে বাকশাল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে এভাবে তারা সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে দল বেধে লাইন ধরে ধরে বাকশালে যোগদান করার জন্য বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা করেছিল। তারই একটা চিত্র দেখতে পাচ্ছি। উদ্বেগজনক যে, বিচারকরাও এই কাজগুলো করছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকারের লক্ষ্য এখন একটাই যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে হবে। সেজন্য রাষ্ট্রের সব কিছু তাদের ব্যবহার করতে হবে। এই যে গণতন্ত্রের কথা-এটা হলো তাদের লিফ সার্ভিস। তাদের সমস্ত দুর্বৃত্তায়ন, মানুষের অধিকারহরণ সমস্ত কিছুকে জায়েজ করার জন্য গণতন্ত্রের লেভেলটা তাদের রাখতে হয়। বলা হচ্ছে গণতন্ত্রের কথা, করা হচ্ছে পুরো উল্টোটা।’
ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার আপত্তিকে উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একাংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া সামগ্রিক বিচারেই বর্তমান গণবিচ্ছিন্ন ও জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন সরকারের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতারই সুস্পষ্ট উদাহরণ। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কূটনৈতিক তৎপরতার মুখ থুবড়ে পড়ায় জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে ঘোরাতে এবং দুর্নীতির এক নতুন মচ্ছব সৃষ্টির হীন প্রয়াস থেকেই ভাসানচরের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।’
‘আমরা মনে করি সীমাহীন কূটটনৈতিক ব্যর্থতা আড়াল করতে সরকার এই কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে কেবলমাত্র স্বল্প সময়ের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করছেন। ভাসানচরে এ ধরনের স্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ মূল সমস্যা সমাধানে নূতন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ভাসানচরে যেসব স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে, তার ফলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষসহ তাদের সমর্থক গোষ্ঠীসমূহের মাঝে এমন ধারণার সৃষ্টি হতে পারে যে, টেকসই আবাসনের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে গ্রহণ করে নিচ্ছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহলের আপত্তি সত্বেও ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থী স্থানান্তর কার্যক্রম মূল সংকটকে আরও ঘনীভূত করতে পারে। অপরদিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত প্রোপাগান্ডা সেল ও মিয়ানমার সরকার কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে দাবি করতে পারে যে, বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জাতিগতভাবে বাঙালি বলেই বাংলাদেশে এদের বসবাসের স্থায়ী ব্যবস্থা করে আত্তীকরণ সম্ভব হয়েছে। এতে মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো ও সেনাবাহিনী জাতিগত নির্মূল অভিযান সম্পন্ন করতে আরও উৎসাহী হবে এবং অবশিষ্ট যে লাখ পাঁচেক রোহিঙ্গা এখনো আরাকানে রয়েছে, তাদেরও বিতাড়নের প্রক্রিয়া নূতন করে জোরদার হতে পারে।